বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারী শুরু হলে তার রেশ ধরে আসে অর্থনৈতিক সংকট। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার পালে আরো হাওয়া দেয়। ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বহু কোম্পানিকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যয় কমানো, কর্মী ছাঁটাই, অফিস ছোট করে ফেলা ইত্যাদি। ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত অনেক বড় ও বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানও কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অ্যাপলের অবস্থান ভিন্ন। এখন পর্যন্ত বড় কোনো ছাঁটাইয়ে যায়নি প্রতিষ্ঠানটি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির বিষয়ে অ্যাপলের কৌশলগত অবস্থান অন্যদের তুলনায় ভিন্ন। সেই সঙ্গে এর সিইও টিম কুকও দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন পরিস্থিতি। তার কৌশল মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে তা খাতটির জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
গত শুক্রবার সকালে ঘুম ভেঙে যখন ইন্টারনেটের জগতে চোখ রাখলেন বিশ্বের মানুষ, তখনই দেখতে পেলেন মন খারাপ করা একটি খবর। আর সেটি হলো সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা। সেদিন বিশ্বজুড়ে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে টুইটার, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, স্ন্যাপচ্যাটের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। মূলত ক্রমবর্ধমান সুদের হার ও চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাচাহিদা কমে গেছে। সেই সঙ্গে সংকুচিত হয়ে এসেছে বিজ্ঞাপনের বাজার। যার কারণে এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম প্রযুক্তি খাতের বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। কোম্পানিটি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। সিইও টিম কুকের নেতৃত্বে কয়েক বছর ধরেই ধীরে চলো নীতি মেনে চলছে অ্যাপল। একটি নির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে পথ চলছে কোম্পানিটি। যার কারণে অর্থনৈতিক সংকট বা মন্দার মুখেও বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্তে যেতে হয়নি অ্যাপলকে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষক ড্যান ইভস বলেন, ‘আমি মনে করি অ্যাপল এখনো উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। এ অবস্থায় ৭ থেকে ১০ শতাংশ ছাঁটাই হবে বলেও আমি মনে করি না। বরং অ্যাপল এখনো আরো বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করবে, যেন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টিই না হয়।’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যাপলে মাত্র ১০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা একই সময়ে অ্যামাজন, মেটা বা গুগলের নিয়োগের তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে অ্যাপলে কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার।
প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে অন্যতম কর্মতত্পর হিসেবে টিম কুককে চিহ্নিত করেছেন আরেক বিশ্লেষক জেন মুনস্টার। বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপলের ব্যবসার কৌশলও অনেক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। বিজ্ঞাপন নয়, এর প্রাথমিক ব্যবসা হলো সেলফোন, ট্যাবলেট পিসি ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার বিক্রি করা। আবার ক্রেতাকে সরাসরি পণ্য দেখে কেনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ফিজিক্যাল স্টোরের সংখ্যাও অ্যাপলের কম। বিশেষ করে অ্যামাজনের যেখানে ওয়্যারহাউজসহ বিরাট নেটওয়ার্ক রয়েছে, সেখানে অ্যাপলের পদচারণা তুলনামূলক অনেক কম স্থানে। এছাড়া পণ্য উৎপাদনেও তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে আউটসোর্সিং ব্যবস্থা চালু রেখেছে অ্যাপল, তাদের নিজস্ব কোনো কারখানা নেই। ফলে স্মার্টফোনের চাহিদা চক্রে তাত্ক্ষণিক যে পরিবর্তন এসেছে সেটির প্রভাবও তেমন পড়েনি কোম্পানিটির ওপর।
টিম কুকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল হলো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ না করা। সরাসরি মূল ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কোনো খাতেও বিনিয়োগ করে না অ্যাপল। টিম কুককে দারুণ দূরদর্শী ও সতর্ক বলে উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সে কারণে অনেক ঝুঁকি থেকে বেঁচে গিয়েছেন অ্যাপলের কর্মীরা।
তবে একেবারেই যে ছাঁটাইয়ে যায়নি অ্যাপল, তেমনও নয়। চলতি বছরই জানা যায়, অপ্রয়োজনীয় কিছু কর্মী ছাঁটাই করেছে অ্যাপল। যার বেশির ভাগই অ্যাপল স্টোরের বাইরের। মূলত তৃতীয় পক্ষের হয়ে অ্যাপলের জন্য বিভিন্ন স্টোরে কাজ করতেন, এমন কর্মীদেরই সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সাধারণত ক্রেতার বাড়তি চাপ সামাল দিতে এসব কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হতো। তাদের মধ্যে যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেগুলো আর নবায়ন করা হয়নি।
Collected From Bonik Barta