Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Career Information

উচ্চশিক্ষা : দেশে না বিদেশে

image

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হয়েছে ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। এতে পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসেবে প্রায় প্রতি ৬ জনে ১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এদের বড় অংশই উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। একটি অংশ আবার উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাবে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে।

আমাদের সমাজে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে উচ্চশিক্ষাকে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও সামাজিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যেও অনেকে উচ্চশিক্ষা সনদ অর্জনে সচেষ্ট। শিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন; এই কথাটি এখন কাগুজে বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের দিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন প্রজন্ম পড়াশুনার বিষয় ঠিক করে থাকে। প্রায় সকলেরই পড়াশোনার উদ্দেশ্য সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা। আসলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কি সবার জন্যই জরুরি? মোটেই না। আপনি যত বেশি উচ্চশিক্ষা নেবেন, ততবেশি বেকার থাকার সম্ভাবনা বেশি! যদি না আপনার পড়াশুনা চাকরিবান্ধব হয়, জীবন ঘনিষ্ঠ হয়।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। সেখানে প্রথমে আছে পাকিস্তান আর তৃতীয় অবস্থানে ভারত। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে পিয়ন পদে চাকরির আবেদন এই অঞ্চলের পরিচিত ঘটনা। আমাদের সমাজে এখনকার প্রবণতা হচ্ছে হয়—বিসিএস না হয় বিদেশ। এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় আছে; বিশেষ করে এই দেশে যারা পড়াশোনা করেছেন। এসএসসি বা এইচএসসির পর পারিবারিক প্রয়োজনে তরুণদের একটি অংশ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে। কেউ আবার গ্রাজুয়েশনের পরই দেশে চাকরিতে যোগদানের চেষ্টা না করে বিদেশে পাড়ি জমান উচ্চশিক্ষা বা চাকরির এই দুই প্রক্রিয়ায়। এ কারণেই সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অনেক আসন ফাঁকা থাকায় নতুন করে ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

উচ্চশিক্ষা কারা নেবে: মেধাবীরাই উচ্চশিক্ষা নেবে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে এটা সর্বজনীন হয়ে গেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৯টি প্রাইভেট এবং ২টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাই কেউ সামান্য চেষ্টা করলেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিতে পারে। আর এই প্রচেষ্টায় যারা একেবারেই পিছিয়ে পড়েন, তাদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর যাদের কিছু সচ্ছলতা আছে তারা স্বল্প পরিশ্রমে পাস করতে ছুটেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।


বিদেশে উচ্চশিক্ষা : বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো উন্নত বিশ্বের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিশ্চিত করা। খুব ছোট অংশই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা নিয়ে নিজ দেশে ফেরত আসে। এমনকি সরকারি বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করা ব্যক্তিও দেশে ফিরে আসেননি; এমন নজির এই দেশে অগণিত। আর বিদেশে উচ্চশিক্ষার দৌড়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এগিয়ে। এদেশের ইংরেজিমাধ্যমে পড়াশোনা করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্যই থাকে বিদেশে পড়াশোনা করে সেখানে স্থায়ী হওয়া। আর মেধার দৌড়ে এগিয়ে থাকা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা বিভিন্ন বৃত্তি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল। অনেকে মনে করেন, কোনভাবে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেই কাজ শেষ। তারা আসলে ভুলের মধ্যে আছেন। কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রদান ও নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন।

কেউ কোনোভাবে ম্যানেজ করতে পারলেও পড়ালেখার বারোটা বাজে। ফলাফল হিসেবে কম সিজিপিএ নিয়ে হতাশায় ডুবে থাকা বা নিম্নমানের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা। অনেকেই ড্রপ আউট হয়ে পড়াশুনার ইতি টানেন। আর এরা যদি আন্ডারগ্রাজুয়েট স্তরের শিক্ষার্থী হয় তবে তারা সারাজীবন ইন্টারমিডিয়েট পাশই থেকে যান। বিতাড়িত না হলে উন্নত দেশে তারা অনুন্নত জীবনযাপনকেই বেছে নিতে হয়। অথচ কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি অর্জন করতে পারলে এবং সেই সূত্রে ভাল চাকরি পেয়ে উন্নত জীবনযাপন করার সুযোগ পেত। আন্ডারগ্রাজুয়েট স্তরে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই বৃত্তি দেয় না অল্পকিছু সরকারি বৃত্তি ছাড়া। পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে আন্ডারগ্রাজুয়েট স্তরের পড়াশুনার জন্য নিজ দেশে থাকাই ভালো। এছাড়া, এই কম বয়সে বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলেন। তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেকেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিজ দেশে কাঙ্ক্ষিত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কাঙ্ক্ষিত সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। কারণ স্নাতকোত্তর স্তরে এক বছরের টিউশন ফি অনেকের পক্ষে বহন করা যতটা সহজ সে তুলনায় স্নাতক স্তরের ৩/৪ বছরের টিউশন ফি’র খরচ বহন করা ততটাই কঠিন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি দেওয়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করা কঠিন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছুদের পৃথিবীর প্রায় সব দেশই স্বাগত জানায়। পৃথিবীর সর্বত্রই পড়াশুনা করে সেখানে স্থায়ী হওয়ার এই পদ্ধতি নিয়মসিদ্ধ ও প্রচলিত। তবে স্নাতক স্তরের বদলে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনা ও কাঙ্ক্ষিত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নেওয়া অনেক সহজ।

এছাড়া, স্নাতকের পর বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরণের বৃত্তি দিয়ে থাকে। আছে অনেক ধরনের সুযোগ। একজন শিক্ষার্থীর যেহেতু স্নাতক ডিগ্রি থাকে সেহেতু সেই শিক্ষা দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী খণ্ডকালীন কাজ যোগাড় করা অনেকটা সহজ। পড়াশুনা কোন কারণে বিঘ্নিত হলেও ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্টক থেকে যায়।

Collected From Rtvonline



Related Posts

image

প্রাথমিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল

21/04/2024

Career Information

প্রথম ধাপের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণ বিষয়গুলো (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার) থেকে ৪০ শতাংশ প্রশ্ন হয়। মে মাস হিসেবে ধরে ১৭শ বিজেএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় বেশি নেই। নতুন প্রার্থীদের জ

image

সহজে চাকরি পাওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি

06/04/2024

Career Information

পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্নগুলো ডালপালা ছড়াতে থাকে অনার্সে পড়ার সময়। সরকারি চাকরি পেতে হলে অবশ্যই আপনার শারীরিক, মানসিক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। 

image

যে কারণে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া উচিত নয়

06/03/2024

Career Information

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন সেলিব্রিটি হিসাবে প্রভাবশালীদের উত্থান অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যদিও ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সম্ভাবনা লোভনীয় হতে পারে, তবে এটি স্বীকার করা অপরিহার্য যে, এই ক্যারিয়ারের