বাংলাদেশ গ্রাসরুট ওমেন এন্টারপ্রেনিওয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মৌসুমী ইসলাম বলেছেন, শত বাধা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তিরে বিস্ময়ের যুগে নারীরা এগিয়ে চলেছে। তিনি মনে করেন, পুরুষের পাশাপাশি সব সময় সবদিক থেকে এগিয়ে থাকছে নারীরা। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে আমাদের চারপাশ। বদলে যাওয়ার সময়কে সঙ্গে নিয়ে আধুনিক উদ্ভাবন, প্রযুক্তির প্রসার এবং নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতিটি মহল এখন সচেষ্ট। আর এই কাজে পুরুষের পাশাপাশি সব সময় সবদিক থেকে এগিয়ে থাকছে নারীরা। আধুনিকতার এই যুগে বেশ কিছু সেক্টরে নারীরা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও তা পুরোপুরি সামাল দিচ্ছেন প্রযুক্তির মাধ্যমে। তথ্যপ্রযুক্তিরে বিস্ময়ের যুগে নারীদের অগ্রগামীতা পাল্টে দিচ্ছে পরিস্থিতি। তাইতো এবারের নারীর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিজিটঅল: ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি’, অর্থাৎ ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নারীরা তাদের সব কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে সমাধান করতে সক্ষম হন। সে জন্য, তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সমুন্নত ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাস রুট উইমেন এন্টারপ্রেনিওর্স বাংলাদেশ কাজ করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ইন্টারনেট অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ইন ২০০০ এবং তথ্যপ্রযুক্তির এযুগে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক সময় সমতার পার্থক্য বুঝতে পারি না। সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে স্বত্বের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বত্বের জন্য ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ, যাতে করে সমতা এবং ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করা যায়।
তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে, উদ্ভাবনী সমাধান, নারী ও মেয়েদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য নেতা, উদ্যোক্তা এবং পরিবর্তনের এজেন্ট হতে সাহায্য করা। এর ফলে সব উন্নয়নের চাবিকাঠিতে নারীদের সম্পৃক্ততা থাকবে।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘মেয়েদের শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্য এবং বাল্যবিবাহ হ্রাসে ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সম্পদের ব্যবহার উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। পরিবেশগত ক্ষতি এবং ভূমি খণ্ডন কমাতে সহায়তা করতে পারে। সে সঙ্গে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করুন।’
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পৃথিবীজুড়ে যে ধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে, তার মূল অংশটুকুকে সঠিকভাবে ধরতে পেরেছে। তাইতো নজর দেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে। সরকারের প্রথম দিক থেকে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া যাতে ছড়িয়ে যেতে পারে, সেজন্য যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নারীদের। সেজন্য আমরা দেখতে পেয়েছি— বর্তমানে উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও তথ্য প্রযুক্তির প্রসার। নারী-পুরুষ সবার মাঝে যাতে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং এ থেকে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হওয়া যায়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট।’
মৌসুমী ইসলাম উল্লেখ করেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের ইন্টারনেট অব থিংকসের মাধ্যমে মূলধারার অর্থনীতিতে যোগ করার জন্য সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে নারীরা সাগ্রহে অংশগ্রহণ করছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এখন ৩০ থেকে ৪৪ ভাগ নারীদের অংশগ্রহণ আশা জাগাচ্ছে। সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৫) অর্জনসহ নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারছে।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘তৃণমূলের নারীদের উন্নয়ন ও তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে সমুন্নত ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট ওমেন এন্টারপ্রেনিওয়ার্স বাংলাদেশ- এজিডব্লিউইবি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকে নারীরা যাতে তাদের সব কার্যক্রম তৃণমূলে সমস্যা সমাধান করে সামনে এগিয়ে আসতে পারে, তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ত হয়ে পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সংগঠনের নারীরা মূল ধারার বাণিজ্যে নিজেদেরকে সংযুক্ত করতে পেরেছে। ব্যবসায়িক নানা কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে জড়িত রেখে এরই মধ্যে সাফল্য এসেছে প্রায় শতভাগ।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে সরকার নারীদের উন্নয়নের জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি করেছে, তাতে তৃণমূলের নারীরা সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করছে। শুধুমাত্র স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ কিংবা ছোট্ট একটি ডিভাইসের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করতে নারীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহারে বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে নারীরা তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে ডিজিটালি বেগবান করতে পারছে। তাইতো এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়কে আমি স্বাগত জানাই। ২০৩০ ও ২০৪১ এর মৌজা পরিকল্পনা রয়েছে— তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে এবারের নারী দিবস প্রোগ্রামে ভূমিকা পালন করবে।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘বিচার কিংবা সংখ্যার মানদণ্ড দিয়ে আপনি যেকোনও কিছু মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারবেন না। যেকোনও বিষয়ের সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য সবচেয়ে বড় জরুরি প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে এর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার। এ দুটির সমন্বয় করতে পারলে তৃণমূল পর্যায়ে যে ধরনের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে, তার পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে। তবে, প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো নিজেদের পণ্য বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেলেও, দাম নিয়ে যে ধরনের অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়, তা কমছে না।’
তিনি বলেন, ‘সঠিক ব্যবহার ও প্রযুক্তির সহায়তায় তৃণমূলের নারীদের এগিয়ে চলাটা আরও সুদৃঢ় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঘর থেকেই শুরু হয় যাত্রা। আর ঘরের যাত্রা পথটি যত মসৃণ হবে, ততই দেশের অর্থনীতি আরও বেগবান হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, আমি সবাইকে বলবো— আসুন, আমরা আজ জেন্ডার বৈষম্য ও নারীর ক্ষমতায়নকে আরও টেকসই আগামীর জন্য ত্বরান্বিত করি এবং বিশ্বের অর্থনীতিসহ একটি সবুজ পৃথিবী গড়ি।
Collected From Banglatribune