পেপার রাইম অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিজাইন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস আপওয়ার্কে কাজ শুরু করেন ২০১১ সালে থেকে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০৫ ঘণ্টার শ্রম ব্যয়ে ১২৯টি প্রজেক্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। পেয়েছেন টপ রেটেড ব্যাচ। আপওয়ার্কে প্রতিটি কাজের জন্য বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ডলার করে ফি নিচ্ছেন। ২০১৬ সালে আপওয়ার্ক প্রকাশিত সেরা ইলাস্ট্রেটরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে, গ্রাফিক্স ডিজাইনারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে এবং লোগো ডিজাইনারের তালিকায় চতুর্থ স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা হয় এই সফল ডিজাইনারের। কথোপকথনে ছিলেন নুরুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব : গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন।
গোলাম ফারুক : সৃজনশীল উপায়ে কোনো কাজকে ভিজুয়াল এলিমেন্ট যেমন ছবি, রং, রেখা ও ফর্মের সমন্বয়ে সুষম বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো ক্রিয়েটিভ আইডিয়াকে দর্শনীয়ভাবে উপস্থাপন করাই হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন। এটা সাধারণত ভোক্তার উদ্দেশ্যে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচার অথবা প্রশিক্ষণের নিমিত্তে পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে করা হয়। প্রোডাক্টের টার্গেট গ্রুপের পছন্দ, প্রয়োজন, সাইকোলজি বিবেচনা করে দর্শনীয় উপাদান এবং ডিজাইনের উপাদানগুলোকে একত্রিত করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণই হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মূল উদ্দেশ্য। সৃজনশীল কাজ এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেনো কাজটির মধ্যে স্বকীয়তার ছাপ থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব : আপনি কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলেন?
গোলাম ফারুক : ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা থেকে ড্রইং এন্ড পেইনটিং বিষয়ে ¯œাতক পরীক্ষা দেই। পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য আমি তখন ছবি আঁকার টিউশন করাতাম। এরপর তৎকালীন কালার স্ক্যান নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ফটোসপ ও ইলাস্ট্রেটর শিখলাম। আমাদেরকে সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষত শিক্ষক দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো। তখন ফটোসপের ভার্সন ছিলো ২.৫ আর ইলাস্টেটরের ছিলো ৪.০.। প্রশিক্ষণ শেষে ওখানেই দুই বছর খ-কালীন চাকরি করে নিজেকে তৈরি করে নেই। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে এটাকেই পূর্ণ পেশা হিসেবে গ্রহণ করি। তবে আমি মনে-প্রাণে একজন চিত্রশিল্পী, অনেক কাজের পাশাপাশি এখনো ছবি আঁকি। দুটি একক এবং বহু যৌথ চিত্র প্রদর্শনী করেছি।
দৈনিক ইনকিলাব : দেশে-বিদেশে চাহিদার বিচারে পেশা হিসেবে এটা কেমন?
গোলাম ফারুক : দেশ-বিদেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যারা গ্রাফিক্সের কাজ পারে, তারা এটাকে পেশা হিসাবে নিতে পারেন। কারণ এ কাজে পারদর্শীদের জন্য বহুমুখী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি, টিভি চ্যানেল, প্রি-প্রেস, প্রেস ও কর্পোরেট হাউজে কাজ পেতে পারেন। জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার/ডিজাইনার, সিনিয়র ভিজুয়ালাইজার/ডিজাইনার, আর্ট ডাইরেকটর, ক্রিয়েটিভ ডাইরেকটর ইত্যাদি পেশায় কাজ করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজসহ প্রায় সকল ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই এখন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রয়োজন হয়। আর অনলাইন মার্কেট প্লেসে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজের মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্যতম। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও সম্ভাবনাময় পেশা।
দৈনিক ইনকিলাব : কারা এই সেক্টরে ভালো করতে পারবে?
গোলাম ফারুক : যারা ধৈর্য ও আগ্রহ সহকারে কাজ করতে পারে, যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে এবং কম্পিউটরসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইসগুলো চালানোর দক্ষতা আছে- আমি মনে, করি তারা এই সেক্টরে ভালো করতে পারবে। তবে অন্যান্য সেক্টরের মতো এখানেও কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব : অন্য পেশার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজ করা কী সম্ভব?
গোলাম ফারুক : যে কোনো পেশার মানুষ তাদের কাজের পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করতে পারবে। যেমন চাকরি বা অন্য কোনো পেশার মানুষ এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের দৈনন্দিন কাজের থেকে ২/৩ ঘণ্টা বের করে গ্রাফিক্সের কাজ করতে পারেন। গৃহিণীরাও তাদের অবসর সময়টাতে ঘরে বসে গ্রাফিক্সের কাজ করে আয় করতে পারেন। কারণ উন্নত প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে। আর দেখা যাচ্ছে যে, প্রায় অনেকের ঘরেই কম্পিউটর রয়েছে। তাই যেকোন পেশার মানুষ ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারেন। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সৃজনশীল প্রবণতা বেশি। তাই এদেশের মানুষ যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ শিখে এবং কাজ করে, তবে তারা ভবিষ্যতে নিজেদেরকে সফল গ্রাফিক্স ডিজানার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব : একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের উপার্জন কেমন হতে পারে?
গোলাম ফারুক : গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ এই ধরনের সকল কাজের উপার্জন নির্ধারিত থাকে শুধু কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত হয়ে কাজ করলে। এছাড়া সকল গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের উপার্জন নির্ভর করে তার কর্ম দক্ষতার উপর। দক্ষ ডিজাইনাররা শুধুমাত্র অনলাইন থেকে প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকার অধিক উপার্জন করতে পারেন। আর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সর্বনি¤œ বিশ হাজার টাকা থেকে বেতন নির্ধারিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ কেমন?
গোলাম ফারুক : আমাদের দেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখা অনেক বেশি, কর্মসংস্থানের জায়গাও অপ্রতুল। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে যুব সমাজ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। ইন্টারনেটের সুবাধে পুরো পৃথিবীটাই এখন কর্মসংস্থানের জায়গা হতে পারে। গ্রাফিক্স ডিজাইনভিত্তিক কর্মসংস্থানই হতে পারে আমাদের সেই নব উত্তরণের মহাসোপান। কারণ দেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের বিরাট বাজার রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এই বাজার আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই এই সম্ভবনাময় পেশার মানুষের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
দৈনিক ইনকিলাব : গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সঠিক পদ্ধতি কী?
গোলাম ফারুক : ভালো কোনো প্রশিক্ষকের কাছ থেকে অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে শেখার পরামর্শ দেবো। তবে শেখার আগে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে নিবেন। ভুঁইফোড়দের অভাব নেই, প্রতারিত হবেন না। আর এখন অনলাইনে প্রচুর তথ্য ও ভিডিও পাওয়া যায়, সেখান থেকেও শেখা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব : আগ্রহীদের জন্য আপনি কী কী পরামর্শ দিবেন?
গোলাম ফারুক : আগ্রহীদের জন্য কোথাও ৩/৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রফেশনাল কাজ শুরু করে দিতে পারেন। যেহেতু এটা সৃজনশীল কাজ তাই এখানে প্রচুর সময় দিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সফলতার জন্য কোনো ‘সর্ট কাট’ পদ্ধতি নেই। কাজ করুন, সময় দিন। পাশাপাশি ভালো ভালো কাজগুলো দেখুন।
Collection From dailyinqilab