স্বপ্নের তিন চাকরিই পেয়েছিলেন বাছিত
27/05/2024
404 Views
৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে প্রশাসন ক্যাডারে পঞ্চম হয়েছেন আবদুল বাছিত মোল্লা। সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় নবম স্থান অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে চাকরির পরীক্ষায় ১৬তম হন। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে আইন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিরত থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি পদের চাকরির ফল প্রকাশিত হয়। আইন কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে তিনি এডি পদে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৪তম বিসিএসে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির চাকরি ছেড়ে সেখানে যোগ দেন ২০২৩ সালের মার্চে। বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ভোলায় সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত। স্বপ্নের তিনটি চাকরিই পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা আবদুল বাছিত মোল্লা। এ ছাড়া বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে আইন কর্মকর্তা হিসেবেও চাকরি পেয়েছিলেন তিনি।
আবদুল বাছিত মোল্লা বলেন, ‘আইনের ছাত্র হিসেবে লক্ষ্য ছিল বিচারক হওয়া। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্নাতক শেষে ১৩তম বিজেএসে আবেদন করি। তখন ৪১তম বিসিএস আর বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি (সাধারণ) এই দুই চাকরিরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সদ্য স্নাতক শেষ হওয়া ছাত্র হিসেবে শখের বশে বাংলাদেশ ব্যাংক আর বিসিএসে আবেদন করি। ১৩তম বিজেএসের চূড়ান্ত ফলাফল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়। আমি মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ি। মন ভেঙে যায়। কিন্তু তখনো বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়নি।’
সহকারী জজ পদে প্রথমবার মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন তিনি। আবদুল বাছিত মোল্লা বলেন, ‘বিসিএসকেন্দ্রিক পড়াশোনা করলে সব চাকরির প্রস্তুতি হয়ে যায়। কিন্তু জুডিসিয়ারি নিয়ে থাকলে শুধু জুডিসিয়ারিতে চাকরির প্রস্তুতি হয়।
সেখানে আবার ভাইভায় বাদ পড়লে বিপদে পড়তে হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষা দিই। এর পর থেকে বিসিএসের জন্য পড়াশোনা শুরু করি। জুডিসিয়ারির পড়াশোনাও করতাম, তবে খুব বেশি না। ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি দিয়ে দেখলাম ব্যাংকের নিয়োগ বেশ দ্রুত হয়। তখন বিসিএসের পাশাপাশি আমার লক্ষ্য ছিল একটা নবম গ্রেডের সরকারি চাকরি পাওয়া। তাই ব্যাংকের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনেক বিশ্লেষণ করে শুধু দুটা বই কিনি, যাতে পড়ে শেষ করতে পারি এবং বিসিএসের প্রস্তুতিতে বেশি প্রভাব না পড়ে। এভাবেই সব ধরনের চাকরির পরীক্ষার জন্য আমার প্রস্তুতি হয়ে যায়। যদি ১৩তম বিজেএসে সহকারী জজ হতাম, তাহলে অন্য কোনো চাকরির কথা চিন্তাই করতাম না। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে বিসিএস, ব্যাংক ও সহকারী জজ- এই তিন চাকরিই পেয়েছি।’
আবদুল বাছিত মোল্লা আরও বলেন, ‘আইন বিভাগে পড়ার সময় শুধু বিচারক দেখেছি আমাদের বিভাগের। অন্যান্য চাকরি করে এমন বড় ভাই খুব কম দেখতাম। আমিও তাই বিচারক হতে চেয়েছিলাম শুরুতে। কিন্তু প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর আরও বড় পরিসরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। অন্যান্য বিভাগ থেকে পাস করা বন্ধুরা কেউ কেউ তখন চাকরি পেয়েছে। নিজেকে আমার তাদের চেয়ে বেশি খারাপ ছাত্র মনে হয়নি। তাই ভাবলাম, বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। আর ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হওয়ার জন্য চেষ্টা ছিল। কিন্তু আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির পরীক্ষা হয়ে যায় আর আমি পরীক্ষায় ১৮১ জনের মধ্যে ১৬তম হই। আর সিনিয়র অফিসারের ভাইভা দিইনি।’ তিন চাকরির প্রস্তুতি সম্পর্কে বাছিত মোল্লা বলেন, ‘বিসিএসকে লক্ষ্য করে ২০২১ সাল থেকে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করি। জুডিসিয়ারি যেহেতু আগে একবার দিয়েছিলাম, তাই রিভিশন দিয়ে স্নাতকের পড়াশোনার ওপর ভরসা করেছি। নিয়মিত পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। ২০২১ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়েছি।
ধারাবাহিকভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। বইয়ের আকার দেখে ভয় পাইনি। ৩০০ পেজের বই প্রতিদিন ১০ পেজ পড়লে ৩০ দিনে শেষ। এভাবে ছোট করে দেখতাম টার্গেট। মনোযোগী থেকেছি। মোটামুটি এভাবেই আমার একটা পাঁচমিশালি প্রস্তুতি হয়ে যায় বিসিএস, ব্যাংক আর জুডিসিয়ারির জন্য।’
আবদুল বাছিত মোল্লা বলেন, ‘আরেকটা সুবিধা ছিল, ব্যাংকের ২০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষার মধ্যে ১৬০ নম্বর আর জুডিসিয়ারির ১০০০ নম্বর লিখিতের মধ্যে ৪০০ নম্বরের সিলেবাস ছিল বিসিএসের মতো। এতেও আমার সুবিধা হয়।’ স্বপ্নের তিন চাকরির মধ্যে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের পাল্লাই ভারি বলে জানান বাছিত।
বরগুনা জেলায় ছেলে বাছিত। পটুয়াখালীর গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে এসএসসি পাস করেন এবং বরগুনার আমতলী সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।
চাকরি বাজার ডেস্ক
Collected From Dainik Janakantha