Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

নারী উদ্যোক্তা লাইজুর গল্প

image

দরিদ্র পরিবারের লাইজু বেগম (৩৭)। বয়স যখন ১৮ বছর তখন বিয়ে করেন। বিয়ের ৫ বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হাবিবুর রহমান মারা যান। স্বামী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে তিন বছরের কন্যাশিশুকে নিয়ে কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। তখন স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি আশ্রয় নেন তিনি।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের পারআমলাগাছী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী লাইজু বেগম। 


শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে এসেও হতাশায় পড়েন লাইজু। বাবার পরিবারে বেকার অসহায়ত্ব জীবন চলছিল তার। এমন অবস্থায় ২০১৯ সালে গণ উন্নয়ন এনজিও’র ‘সীপ’ প্রকল্পের কর্মীরা তার এলাকায় একটি মিটিং করেন। সেখান থেকে লাইজু প্রকল্পের কার্যক্রম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্য হন। ১৫ জন সদস্যর সমন্বয়ে একটি দল গঠন করেন। দলের নাম রাখেন ‘পার আমলাগাছি উৎপাদক দল’। সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে লাইজু দলের উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন।

২০২০ সালে দলের সব সদস্য ৩৫ দিনব্যাপী ‘সীপ’ প্রকল্পের আওতায় শতরঞ্জি উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। শতরঞ্জির প্রশিক্ষণ শেষে দলের পক্ষে প্রকল্প থেকে ব্যবসার মূলধন হিসেবে নগদ ৫০ হাজার টাকার একটি চেক গ্রহণ করেন লাইজু। একই সঙ্গে শতরঞ্জির মেশিন, সুতা, ফিতা, ও কাচি, পিড়া ও পাঞ্জা ইত্যাদি উপকরণও গ্রহণ করেন। ওই প্রকল্প থেকে ২০২২ সালে ১৫ দিনব্যাপি শতরঞ্জি উৎপাদন বিষয়ে রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। এরপর ওই এনজিও থেকে দেওয়া হয় তাকে নগদ টাকা। তা দিয়ে আরও সুতা ক্রয় করে মেশিন, সুতা দিয়ে শতরঞ্জি পণ্য উৎপাদান ব্যবসা শুরু করেন এই উদ্যোক্ত। তৈরী করেন পাপোস, জায়নামাজ, টেবিলম্যাট, ফ্লরম্যাট এবং ওয়ালমেট। 


লাইজু তৈরি করা এসব পণ্য বাজারজাত করেন। এরপর থেকে আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ইতোমধ্যে লাইজু উদ্যোক্তা হিসাবে তার ব্যবাসা সফলভাবে পরিচালনা করছেন। পণ্যগুলো বিভিন্ন বাজারে ও মেলায় গিয়েও বিক্রয় করেন তিনি। এছাড়াও এসব পণ্য তৈরির পরে গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্রেতারা এসে পাইকারি ও খুচরা দামে কিনে নিয়ে যান। তৈরিকৃত পাপোস বা শতরঞ্জি পণ্যে দেশের বিভিন্ন শহর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিক্রয় করা হচ্ছে। এখন সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রতিমাসে লাইজু ও তার দলের সদস্যরা পাপস, জায়নামাজ, টেবিলম্যাট, ফ্লরম্যাট বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। 

লাইজু বেগম বলেন, আগে আমার পরিবার চালাতে খুবেই কষ্ট হতো। বিশেষ করে আমার মেয়ের পড়ালেখার খরচ ও আমার সাংসারিক খরচ চালানো খুবই দুঃসাধ্য ছিল। বর্তমানে আমার মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। ওর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শতরঞ্জির কাজ শেখার পর এই কাজ করে যাচ্ছি। এখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়ে মেয়ের পড়ার খরচ, সাংসারিক খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। 

লাইজু আরও বলেন, শতরঞ্জির পণ্য বিক্রয়ের আয় দিয়ে আমাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আমাদের দেখাদেখি অনেক দরিদ্র নারী এই পেশায় আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমিও আমার দলের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ ও কাজ শেখাতে সাহায্য করে থাকি। 

গাইবান্ধার নশরৎপুরের গণ উন্নয়নের সীপ প্রকল্পের মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা ছামচুল আলম বলেন, সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে শতভাগ দেশি কাঁচামাল, ভিন্ন ধরনের রঙ্গিন ও মকমল সুতা দিয়ে শতরঞ্জি তৈরি করা হচ্ছে। এর সৌন্দর্য দেখার মতো। এখন লাইজুর শতরঞ্জি তৈরি করে অনেকটা স্বাবলম্বী। তার কাজে প্রতিবেশী নারীরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
Collected From Risingbd



Related Posts

image

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৪ উপায়

24/09/2024

Inspiration

আপনি কি ইদানীং কাজ করতে গিয়ে হাঁপিযে ওঠেন? সব সময় ক্লান্ত লাগে আর অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন? এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়তে শুরু করেছে আপনার কাজের ফলাফলেও? বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে চাপ কোথায় নেই? তাই কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভ

image

What to Consider When Setting Career Goals

24/08/2024

Inspiration

While the everyday tasks at your job obviously need to get done, it’s also just as important to have long-term career goals—whether it’s because you are looking to eventually move up the corporate la

image

3 keys to unlock the power of employees

24/08/2024

Inspiration

In your workplace, employee culture is your only sustainable competitive advantage. To win today, you need people who can react quickly and make decisions autonomously. Your culture — the shared values and shared pr