সফল জুটি থেকে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। এ কোনও গল্প নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা দুজন তরুণ-তরুণী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থীর মো. রেজুয়ান রহমান (রমি) ও ফাওজিয়া খান সফল জুটি। তারা হয়ে ওঠেছেন সফল উদ্যোক্তা।
রেজুয়ান রহমান (রমি) ও ফাওজিয়া খান (রাইসা) দুজন দু’জেলার বাসিন্দা। দুজনেই পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। একই বিভাগ হওয়ায় পরিচয়টা ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর কথা-বার্তা, বন্ধুত্ব এবং প্রেম আসে তাদের জীবনে। প্রেমের শুরুটা ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ।
ব্যবসার শুরুটা ২০১৮ সাল থেকেই। মূলত ‘কাঠের পুতুল’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছিলো অনলাইন-ভিত্তিক এক টি-শার্ট’র ব্যবসার জন্য। মাত্র ৫ হাজার টাকার টি-শার্ট এনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রায় পুরোটাই লস হয়ে গিয়েছিল।
রমি এবং রাইসা দুজনেই পরবর্তীতে সতর্ক হয়ে যান। ব্যবসায় অগ্রসর হওয়া জন্য দুজনেই সঠিক পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা লকডাউনের জন্য দুজনকেই নিজ নিজ বাসায় চলে যেতে হয়। কিন্তু তখনও তারা থেমে থাকেননি। রমির বাসা টাঙ্গাইলে হওয়ায় সেখানকার তৈরি শাড়ি নিয়ে কাজ করার কথা তাদের দুজনেরই মাথায় আসে। রাইসা অনেক জোর দিয়ে আবার পুনরায় এটা নিয়ে কাজ করার কথা বলে। তাই আশা হারানোর পরও নতুনভাবে ‘কাঠের পুতুল’র যাত্রা শুরু হয়।
‘কাঠের পুতুল’ নাম দেওয়ার কারণ, এটি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িত একটি বস্তু। যেটি কালের আধুনিকতার প্রায় বিলুপ্ত। তাদের কাজের মাধ্যমে এই বিলুপ্ত সাংস্কৃতিক উপকরণটাকে পরবর্তী প্রজন্মকে চিনিয়ে এবং মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই নাম।
ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে রমি বলেন, আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল বিজনেস করার। আসলে কিছু বিষয় আছে যা আপনাকে টানবে। বিজনেসটা আসলে আমাকে এভাবেই টেনে নিয়ে গেছে। আর রাইসার প্রথম থেকে সাপোর্ট ছিল, ওর আইডিয়াতেই শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যখন দেখতাম বন্ধু-বান্ধবরা টিউশনি করাচ্ছে, তখন আমারও ওদের মতো নিজের ইনকাম করার খুব ইচ্ছে জাগত। এটা হবে আমার একান্ত নিজের উদ্যোগে ভিন্ন কিছু।
রাইসা জানান, ব্যবসার শুরুতে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে শুরু করে। সবকিছু ভালভাবে পরিচিত না থাকার কারণে শাড়ি কালেকশন এবং ডেলিভারি দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হতো। আশপাশের অনেক লোকজনই শুরুতে অনেকে ঠাট্টা-তামাশা করতো। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই আবার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে আসে।
তিনি আরও জানান, বন্ধু-বান্ধবী সবসময় তাদের পাশে থেকেছে। বিশেষ করে শিক্ষকরা সবসময় আমাদের সাপোর্ট করেছে। পাশাপাশি পরিবারের মানুষদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।
২০২১ সালের ১৭ জুন বিয়ে হয় রমি-রাইসা দম্পতির। শুরুতে দুজনের পরিবার থেকেই কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। পরবর্তীতে তাদের দুজনের দৃঢ় মনোবল এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের প্রেম পূর্ণতা পায়।
বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি ছাড়াও ক্যাম্পাসে তাদের একটি দোকান রয়েছে, যেটা ২০২১ সালের মার্চে নেওয়া হয়েছে। তখন লকডাউন থাকার কারণে ৭ নভেম্বর ২০২১ থেকে আউটলেট ওপেন করা হয়েছে। ‘কাঠের পুতুল’ নামক দোকানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেইট সংলগ্ন রাস্তার পাশে অবস্থিত। বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন মিলিয়ে তাদের প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মতো আয় হয়। যার মধ্যে অনলাইনেই বেশি টাকা উপার্জিত হয়। আর বিভিন্ন উৎসবের মৌসুমে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
ভবিষ্যতে তারা ব্যবসাটিকে বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে চালু করতে চান। পাশাপাশি অনলাইন পেজকে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে রমি-রাইসা জুটির।
Collected From Risingbd