৪১তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এ মৎস্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী নীলুফার ইয়াসমিন রজনী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের (২০১৪-১৫) শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। নীলুফার ইয়াসমিন রজনী যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার দীঘির পাড় গ্রামের মো. আবুল হোসেন ও মোছাঃ পান্না আরা দম্পতির কন্যা।
তিনি বেনাপোলের দ্য সান রাইজ প্রিক্যাডেট স্কুল থেকে এসএসসি এবং যশোরের আকিজ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। অনার্স শেষ করার আগ পর্যন্ত তার বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বা ধারণা দুটোই ছিল খুবই সীমিত। মাস্টার্স চলাকালীন বিসিএসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং সে অনুযায়ী পড়ালেখা শুরু করেন। তখন করোনার কারণে বাধার সম্মুখীন হন। ২০১৯ সাল থেকেই মূলত তার বিসিএস যাত্রা শুরু। নতুনদের জন্য তিনি তার বিসিএস জয়, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন।
রজনী জানান, ‘আমার মনে হয়, বিসিএসের সবচেয়ে কঠিন ধাপটা প্রিলি, যেখানে প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। ৪১তম বিসিএসে সঠিক পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা করার ফলে পরবর্তী বিসিএস প্রিলিগুলো আমার জন্য অনেক সহজ হয়েছে। ৪১তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিতে যেখানে আমার ৫ থেকে ৭ মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল সেখানে পরবর্তী ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে সেই সময়টা এক মাসেরও কম ছিল। সত্যি বলতে আমি প্রিলির আগে প্রচুর পরিমাণে মডেল টেস্ট দিয়েছি, যা আমার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।’
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির মুহূর্তটায় রজনী কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। মাস্টার্স পরীক্ষা, থিসিসের কাজ, ৪৩তম বিসিএসের প্রিলি- সব মিলিয়ে একটা সংকটময় সময় কাটিয়েছেন। ধরেই নিয়েছিলেন এই লিখিত পরীক্ষা পাস করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। শেষ মুহূর্তে এসে নতুন করে স্বপ্ন দেখালেন তার বাবা-মা ও স্বামী। রজনী বলেন, ‘আমার স্বামী একটা কথা সবসময় বলেছে, আমার বিশ্বাস এই এক মাসেই তুমি পারবে, তুমি শুধু পড়ো- আর কিছু ভাবার দরকার নেই।
আম্মু ভরসা দিলেন- আল্লাহ যদি চায় তাহলে এই একমাস পড়েই তুমি ক্যাডার সার্ভিসে কোয়ালিফাই করবে ইনশা আল্লাহ। আম্মুর এই কথাটি এখনো কানে বাজে। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি এই ক্যাডার হওয়ার যাত্রায়। ভাইভা দিয়ে মনে হয়েছিল কি ক্যাডার পাব জানি না, তবে ফেল করব না।’
রজনীর বাবার ধারণা ছিল বিসিএসের মতো এত সম্মানজনক চাকরি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক প্রকার আকাশ-কুসুম কল্পনা। তখন থেকেই তিনি মনে মনে জিদ করেছিলেন একদিন অনেক বড় কিছু হয়ে বাবার সে ধারণা বদলে দিবেন। রজনী জানান, ‘আমার প্রতি আমার মা, নানা, খালামণি, মামা, মায়ের মতো বড়মার অগাধ বিশ্বাস আর ভরসাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
একই সঙ্গে বাকৃবিতে মাস্টার্স করার সময়ে ক্যাম্পাসের পড়াশোনার পরিবেশ আমাকে বিসিএসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। জীবনে যখন যে অবস্থানে থেকেছি, হোক সেটা প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক- নিজের সেরাটা দেখাই সবসময় নিজের গোল হিসেবে নিয়েছি।’
রজনী তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আগামীতে দেশকে ভালো কিছু দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে রজনীর পরামর্শ, ‘জীবনের জন্য চাকরি, চাকরির জন্য জীবন নয়। দিন শেষে বিসিএস একটি চাকরি বৈ কিছু নয়। তাই বিসিএসের যাত্রায় একবার ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। কবির ভাষায় আমাকেও বলতে হয়- একবার না পারিলে দেখ শতবার। বিসিএসের যাত্রায় সফলরা যতটা না মেধাবী, তারচেয়ে বেশি পরিশ্রমী। পরিশ্রম ও ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। খেলা শেষে অধ্যবসায়ীরাই বিজয়ের হাসি হাসে।
আমার ৪১, ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএস এবং অন্যান্য কিছু চাকরির লিখিত ও ভাইভা অভিজ্ঞতা থেকে বলব- পড়তে হবে, নিজেকে যাচাইয়ের জন্য বারবার মডেল টেস্ট দিতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হবে। সৃষ্টিকর্তার রহমত আর ভাগ্য বদলে দিতে পারে আপনার পরবর্তী দিনগুলো। আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা-মা ও শুভাকাক্সক্ষীদের দোয়া আর আমার পরিশ্রমে আজ হয়ত আমি এই অবস্থানে। ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছুর প্রত্যাশায় আমি সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী। সকলের জন্য শুভকামনা।
চাকরি বাজার ডেস্ক
Collected From Daily Janakantha