মাত্র ১৫ বছর বয়সেই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি (ইউএমবিসি) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ‘ডেটাবেজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ২০২২-২৩’ স্নাতক (সম্মান) সমমানের মাইক্রোমাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহীর আলী রুশো।
সেই সঙ্গে রুশো গত ১৮ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলরাডো বোল্ডারে ৯০ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই এই সুযোগ পেয়েছেন।
এই ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি নিতে দুই ধরনের পদ্ধতিতে ভর্তি হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। এর একটি আন্ডারগ্রাজুয়েট হিসেবে সিজিপিএ’র ভিত্তিতে এবং আরেকটি দক্ষতার ভিত্তিতে। মূলত যারা মাইক্রোমাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, তারা দক্ষতার ভিত্তিতে অল্প বয়সেই ভর্তির সুযোগ পান, যেটি পেয়েছেন বাংলাদেশের ছেলে রুশো।
শুধু এটিই নয়, রুশো তার অর্জন দিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে তার বয়সের কারণে। কেননা এতো অল্প বয়সেই তিনি দেশ-বিদেশের জার্নালে ২৫টির বেশি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি নিজের সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অলিম্পিয়া গ্লোবাল লন্ডন রাউন্ডে রুশো এবং তার দল একটি স্বর্ণপদক ও একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতা(আইএমসি) ২০২২ আয়োজনে চতুর্থ বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতেন। আইএমসি হলো বিশ্বের স্কুল বয়সী বিভিন্ন গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত ভিত্তিক একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতা। তার আগে ২০২১ সালে অনলাইন আইএমসিতে ৯৬টি দেশের নয় শতাধিক স্কুলের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখানেও ভালো করেছিলেন রুশো।
রুশোর বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক। ছেলের ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান আর গণিতের প্রতি ঝোঁক দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন। প্রথম দিকে নিজেরা বিশ্বাসও করতে চাননি, কিন্তু যখন দেখেন একের পর এক জটিল এবং উচ্চ পর্যায়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছে তাদের ছেলে, তখন তারাও এগিয়ে আসেন। হাতে তুলে দেন তার পছন্দের বইপত্র।
তার বাবা রাজধানীর সেন্ট্রাল মেডিক্যাল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, রুশো যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। সে সময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল, সেটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। একটা পর্যায়ে আমি খেয়াল করি, সে আমার ল্যাপটপে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথের ভিডিও। আর সবগুলোই তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের।
এরপর আমি একদিন তাকে বলি, বাবা তুমি যেসব ভিডিও দেখো সেসব কি তুমি বোঝো, নাকি শুধু দেখো? তার উত্তর ছিল- বাবা আমি বুঝি। তারপর তার সঙ্গে কয়েকদিন আমি নিয়মিত কথা বলি। দেখলাম আসলেই সে বোঝে, যোগ করেন মোহাম্মদ আলী।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারতো।
রুশোর মাও চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, তাকে অনেক ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পড়ালেখার প্রতি ভীষণ ঝোঁক। আমার জন্য যখন কোনো বই কিনেছি, তখন তার জন্যও আমি কিনেছি বই। আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কি চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় তার চাওয়ার থেকে আমাদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়।
রুশোর ইচ্ছে পদার্থবিদ্যায় নিজের দখল আরও বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কাজ করার। জানান, সেই লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি।
Collected From Risingbd