Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

আসাদের স্বপ্ন পূরণ

image

মাহবুবুল আলম আসাদ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে স্নাতক ও উদ্যানতত্ত্বে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। প্রথম বিসিএস হিসেবে ৪১তম বিসিএসে নন ক্যাডারে (শিক্ষা) সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সদ্য ঘোষিত ৪৩তম বিসিএসের কৃষি ক্যাডারে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, যেখানে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। 
বিসিএস যাত্রা শুরু যেভাবে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার এক তীব্র বাসনা কাজ করা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই বেশ সিরিয়াস ছিলাম, যার ফলে স্নাতক শেষে ৩.৮৫ সিজিপিএ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্যে স্নাতকোত্তরে ভালোভাবে গবেষণায় মনোনিবেশ করি এবং ৩.৯৮ সিজিপিএ অর্জন করি। তবে স্নাতক শেষ করার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র ভাইকে দেখে বিসিএসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। দিনে গবেষণার কাজ এবং সন্ধ্যায় টিউশনি শেষ করে রাত ২-৩টা পর্যন্ত বিসিএস পড়তে থাকি। শুরুতে বিসিএস যাত্রা আমার জন্য কঠিন ছিল তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি।
যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি
বড় ভাইদের পরামর্শের পাশাপাশি আমি গাইড বই ও মূল বই পড়েছি। এছাড়াও প্রতিদিন বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। তবে গণিত ও ইংরেজি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার তেমন পারদর্শিতা ছিল না। তাই যেদিন থেকে বিসিএস জার্নি শুরু সেদিন থেকে প্রতিদিন রুটিন করে এক ঘণ্টা ভোকাবুলারি, দুই ঘণ্টা ইংলিশ গ্রামার ও প্রায় তিন ঘণ্টার মতো গণিত করতাম। এর পাশাপাশি অন্য একটি করে বিষয় পড়তাম, সেটা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে একবার যে কোনোভাবে শেষ করার চেষ্টা করতাম। পরবর্তীতে আমি শুধু বারবার রিপিটেশন করতাম।
অনুপ্রেরণার উৎস ছিল যারা
আমার অনুপ্রেরণার উৎস আমার পরমধৈর্যশীল বাবা ও মমতাময়ী মা। আমার বাবা সব সময় বলতেন, ‘ধরো আমি যদি কখনো পৃথিবীতে নাও থাকি তবুও তুমি তোমাকে এমনভাবে গড় যেন আমি কবর থেকে শুনতে পাই যে, আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।’ এছাড়াও অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে আর একজনের কথা না বললেই নয়, নুসরাত জাহান শিম্মি। ৪১ বিসিএস প্রিলি যখন শুরু হয় তার ঠিক এক মাস আগে মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়।

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াই ছিল আমার ধ্যান-জ্ঞান তাই আমি মাস্টার্সকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই। সময় খুব স্বল্প আর বিশাল সিলেবাসের কারণে আমার দ্বারা বিসিএস এবার হবে না ভেবেছিলাম। ঠিক এ রকম সময়ে শিম্মি আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল, সাহস দিয়েছিল। সেইদিন আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্! অবশেষে ৪১তম বিসিএসে (প্রথম বিসিএস) উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডার থেকে দশম গ্রেডের একটা চাকরি পাই। এরপর সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানী, বাবা-মা-শুভাকাক্সক্ষীদের দোয়ায় টানা তিন বিসিএস এ প্রিলি-রিটেন দেই। এর মধ্যে দুই বিসিএসেই সফল হই। এখন ৪৪তম বিসিএসের ফলাফলের প্রত্যাশায় আছি।
ছিল প্রতিকূলতা, এগিয়ে গিয়েছি
আমরা স্বভাবতই সাফল্যের গল্প শুনতে অভ্যস্ত কিন্তু ব্যর্থদের আহাজারি শুনতে বিরক্ত। আমি যতদূর দেখেছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবার বাবা-মা’ই বিশ্বাস করেন ও মনেপ্রাণে চান, ছেলে অনার্স পাশ করলেই তার চাকরি হবে, তখন আর দুচিন্তা থাকবে না। কিন্তু এদেশে যে চাকরি নামক সোনার হরিণ পাওয়ার জন্য কি পরিমাণ অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় সেটা শুধু বেকাররাই জানে।

তবে সমালোচকদের সমালোচনা ও আর্থিক সংকট আমার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রতিকূলতা মনে হয়েছে। প্রতি মাসে অন্তত দুইবার সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়া, সেই সঙ্গে চার-পাঁচটা আবেদনের টাকা জোগাড় করা ছিল বেশ দুরূহ। অন্যদিকে অনার্স ও এবং মাস্টার্সে ফলাফল মোটামুটি ভালো হওয়ায় শিক্ষকতায় ঝোঁকের জন্য ক্যাম্পাসও ছাড়তে পারছিলাম না। বিসিএস এবং শিক্ষকতা দুটি স্বপ্নই একসঙ্গে টেনে নিয়ে যাওয়া আমার বিসিএস যাত্রাকে কঠিন করেছিল।
প্রস্তুতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে সাহায্য করেছে- 
বিভিন্ন কাজে সারাদিন যখন বাইরে থাকতাম সেই সময় মোবাইলের মাধ্যমেই পড়তাম, বিসিএসের বিভিন্ন ফেসবুক ও হোয়াইটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়মিত চোখ রাখতাম। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন ও ইউটিউব ব্যবহার করে কনফিউশন আছে এমন বিষয় বুঝে নিতাম। পাশাপাশি অনলাইনে মক ভাইভা দিয়েছি। এছাড়াও ভাইভার প্রস্তুতির জন্য আমার মেসেঞ্জার গ্রুপ ছিল, সেখানে আমার বড় ভাই ও বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি।
যারা সফল হচ্ছেন না তাদের জন্য পরামর্শ 
দীর্ঘ এই যাত্রায় সফল হতে চাইলে সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানীর পাশাপাশি ধৈর্য ও পড়াশোনায় নিয়মিত হতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিসিএস কিংবা চাকরিতে ব্যর্থতার মূল কারন পড়াশোনায় ধারারাবিকতার অভাব। এছাড়াও আমরা পড়ার থেকে অযথা ভাবনা-সমালোচনা-ফেসবুক এসবে বেশি সময় নষ্ট করি। চাকরিপ্রার্থীরা এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে সফলতা দ্রুত আসবে বলে আমার বিশ্বাস। যারা সফল হচ্ছেন না তারা বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী মূল বই এবং গাইড বই অনুসরণ করতে পারেন পাশাপাশি বারবার পড়া ও পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে, এতে করে ভুলের সংখ্যা কমতে থাকবে।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
বিসিএস একটি দীর্ঘ যাত্রা, রয়েছে অসংখ্য যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিযোগী। সেক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিযোগীকে প্রবল ধৈর্য-শক্তি সম্পন্ন ও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। জুলিয়াস সিজারের মতো এলাম, দেখলাম, জয় করলাম ব্যাপারটা বিসিএসের মতো প্লাটফর্মে সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। এখানে কেউ প্রথম বিসিএসেই সর্বোচ্চটা পেয়ে যান আবার কেউ বা সর্বশেষ বিসিএসে পেয়ে থাকেন।


প্রিলি-২০০, রিটেন-১১০০, ভাইবা-২০০-সহ মোট ১৫০০ নম্বরের বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে আপনি নিশ্চিতভাবে সফল নাও হতে পারেন। এক্ষেত্রে নতুনদের জন্য পরামর্শ থাকবে, প্রথমে বিসিএস সিলেবাসটা পডুন, বুঝুন তারপর একটি সুনির্দিষ্ট গাইড বই থেকে বিগত (৩৫তম-৪৫তম) বিসিএসের প্রশ্নগুলো ভালো করে দেখুন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নের যে পরিবর্তন হচ্ছে তা খেয়াল করুন। তারপর নিজের মতো একটি রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী প্রতিদিন পড়াশোনা করুন। আপনিও একদিন আপনার স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে তিনটি শব্দ মনে রাখবেন- প্যাশেন্স, পাঙ্কচুয়ালিটি, রিপিটেশন।
আবেদনে ক্যাডার নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ
আপনি কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, আপনি কি চান সেটা প্রাধান্য দেবেন। আপনি কি বিদেশে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান? নাকি আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারের নীতিগুলো বাস্তবায়নে অংশ নিতে চান? নাকি ‘ল’ এক্সিকিউটর হতে চান? 
আপনি কি আপনার পঠিতব্য বিষয়েই থাকতে চান?
এই বিষয়গুলো খেয়াল করে ক্যাডার চয়েজ সাজালে আমার মনে হয় পরবর্তীতে ক্যাডার চয়েজ নিয়ে কোনো আফসোস থাকবে না। সবশেষ বলতে চাই, বিসিএস ক্যাডার অফিসার হচ্ছে একটি সম্মানীয় পেশা। এছাড়াও বিসিএসকে বেস্ট থ্রিলার সিরিজ বলা যায়, যেখানে প্রিলি-রিটেন-ভাইবা সবক্ষেত্রেই এত এত থ্রিল যেটা কিনা একজন ক্যান্ডিডেটই উপলব্ধি করতে পারেন। সর্বোপরি, এই থ্রিলিং সিরিজে আপনি কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার সামর্থ্য-সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।


Collected From Daily Janakantha



Related Posts

image

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৪ উপায়

24/09/2024

Inspiration

আপনি কি ইদানীং কাজ করতে গিয়ে হাঁপিযে ওঠেন? সব সময় ক্লান্ত লাগে আর অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন? এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়তে শুরু করেছে আপনার কাজের ফলাফলেও? বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে চাপ কোথায় নেই? তাই কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভ

image

What to Consider When Setting Career Goals

24/08/2024

Inspiration

While the everyday tasks at your job obviously need to get done, it’s also just as important to have long-term career goals—whether it’s because you are looking to eventually move up the corporate la

image

3 keys to unlock the power of employees

24/08/2024

Inspiration

In your workplace, employee culture is your only sustainable competitive advantage. To win today, you need people who can react quickly and make decisions autonomously. Your culture — the shared values and shared pr