সামিয়া নাজ স্বীকৃতি। পড়াশোনা করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগে। তার বেড়ে ওঠা কুমিল্লা শহরে। বাড়ির কাছে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো বাস ধরে ক্লাসে আসা আবার বাস ধরে বাড়ি ফেরার এই রুটিনে তিনি আবদ্ধ না থেকে তার শখের কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন উদ্যোক্তার পর্যায়ে। তার সেই এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনেছেন সুদীপ চাকমা ও ইকবাল হাসান
তিনি মূলত কানের দুল, হাতের রিং, গলার মালা, পায়েল, ব্রেসলেট, আয়না, হোমমেড আচার বিক্রি করে থাকেন। প্রথমে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য শুরু করলেও এখন সেটা বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। ছোটবেলা থেকে ঝোঁক ছিল কাটাকুটি ও ছবি আকাঁর প্রতি। স্কুল বন্ধে সময় পেলেই বসে পড়তেন রঙ আর তুলি নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একদিন হুট করেই নিজের বিভাগের নামের সাথে মিল রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলে ফেললেন ‘প্রতেœর রতœ’ নামক একটি পেইজ। সেখান থেকে উদ্যোক্তার যাত্রা শুরুর স্বীকৃতির। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে কানের দুল, হাতের রিং, গলার মালা, পায়েল, ব্রেসলেট ও আয়না। কিন্তু আচার বিক্রি হয় খুব কমই। এসবের সাথে আচার বিক্রির ধারণার ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মুতাসিম বিল্লাহর শ্রেণীকক্ষের অনুপ্রেরণামূলক কথা স্মরণ করে বলেন, ‘স্যার বলেছিলেন, কোন কাজ ছোট নয়।
তোমরা যে যা পারো তা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে পারো। যেমন মনে করো তুমি খুব আচার বানাতে পারো তো এটা দিয়ে একটা ব্যবসাও শুরু করতে পারো। এই কথা শোনার পর আমিও মনে মনে ভাবলাম, আমিও তো ভালো আচার বানাতে পারি তো এখন একটু চেষ্টা করে দেখি। তারপর আর কি আমি বিভিন্ন আচার বানানো শুরু করি। এখন বর্তমানে সেখান থেকে বেশ আয়ও হচ্ছে।’
মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘একদিন ক্লাস থেকে আসার সময় তার স্টল থেকে একটা আচার কিনেছিলাম, যা খুবই দারুণ ছিল। তখন তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। আসলে প্রথম বর্ষ থেকে তার এমন উদ্যোগ নেওয়া খুবই সাহসী পদক্ষেপ।
সাধারণত আমরা সবাই টিউশনি করে নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করি, কিন্তু সে ঐ পথে না হেঁটে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। আমি চাই তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী নতুন কিছু করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করুক।’
প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমার কর্তব্য শিক্ষার্থীদের একমুখী করে গড়ে না তুলে তাদের বহুমাত্রিক চিন্তায় অনুপ্রাণিত করা। পরামর্শ আমরা প্রতিনিয়ত দিলেও সব পরামর্শ সব সময়ে সমানভাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। অনেকে করে আবার অনেকেই করবে সিদ্ধান্ত নিলেও পিছু পা হয়ে যায়। কিন্তু স্বীকৃতি প্রথম বর্ষ থেকেই নতুন কিছু করার সাহস দেখিয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’
তার এই উদ্যোক্তা হয়ে উঠার ব্যাপারে সামিয়া নাজ স্বীকৃতি বলেন, আল্লাহর রহমতে এখন আমি বেশ সাড়া পাচ্ছি। অনেক ভালো লাগে, যখন দেখি আমার নিজের বানানো গহনা পড়ে অনেকেই ঘোরাঘুরি করছে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিচ্ছে। তখন নিজে নিজেই খুব গর্ববোধ করি। আসলে এসব কাজ করতে অনেক সময় আর ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়।
আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে এসব জিনিস তৈরি করি। দিন শেষে যখন কেউ আমার জিনিসপত্রগুলো পছন্দ করে তখন আমার মনে হয় আমার এই কষ্টগুলো স্বার্থক হয়েছে। আমি এখনও একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার ইচ্ছা একদিন আমার এই ছোট্ট পেইজটাকে অনেক বড় করে তুলবো।’
Collected From Dainik Janakantha