পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্নগুলো ডালপালা ছড়াতে থাকে অনার্সে পড়ার সময়। সরকারি চাকরি পেতে হলে অবশ্যই আপনার শারীরিক, মানসিক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
চাকরি পাওয়ার জন্য কিভাবে পড়বেন:
সরকারি চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্যরূপে গড়ে তুলতে পড়াশোর কোনো বিকল্প নেই। সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আপনাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
গত সপ্তাহে বাংলা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবার বাকি বিষয়গুলো প্রস্তুতির কিছু পরামর্শ দেয়া হলো-
ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি:
বাংলাদেশী প্রত্যেক ছাত্রেরই কম-বেশি ইংরেজি ভীতি আছে। খুবই সাধারণ কিছু বিষয় যথাযথভাবে পড়লে ইংরেজি ভীতি থাকবে না। বিশেষ করে Noun, Verb, Adjective, Adverb, Preposition, Articles, Right form of verbs, Idioms & Phrases, vocabulary এই টপিকগুলো পড়তে হবে।
মূলত এগুলো পড়লেই প্রায় সব উত্তর দিতে সহজ হবে। ইংরেজি প্রশ্ন এনালাইসিস করলে দেখা যায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে। ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে কবিতা, গল্প গ্রন্থ, নাটক, আদিযুগ, মধ্যযুগ, নোবেল বিজয়ী কবি সাহিত্যিকদের নাম মনে রাখতে হবে। এছাড়াও Sentence, Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Gender, Synoûm, Antoûm, Participle, we‡kl ai‡bi wKQy Translation ইত্যাদি বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
গণিত বিষয়ের প্রস্তুতি:
প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে গণিতে ভালো করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী চাইলে গণিতে পুরো মার্কস পেতে পারেন। বিগত প্রশ্নগুলোতে দেখা যায় নির্দিষ্ট কিছু অধ্যায়ের গণিত ঘুরে ফিরে আসে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির গণিত বই সংগ্রহে রাখবেন এবং নিয়মিত অনুশীলন করবেন। গণিতের ক্ষেত্রে পাটিগণিত থেকে লাভ-ক্ষতি, সুদ-কষা, অনুপাত-সমানুপাত, ঐকিক নিয়ম, সংখ্যার ধারণা, লসাগু, গসাগু, ভগ্নাংশ, গড়, সময় ও গতিবেগ, দূরত্ব, ধারা ও মানসিক দক্ষতা থেকে প্রশ্ন আসে।
বীজগণিতের ক্ষেত্রে বীজগণিতীয় রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, সূত্রের প্রয়োগ ও প্রমাণ, সরল সমীকরণ, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন আসে।
জ্যামিতির ক্ষেত্রে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, রম্বস, সামন্তরিক, বৃত্ত ও জ্যামিতি বিষয়ের খুঁটিনাটি থেকে প্রশ্ন আসে।
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের প্রস্তুতি:
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলো বেশি করা হয়। তাই সাধারণ জ্ঞানের জন্য ভালো একটা বই সংগ্রহ করে তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি খবরের কাগজ পড়তে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতি:
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানীর নাম, বিখ্যাত প্রণালী, নদী, খাল, স্থান, স্থাপনা, বন্দর, জলপ্রপাত, ঐতিহাসিক স্থান, আবিষ্কার, পুরস্কার, বিখ্যাত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য কর্ম, অবদান ও তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাল থেকেই প্রশ্ন বেশি আসে। তাই উল্লিখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত যুদ্ধ সম্পর্কেও জানতে হবে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতি:
বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রাচীন শাসনামল, সভ্যতার ইতিহাস ইত্যাদি ভালোভাবে জানতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলী, মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল, পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশে হওয়া আদমশুমারিতে জনসংখ্যা, নারী পুরুষের সংখ্যা, জন্ম ও মৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, শিক্ষার হার, খানা, গ্রাম, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা ও বিভাগের সংখ্যা, মাথা পিছু গড় আয়, জিডিপি জানতে হবে।
আদিবাসীদের বাসস্থান, জাতিগোষ্ঠীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, উৎসব, পিতৃ/মাতৃপ্রধান জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, পোশাক ইত্যাদি জানতে হবে।
আইন, শাসন ও বিচার বিভাগসমূহ, নীতি নির্ধারণ, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও সংস্কার। বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ, জাতীয় পুরস্কার, বাংলাদেশের খেলাধুলাসহ চলচ্চিত্র বিষয়ে জানতে হবে।
বাংলাদেশের বাজেট, উন্নয়ন, বিভিন্ন জাতীয় দিবস, আন্তর্জাতিক দিবস, অর্থনৈতিক কর্মকা-, নদী-নালা, ভৌগোলিক অবস্থান, খনিজ সম্পদ, বিভিন্ন জাতীয় বিষয়াবলি, আবিষ্কার, উদ্ভাবন, চিত্রকর্ম, স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব, বীরশ্রেষ্ঠ, বীর প্রতীক, বীরউত্তম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি জানতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়াবলির প্রস্তুতি:
তথ্যপ্রযুক্তি সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশ্ন আসে। তাই কম্পিউটার শিক্ষা বইটা সংগ্রহ করে প্রযুক্তি বিষয়ের তথ্যগুলো পড়তে হবে। কম্পিউটারের ইতিহাস, গঠন, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, সোশ্যাল ও কেনা বেচার সাইট, সাইবার সিকিউরিটি এবং এদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, নেটওয়ার্ক, সংখ্যা ধারণা, ডিভাইস, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বশেষ আবিষ্কার ও সংযোজন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তাই আলোচ্য আর্টিকেলটিতে কিভাবে পড়লে চাকরি পাওয়া সহজ হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এটি যথাযথভাবে অনুসরণ করলে চাকরি পাওয়া আপনার জন্য অনেকটা সহজ হবে বলে আমরা মনে করি। তবে অবশ্যই এ জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে এবং ধৈর্য ধরে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। কঠোর শ্রম, অধ্যবসায় এবং নিয়মিত চর্চাই আপনাকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
Collected From Daily Janakantha