Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

এইচএসসিতে দুবার ফেল করে গার্মেন্টসে চাকরি করা সাদিকুর এখন বিসিএস ক্যাডার

image

দোকানের সেলসম্যান ও গার্মেন্টকর্মী থেকে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাখুয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের সাদিকুর রহমান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন নিশ্চিত ফেল ধরে নিয়েই ব্যাগ গুছিয়ে বাবাকে ফাঁকি দিয়ে গার্মেন্টসে পাড়ি জমায় সাদিকুর রহমান। ফলাফল প্রকাশিত হলে ২ বিষয়ে ফেল করে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। চোখে যেন নেমে আসে অমানিশার ছায়া। স্কুলজীবন শেষ করে গ্রামে থেকে এইচএসসিতে ভর্তি হয় ত্রিশাল নজরুল ডিগ্রি কলেজে।

বাবা শওকত আলী মাস্টারের তিন মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে সবার ছোট সাদিকুর। বড় ভাই জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলেকে নিয়েই, সেই ছেলে সাদিকুর বাবার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয় এইচএসসিতে ফেল করে। ২০১১ সালে সাদিকুর প্রতিজ্ঞা করে- যে করেই হোক আমাকে এবার পাশ করতেই হবে। ২০১১ সালে জিপিএ-২.৯০ নিয়ে পাশ করলেও হতাশা পিছু ছাড়েনি। এই রেজাল্ট নিয়ে কোথায় ভর্তি হবে।

আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিলেও প্রথম তালিকায় ছিল না তার নাম, ২য় তালিকায় বাংলা বিভাগে হয় তার চান্স। সেই দিন খুশিতে কান্না করেছিলেন তিনি। অনার্স ৩য় বর্ষে নিজের হাত খরচ চালানো ও বাবার ওপর চাপ কমানোর জন্য প্রথমে একটি দোকানের সেলসম্যান পরে গার্মেন্টকর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কয়েক মাস যাবার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩য় বর্ষের অনার্স পরীক্ষা দিলেও অসুস্থতার কারণে ৩য় বর্ষের ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি।

পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে ভাইভা দিতে হয়। এর মধ্যে বিয়েও করেন তিনি। ২০১৫ সালে অনার্সে সিজিপিএ পায় ২.৯৪। ২০২৬ সালে তার ঘরে আসে ফুটফুটে ছেলেসন্তান। ২০১৭ সালে পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে তার বাবা তাকে নিজে উপার্জন করে সংসার চালানোর আদেশ দিয়ে সব ধরনের খরচ বন্ধ করে দেন।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাদিকুর পড়ে যান বিপাকে। চাকরি নেন চকরামপুর বাজার আমজাদ আলী মডেল স্কুলে ৩ হাজার টাকা বেতনের। তা দিয়ে বাসা ভাড়া, বাচ্চা ও নিজেদের সব খরচ চালাতে হতো। এটা দিয়ে কিছু না হওয়ায় জীবন যুদ্ধ শুরু হয় সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টিউশনি। ১১-৪টা পর্যন্ত স্কুল। সাড়ে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত হোম টিউশনি করান। ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নিজের পড়াশোনায় সময় বের করেন। তাকে সাপোর্ট দিয়েছেন তার সহধর্মিণী।

২০১৯ সালে প্রথম দেখেন আলোর মুখ। চাকরি হয় প্রাইমারি স্কুলে। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। এখন বাবা-মাসহ এলাকার গর্ব সাদিকুর রহমান।

৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার সাদিকুর রহমান বলেন, আমার বড় বোন শারফুন্নাহার বিউটি আপা, স্কুলশিক্ষক হযরত আলী স্যার, আমার স্ত্রী আফসানা মিমি সাপোর্ট করার কারণেই এ অর্জন। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আমার বাবা, মা, স্ত্রী দুটি সন্তান নিয়ে দেশের শিক্ষা খাতে অবদান রাখতে চাই।

সাদিকুরের বাবা শওকত আলী বলেন, আমার দুটি ছেলে। বড় ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী, ছোট ছেলে সাদিকুর। তাকে নিয়েই আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। মনে করেছিলাম সে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না। বাবার সঙ্গে অভিমান করে সে যে সাফল্য অর্জন করেছে আমি অনেক গর্ববোধ করি। এলাকার মানুষও আমার ছেলের এ সাফল্যে অনেক আনন্দিত।

সাদিকুরের স্ত্রী আফসানা মিমি বলেন, আমার স্বামী অনেক পরিশ্রম করেছেন। রাত-দিন পরিশ্রম করে সংসার চালানোসহ পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছেন। বাব-মায়ের দোয়ায় সে সাফল্য অর্জন করেছে। এ অর্জন শুধু আমাদের নয় সবার। আমি চাই সামনের দিনগুলো সে দেশের হয়ে কাজ করুক।
Collected From Jugantor



Related Posts

image

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৪ উপায়

24/09/2024

Inspiration

আপনি কি ইদানীং কাজ করতে গিয়ে হাঁপিযে ওঠেন? সব সময় ক্লান্ত লাগে আর অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন? এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়তে শুরু করেছে আপনার কাজের ফলাফলেও? বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে চাপ কোথায় নেই? তাই কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভ

image

What to Consider When Setting Career Goals

24/08/2024

Inspiration

While the everyday tasks at your job obviously need to get done, it’s also just as important to have long-term career goals—whether it’s because you are looking to eventually move up the corporate la

image

3 keys to unlock the power of employees

24/08/2024

Inspiration

In your workplace, employee culture is your only sustainable competitive advantage. To win today, you need people who can react quickly and make decisions autonomously. Your culture — the shared values and shared pr