এটা আসলে খুবই ভালো একটা মুহূর্ত ছিল। তবে সেদিন সকালেই আব্বুকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে এনজিওগ্রাম পরীক্ষার পর আব্বুর হার্টের মধ্যে চারটি ব্লক ধরা পড়ে। ডাক্তার বলছিলেন ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে। তখন খুব বাজে একটা অবস্থায় ছিলাম। তারপর দুপুরে জানতে পারলাম ব্যাংকের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। তখন ভালো-খারাপ মিলিয়ে একটা মিক্সড ফিলিংসের মধ্যে ছিলাম।
এমবিএ পড়ার সময় ব্যাংকের স্বপ্ন
বুয়েট থেকে বের হওয়ার পর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে ভর্তি হই। এমবিএতে ফাইন্যান্স রিলেটেড কিছু কোর্স রয়েছে। যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়াশোনা করা হয়। আইবিএতে পড়ার সময় কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি। কমার্শিয়াল ব্যাংকে মানুষ টাকা রাখে ও ওঠায় এবং ইন্টারেস্ট পায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পুরো দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম মনিটরিং করা হয়। এখানে কাজের পাশাপাশি নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমবিএতে পড়ে যখন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম, তখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন দেখি।
জটিল বিষয়গুলোতে বেশি পড়াশোনা
প্রতিটি চাকরির পরীক্ষায় কয়েকটা ধাপ পার হয়ে যেতে হয়। প্রথমে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাঁরা চাকরির করছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তা ছাড়া আইবিএতে যাঁরা পড়েন, তাঁদের অনেকেই ব্যাংকার হয়ে থাকেন। সিনিয়রদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংকের প্রশ্ন প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করি। পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো দেখি। তখন আমার ঘাটতিগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারি। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় গণিত নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি। অনেক চর্চা না থাকায় বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়গুলো তখন একটু কঠিন মনে হয়েছে। তাই এ বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া শুরু করি। পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে থাকি। মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করার চেষ্টা করি। প্রিলিমিনারি টিকে যাওয়ার পর লিখিত নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। লিখিতের গণিতের পাশাপাশি ইংরেজিতে বেশি জোর দিয়েছি। নিয়মিত ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা পড়া হতো। দৈনন্দিন ঘটনাবলি, ডেটা, সম্পাদকীয়, ইংরেজি অনুবাদ ও ইংরেজি লেখার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা নিতাম। ভাইভায় তেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। নিজ জেলা, পঠিত বিষয় ও বেসিক কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলাম। মূলত ভাইভায় নিজের ব্যক্তিত্বের বিষয় ফোকাস করা হয়।
নিজের দুর্বল বিষয়ে জোর দেওয়া
বর্তমানে চাকরির পরীক্ষাগুলো খুবই প্রতিযোগিতামূলক। এ জন্য কম সময়ে কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়, সবার সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংকের প্রিলিতে ছয়টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন আসে। এর মধ্যে কেউ গণিত, কেউ ইংরেজি বা অন্য কোনো বিষয় ভালো পারেন। সে ক্ষেত্রে যাঁর যে বিষয়ে দুর্বলতা, সে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবেন। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে আইডিয়া নিতে হবে। যেসব বিষয়ে ভালো নম্বর তোলা যাবে, সে বিষয়ে ভালো করে পড়তে হবে। বাংলা গ্রামার, গণিত ও ইংরেজির জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই পড়তে হবে। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি এগিয়ে রাখলে ভালো।
কম সময়ে বেশি লেখার চেষ্টা
ব্যাংকে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় এগিয়ে থাকলে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক কম সময়ে বেশি লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। লিখিত বিষয়ে ভালো লেখার জন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাগুলো ফলো করতে হবে। গণিতের জন্য বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে হবে। পরীক্ষায় দ্রুত ম্যাথ করার প্র্যাকটিস করতে হবে। ইংরেজি অনুবাদের জন্য ইংলিশ পত্রিকা পড়লে দক্ষতা বাড়বে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলে হবে। ফোকাস রাইটিং লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকের পরীক্ষার জন্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে নজর রাখতে হবে। খাতায় কাটাকাটি না করে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করতে হবে।
ভাইভা মোকাবিলা
ব্যাংকে ভাইভার জন্য ২৫ নম্বর দেওয়া থাকে। এ জন্য এর গুরুত্ব তুলনামূলক কম। ভাইভায় নিজ জেলা, নিজ পঠিত বিষয়, নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও বেসিক কিছু বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ভাইভা বোর্ডে স্যারদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, আই কন্টাক্ট, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা এবং নিজের ব্যক্তিত্বের বিষয়টি ফোকাস করা হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি পোশাক-আশাকের বিষয়ে খেয়াল রাখা। ভাইভার জন্য আগে থেকে বাসায় প্র্যাকটিস করে যেতে হবে।
Collected From ajkerpatrika