Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

নতুন চাকরিতে মানিয়ে নেওয়ার মন্ত্র

image

কর্মক্ষেত্রে থাকতে পারে নানান বাঁক! চাকরি যখন শুরু, ভাবনাটা একটু বেশিই। এ সময় হঠাৎ মুখোমুখি হতে হয় অন্যরকম সব অভিজ্ঞতার। ছাত্রজীবনে যে ধরনের জীবনধারায় অভ্যস্ত, তার অনেকটাই আটকে পড়ে নিয়মের বেড়াজালে। পরিবেশটাও একদম আলাদা। আর সেখানেই সমস্যার শুরু। নতুন চাকরিতে চড়াই-উতরাই পেরিয়েই তবেই তৈরি করে নিতে হয় নিজের অবস্থান। 
প্রথম চাকরি, নতুন অভিজ্ঞতা
জুতসই একটি চাকরি খুঁজে পেতেই তিন-তিনটি বছর কেটে গেল রাফসানের। আর যেই জুটল পছন্দসই একটি চাকরি, কিছুদিন পর সেটিই কিনা ভাল্লাগে না! চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নিজেকে মনে হলো ভিনগ্রহের বাসিন্দা! এমনটি হতে পারে আপনার বেলায়ও। কর্মক্ষেত্রে নতুন হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় সহকর্মীদের ঘিরে। শুরুতে মনে হতে পারে সবাই যেন দূরের মানুষ! মনে হতে পারে এই সম্পর্কটা পেশাগত কৃত্রিমতার। কারণটাও সহজ, সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় ও নিখাদ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ছবি মিলবে না এ ক্ষেত্রে। কারণ কর্মক্ষেত্রে সবাই সমবয়সী কিংবা সমমনা হবে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। সহকর্মীদের কারও কারও সঙ্গে নিখাদ বন্ধুত্ব এখানেও সম্ভব; হয়তো খানিকটা সময় লাগবে। 
উল্টোরথের যাত্রী
নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরপরই সহকর্মীদের কেউ হয়তো টিপ্পনী কাটছেন। সবার মনমানসিকতা তো আর সমান হয় না। নিছক মজা করার জন্যও টিপ্পনী কাটতে পারেন কেউ কেউ। বিষয়টিকে সহজভাবে নিন। এমন অবস্থা খুব বেশি দিন থাকে না। এমনও হতে পারে, আপনাকে দেখে হয়তো স্বাভাবিকভাবেই কেউ মুচকি হাসছে। এই স্বাভাবিক বিষয়টিই আপনার কাছে মনে হতে পারে হয়তো মজা করছে আপনাকে নিয়ে। নতুন কর্মক্ষেত্রে মনে হতে পারে সবাই পর। নিজেকে একা ভাবার কোনো কারণ নেই। সহকর্মীদের আপন করে নিন। এতে কেমন সময় লাগবে, নির্ভর করছে আপনার ওপরই! 

মানিয়ে নেওয়ার মন্ত্র
কর্মক্ষেত্রে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কাজটি আপনাকেই করতে হবে। হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না আপনার বসার জায়গাটি কোথায়, কী কাজ করতে হবে। এ ছাড়া কাজ করার কিছু অনুষঙ্গ, যেমন—কাগজ, পিন, স্ট্যাপলার ইত্যাদি কিংবা কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড পেতেও সমস্যা হতে পারে। সহকর্মীর সহযোগিতা চান। পাবেন। এমন কয়েকজন থাকবেনই, যাঁরা আপনার যোগ দেওয়ায় হয়তো খুশি হতে পারেননি। ঔদ্ধত্য কিংবা উপেক্ষা করে বিরোধিতার আগুন উসকে দেবেন না। অফিসের সবার মন জয় করুন ব্যবহার দিয়েই। 
ওপরে ওঠার সিঁড়ি
চাকরির শুরুতে কাজের দক্ষতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে কাজের জায়গাগুলো বুঝে নিতে হবে, বাড়িয়ে নিতে হবে দক্ষতা। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলেই দেখা মিলবে ওপরে ওঠার সিঁড়ির। অফিসে আসবেন নিয়মমতো। হাতের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে সময়মতো অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ুন। কর্তৃপক্ষকে খুশি করতে ছুটির সময় পেরিয়ে গেলেও অযথা বসে থাকবেন না। আপনার যোগ্যতা ঠিকমতো কাজে লাগানো হচ্ছে না, কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, ভেঙে পড়বেন না। একসময় দেখবেন, কাজের মূল্যায়ন ঠিকই পেয়ে গেছেন। 

তৈরি করুন নিজেকে
অফিসই হয়তো আপনার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। অফিসের কর্তাব্যক্তিরা এ সময়টাতে নানা দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। সবার পরামর্শ আমলে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অফিসে আপনার কী কাজ, বসের কাছ থেকে শুরুতেই বুঝে নিন। শিক্ষানবিশ সময়ে কতটা লাভবান হলেন, তা কিন্তু আপনার ওপরই নির্ভর করছে। সবকিছু আয়ত্তে আনার চেষ্টা করুন। এ সময়টাতে আপনাকে হতে হবে মনোযোগী ছাত্র। দেখুন, শুনুন আর শিখুন। দেখবেন, কিছুদিনের মধ্যেই সবকিছু চলে এসেছে আপনার হাতের মুঠোয়। 

মাটিতে নামুন
যোগ্যতা ও পেশাদারি দক্ষতা আপনার থাকতেই পারে, এ নিয়ে অহমিকা করবেন না। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর এমন ভাব যেন আপনার মধ্যে থাকে, যাতে সবাই বুঝতে পারে আপনার উদ্দেশ্য সবকিছু শিখে নেওয়া। যত বেশি আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শিখে নিন। দায়িত্ব যা-ই হোক, নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখবেন না। বাড়তি দায়িত্ব তুলে নিন নিজের কাঁধে। প্রতিষ্ঠানের অন্য দপ্তরে কী কাজ হচ্ছে, সেটাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন। শিক্ষানবিশের ওপর কিন্তু ‘কর্তৃপক্ষ’ তীক্ষ্ণ নজর রাখে। 
যদি বদলে যায় কাজের ক্ষেত্র
কর্মক্ষেত্রে একদম নতুন না হলেও অফিস পরিবর্তন করলেও নিজেকে নতুন মনে হতে পারে! কাজ যদি একই হয়, কর্মক্ষেত্র নতুন হলেও অফিস সামলানো অনেক সহজ। চাকরি তো ছাড়লেন, নতুন অফিসের কাজও কি সঙ্গে করে এনেছেন? নাকি অফিসের মতো বদলে ফেলেছেন কাজের ক্ষেত্রও! যদি তা-ই হয়, শুরুটা তো করতে হবে আবারও নতুন করে। আগের শেখা বিষয়গুলোর বেশির ভাগই হয়তো কাজে লাগবে না, সবকিছু শিখে নিতে হবে নতুন করে। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের সহযোগিতা দরকার হবে আপনার। 

কর্তাদের করণীয়
নতুন কাউকে স্বাচ্ছন্দ্যে কর্মক্ষেত্রে সবার সঙ্গে মিশতে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করার জন্য কর্তাব্যক্তিদের কিছু করার আছে। অন্যদের সঙ্গে নতুনদের প্রথম পরিচয়টা করিয়ে দেওয়া উচিত কর্তাদেরই। তিনি তাঁর যোগ্যতা এমনভাবে তুলে ধরতে পারেন, যাতে সবার মধ্যে তাঁকে নিয়ে একটা ভালো ধারণা আসে। কাজে উৎসাহের খোরাকও জোগাতে পারে এটি। নতুন যোগ দেওয়া কর্মীর কাজ বুঝিয়ে দেওয়া, সেই সঙ্গে দরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও কর্তাদের। প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা, গঠন, কার্যবিধি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়েও একটি ভালো ধারণা দিয়ে কর্তারা নতুন কর্মীর কাজের জায়গাটা সহজ করে দিতে পারেন।

লেখক: শিক্ষা ও ক্যারিয়ারবিষয়ক গ্রন্থপ্রণেতা ও লেখক
Collected from 
আজকের পত্রিকা



Related Posts

image

নিজ গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার নাসিম

19/04/2024

Inspiration

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ। তিনি হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ হতে বিবিএ (স্নাতক), এমবিএ (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রতি তিনি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার গ্রামের ম

image

যে ৫ অভ্যাস আপনাকে সফল করবে

10/03/2024

Inspiration

সফল হওয়ার জন্য আপনাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। কারণ নিজেকে সফলতার উচ্চ শিখড়ে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন যথার্ত পরিশ্রম। এছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। যা-ই করুন না কেন, কিছু ছোট ছোট কাজ আপনাকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। সেস

image

কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সহজ উপায়

06/03/2024

Inspiration

একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি যেকোনো কাজ আরও ভালোভাবে পারফর্ম করার যোগ্যতা রাখে, ঠাণ্ডা মাথায় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং শক্তিশালী পেশাদার সম্পর্ক স্থাপন করে। তাই আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বিকল্প নেই। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত