ভালো লাগা থেকে লেখালেখি
লেখালেখির শুরুটা হয় ভালোলাগা থেকে। ছোট থেকেই অনেক বই পড়তাম। বই পড়ার সাথে সাথে লিখতেও বেশ ভালো লাগতো। তখন থেকেই গল্প-কবিতা লিখতাম। কলাম ও ফিচার লিখার সূচনা হয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। কয়েকজন বড় ভাই-আপুর সহযোগিতায় নিয়মিত পত্রিকায় লিখতে শুরু করলাম। প্রথম প্রথম খুব আনন্দ লাগতো এটা ভেবে যে, পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বুঝলাম লেখালেখির স্বার্থকতা সৃষ্টি হয় সমাজে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার মাধ্যমে। আমার একটা লেখা পড়ে কয়েকজন লেখালেখি সম্পর্কে আগ্রহী হবে, সমাজের সমস্যার কথা ভাববে; তারাও সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসবেÑ এখানেই তো প্রাপ্তি। লেখালেখি করতে গেলে প্রায়শই বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়; যেমনÑ কোন ধরনের টপিকে লিখব, কিভাবে লিখব, কিভাবে মেইল করব ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলোর সমাধানও খুব সহজ। আর তা হলো পত্রিকার বিভিন্ন লেখাগুলো পড়া অথবা যারা দীর্ঘদিন লেখালেখি করে তাদের সাহায্য নেওয়া।
সবকিছুর মতো লেখালেখিতেও চ্যালেঞ্জ আছেÑ সেসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে লেখালেখির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ লেখালেখি মাধ্যমে মানুষের মন কোলাহল মুক্ত হয় এবং সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়।
সাদিয়া আফরিন মৌরি
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
লেখালেখি জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে
লেখা একটি সৃজনশীল এবং নান্দনিক শিল্প। যুগ-পরম্পরায় জ্ঞানের বিকাশ ও সংরক্ষণের মাধ্যম হয়ে এসেছে লেখালেখি। নানা গ্রন্থে তা সংরক্ষিত রয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, অধিকাংশ মানবসমাজকে সুগঠিত করতে লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। লেখা জ্ঞান-হস্তান্তরের প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রথা বা রীতি। অনেক সময় লেখা প্রতিরোধের হাতিয়ার এবং সমাজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। লেখার শুরুতে একটি কাঠামো তৈরি করা অতি আবশ্যক। লিখন ধীরগতির চলমান একটি প্রক্রিয়া হওয়ায় দক্ষ লেখক হতে হলে ধৈর্য, সময় ও নিষ্ঠার সঙ্গে এবং লেখার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে অবিচল চর্চা চালিয়ে যাওয়া দরকার। তথ্য না জানলে ভালো লেখা তৈরি হয় না। দুনিয়াতে কত লোকের জন্ম হয়েছে; কত শাসক, রাজা চলে গেছেন! দুনিয়া কাঁপিয়েছেন অনেক বিশ্বনেতা; কিন্তু তারা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন। সৃষ্টিশীল কর্ম দ্বারা আজও অনেকে বেঁচে রয়েছেন মানুষের মনমন্দিরে। বেঁচে থাকবেন আরও সহস্র বছর ধরে। ভাবনা অনেকের মধ্যেই থাকে। তার প্রকাশ না ঘটলে তা অনর্থক। লেখালেখির মাধ্যমে মানুষের মনে বেঁচে থাকার চিরঞ্জীব বাসনা তৈরি করে লেখকের মনে। যাদের কাজ, চিন্তা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়, তারা শারীরিকভাবে গত হলেও মানুষের জীবন ও চেতনায় থেকে যান। লেখালেখির মাধ্যমে ন্যায়ের পথে মহান দায়িত্ব পালন করতে পারি। পারি রেনেসাঁকে প্রস্ফূটিত করতে; ছড়িয়ে দিতে পারি চতুর্দিকে।
সাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
যে লিখতে জানে, সে সৃষ্টি করতে জানে
মানুষের চিন্তাগুলো হয় আকাশের মেঘের মতো। কখনো পুরো আকাশটাকে ছেয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে সূর্যের ঝলমলে আলোতে আবার মিলিয়ে যায়। আকাশ যেমন সর্বদা মেঘকে ধরে রাখতে পারে না তেমন মানুষও সর্বদা মনের আকাশে চিন্তার মেঘকে ধরে রাখতে পারে না। তবে, যারা চিন্তাগুলোকে কলম হতে নিঃসৃত বর্ণ, শব্দ আর বাক্য দিয়ে গেঁথে ফেলতে জানেÑ তারা তাদের মনের আকাশের মেঘকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তার যখন ইচ্ছে সেই আকাশের মেঘ ঝরিয়ে ভিজতে পারে, পারে অন্যকে ভেজাতে। মানুষের চিন্তা সৃষ্টিশীল। সে চিন্তা দিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে, করে কাব্যরচনা। কখনও তার চিন্তার মেঘ থেকে হয় বজ্রপাত। সে বজ্রপাতে হয় দুষ্টের দমন, হয় শিষ্টের লালন। সে তার লিখনি দিয়ে যে অবদান রেখে যেতে পারে তা স্মরণীয় হয়ে থাকে ইতিহাসের প্রতিটি কোণে। এমন সৃষ্টিশীল চিন্তাগুলোকে আমাদের কলমের কালিতে ধরে রাখতে হবে।
জুনায়েদ মাসুদ
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ,
সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার
লেখালেখি শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দ নয়; বরং সমাজ, দেশ পরিবর্তনের বড় একটি হাতিয়ার। লেখালেখির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, আশা, ভাবনাকে দেশ ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা সম্ভব। লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিতÑ সমাজ পরিবর্তনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা। তবে সুনাম ও খ্যাতির জন্য করা লেখালেখি কখনোই দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। লেখালেখি মাধ্যমে যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ, গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। লেখালেখি কারো কাছে শখ অথবা পেশা। আমার কাছে শখ। নিজ চোখে দেখা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান চেয়ে অথবা প্রতিবাদী বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি আমার শখ। সমাজকে বদলে দিতে লেখালেখির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সকল প্রজন্মের মানুষকে লেখালেখির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে।
মাইনুল ইসলাম অমি
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
মুক্তমনের চর্চা হোক লেখনীতে
পুরনো ইতিকথা জানতে, সমাজ সংস্কারে, জনসচেতনতায় কিংবা জ্ঞান ভাগাভাগিতে লেখালেখি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীত বিশ্লেষণ করলে লক্ষ্যণীয়, সতীদাহ প্রথা বাতিল করতে রাজা রামমোহন রায়ের মতো সমাজ সংস্কারকও ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের স্বাদ’ নামক পুস্তক রচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে একাধিক পুস্তক রচনার মাধ্যমে এই কুসংস্কার ‘সহমরণ প্রথা’ নিষিদ্ধ হয়। তাছাড়া গবেষণায় প্রমাণিতÑ নিয়মিত লেখালেখিতে ব্যক্তি-মনে হতাশা দূরীভূত হয় এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়। পত্রিকা অথবা পুস্তকে লেখার মাধ্যমে সর্বসাধারণে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তি-মনের চিন্তা ও জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। আধুনিক সময়ের বহু আলোচিত নারী-পুরুষ সমতা, মিসোজিনি, মানসিক স্বাস্থ্য, মানবাধিকার নিয়ে চর্চা-চিন্তা সকল কিছুর সমন্বয় হয় লেখালেখিতে। তাই তরুণমন বিকাশে, সমৃদ্ধ মনন চর্চায় পত্রিকা, পুস্তক কিংবা নিজের ব্যক্তিগত কিছু পৃষ্ঠায় যেখানেই হোক লেখালেখি করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
আফরিতা মাহ জাবিন রুন অমি
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তারুণ্যের বিকাশ
তারুণ্যের বিকাশে অমূল্য একটি হাতিয়ার হচ্ছে লেখালেখি। এটি কেবল পত্রিকায় প্রকাশের জন্য নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক নানা পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে। তরুণ লেখকরা তাদের চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক অসমতা, বৈষম্য ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করতে পারেন, যা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নানা পরিবর্তন আনয়নে সহায়ক। তবে, লেখালেখির পথে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কোন সমস্যার বিরুদ্ধে তারা চাইলেও মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। কারণ আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মুখে মুখে দেয়া হলেও সত্যিকার অর্থে সেই স্বাধীনতা আমাদের নেই। তাই সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই লেখালেখি তরুণদের বিকাশ ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সোহানা চৌধুরী
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
Collected From Daily Janakantha