Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

‘সফল হতে চাইলে লেগে থাকার বিকল্প নেই’

image

যশোদা জীবন দেবনাথ। দোকানের কর্মচারী, মেরামত কাজের সহযোগী ও টিউশনি করে কেটেছে শৈশব। তবুও হাল ছাড়েননি। বর্তমানে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক। তাকে আরো পরিচিতি এনে দিয়েছে টেকনোমিডিয়া লিমিটেড ও প্রোটেকশন ওয়ান প্রাইভেট লিমিটেড। দেশের এটিএম মেশিনের সিংহভাগ সরবরাহ করছে তার প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তিনি সাফল্য, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাওছার আলী। 

রাইজিংবিডি: ব্যক্তিগত জীবনে কোন বিশেষ ঘটনা আপনাকে প্রভাবিত করেছে?


যশোদা জীবন দেবনাথ: আমার ছোটবেলার ইতিহাস সুখকর নয়। বাবা কৃষিকাজ করতেন। অনেক সংগ্রাম, যুদ্ধ করেই পার করেছি প্রতিটি দিন। মুক্তিযুদ্ধে বাবা গুলিবিদ্ধ হয়। তখন আমার বয়স মাত্র ৩ মাস। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ওরা। তখন ৬ দিন পায়ে হেঁটে আমার পরিবার ভারত চলে যায়। শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘ নয় মাস কাটানোর পর বাংলাদেশে এসে দেখি বাড়ি ঘরের কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর আগে পাকসেনারা আমার পিতামহকেও গুলি করে হত্যা করে। আমার স্কুল জীবনে দারিদ্রতার চরম সীমা খুব কাছে থেকে দেখেছি। গ্রামের পাশে জনতা স্টোরে আড্ডা দিতাম। সেখানে বন্ধুদের অনেক বলেছি একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। মানুষের অর্থবিত্ত না থাকলে শুভাকাঙ্ক্ষীরাও পাশে থাকে না। অনেক পরিচিত মুখ মুহূর্তেই অপরিচিত হয়ে ওঠে। তবে জনতা স্টোরে স্বপন নামে আমার এক বন্ধু ছিল। সে কর্মচারীর কাজ করতো। তার সহযোগিতায় আমি সেই দোকানে কাজ করার সুযোগ পাই। দোকান মালিকের বাড়িতে সকলের খাওয়া শেষ হলে টেবিল পরিষ্কার করে সেখানেই আমি ঘুমাতাম। সকালেই আবার দোকান খুলতাম। এভাবেই সময়ের সাথে আমিও বুঝতে শিখি জীবনকে। পরবর্তীতে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে আমি ভর্তি হই। সে সময় কোতোয়ালি থানার ওসি মোস্তফা কামাল আমার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। জগতে কিছু মানুষ থাকে যারা অপরের প্রয়োজনে নিজের সর্বস্ব দিতে পিছপা হন না। তিনি সেই বিরল মানুষদের একজন। 

রাইজিংবিডি: সংশয় আর সংগ্রামের এতটা পথ পাড়ি দিলেন, কে পর্দার আড়াল থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?  

যশোদা জীবন দেবনাথ: অনুপ্রেরণা বলতে আমার সেই শৈশবের ছায়া মোস্তফা কামালকেই বুঝি। এ ছাড়াও কিছু বন্ধু পাশে থেকেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি আমার বাবা মায়ের আশীর্বাদ গ্রামের ছোট্ট যশোদাকে সিআইপি যশোদা দেবনাথে পরিণত করেছে। বাবার মাত্র ১৫০০ টাকা আয়ের অর্ধেকই আমাকে দিয়ে দিতেন। যমুনা সেতু বানানোর সময় আমি সেখানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। জীবনে অনেক সীমাবদ্ধতা কাছে থেকে দেখেছি। মানতে ও মানিয়ে নিতে শিখেছি।

রাইজিংবিডি: কীভাবে সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল? 

যশোদা জীবন দেবনাথ: ২০০৭ সালে আইটি ফার্ম করে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে কম্পিউটার সরবরাহ করি। জুলাইতে গিয়ে বিল সাবমিট করলাম। কিন্তু দেখতে পেলাম ফান্ডে টাকা নেই। বিল পেতে আমাকে আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। একদিকে সকলের থেকে ধার-দেনা করে টাকা নিয়ে কম্পিউটার সরবরাহ করায় তাদের বকেয়া দেবার চাপ, অপরদিকে মানসিক বিষণ্ণতা আমার চলার পথকে স্থবির করে দিয়েছিল। এক রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে একটি মন্দিরে আমি বসে ছিলাম। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করছিলাম। হঠাৎ এক পাগল এলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- যা আছে আমাকে দিয়ে দাও। আমার পকেটে থাকা শেষ দুটি ৫০০ টাকার নোট তাকে দিয়ে দিলাম। তখন আমার পরের দিন সকালে কীভাবে চলবে জানা ছিল না। মুহূর্তেই তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। 

সব কিছু আমার কাছে স্বপ্ন মনে হয়েছিল। এরপর ভয় পেয়ে আমি বাসায় ফিরতে লাগলাম। ফেরার পথে পিছন থেকে আমার নাম ধরে ডেকে অন্য এক ভদ্রলোক আসলেন। আমাকে কিছু টাকাও দিলেন। এরপর তিনিও হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন। পরদিন সকালে বাসায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে একটি মেইল পেলাম। আমি সরাসরি যোগাযোগ করলাম। তারা আমাকে কাজ করার সুযোগ দিলো। আর পিছনে 
ফিরে তাকাতে হয়নি।

রাইজিংবিডি: সামনের পরিকল্পনা জানতে চাই?

যশোদা জীবন দেবনাথ: আমি বর্তমানে অনেকগুলো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। যেগুলোতে আমাকে আইসিটি মিনিস্ট্রি সাহায্য করছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৪ হাজার এটিএম মেশিন আমার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে এখনো এই সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমটা আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। একটা শহরের মানুষ যদি ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সুবিধা পেতে পারে তাহলে একটি গ্রামের মানুষও সেটা পাবে। আমি গ্রামের মানুষের সাথে কানেক্টিভিটি তৈরি করার জন্য এটিএমকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছি, এমনকি কাজও শুরু করেছি। 

রাইজিংবিডি: আমরা জেনেছি একাধিকবার পুলিশের পাশে আপনি দাঁড়িয়েছেন। এই মানসিকতা কীভাবে আপনার মধ্যে এলো?

যশোদা জীবন দেবনাথ: আগেই বলেছি আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যক্তি একজন পুলিশ অফিসার যিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। সেখান থেকেই বিষয়টি হয়েছে।   


রাইজিংবিডি: আপনি লেখক। প্রথম বই প্রকাশের স্মৃতি জানতে চাই?

যশোদা জীবন দেবনাথ: ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনার আতঙ্ক শুরু হয়। গতিশীল জীবন থেকে ঘরবন্দি এক অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়ে জীবন। সে সময়ে আমার মানসিকতা পরিবর্তন করতে লেখালেখি শুরু করি। আমি প্রথমে আমার নিজের সম্পর্কে লেখা শুরু করলাম। প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখতাম। পাশাপাশি নিয়মিত ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতাম। বন্ধুরা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা দিতো। একদিন ইন্ডিয়ার এক বন্ধু আমার লেখা পান্ডুলিপিটি বই আকারে ছাপানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এভাবেই শুরু। 

রাইজিংবিডি: আপনার চরিত্রের শক্তিশালী দিক কোনটি বলে মনে করেন?

যশোদা জীবন দেবনাথ: এক কথায় বলতে গেলে আত্নশক্তি। আমি সকালে কাজে বের হই, কিন্তু সন্ধ্যা অবধি কাজ করার পড়েও মনে হয় আমি এখনই কাজে এসেছি। ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হলে কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না।  

রাইজিংবিডি: তরুণদের জন্য পরামর্শ?

যশোদা জীবন দেবনাথ: চাকরি একটা বদ নেশা। কারো যদি সৎ ইচ্ছা থাকে তাহলে সে চাকরির পেছনে ঝুঁকবে না। ব্যবসা করবে অথবা ফ্রিল্যান্সিং। অনেক কাজ করার সুবিধা আছে। একটা চাকরি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন পায়। অপরদিকে ফ্রিল্যান্সিং করে ১ লাখ টাকার উপরে আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিন্তু নিজের স্বাধীনতাও রয়েছে। সুতরাং আমি সবসময় তরুণদের চাকরির পেছনে দৌড়াতে নিষেধ করি। 
Collected From Risingbd



Related Posts

image

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৪ উপায়

24/09/2024

Inspiration

আপনি কি ইদানীং কাজ করতে গিয়ে হাঁপিযে ওঠেন? সব সময় ক্লান্ত লাগে আর অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন? এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়তে শুরু করেছে আপনার কাজের ফলাফলেও? বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে চাপ কোথায় নেই? তাই কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভ

image

What to Consider When Setting Career Goals

24/08/2024

Inspiration

While the everyday tasks at your job obviously need to get done, it’s also just as important to have long-term career goals—whether it’s because you are looking to eventually move up the corporate la

image

3 keys to unlock the power of employees

24/08/2024

Inspiration

In your workplace, employee culture is your only sustainable competitive advantage. To win today, you need people who can react quickly and make decisions autonomously. Your culture — the shared values and shared pr