Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Inspiration

আসক্তি নয়, প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে

image

চলতি মাসের ৩ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ৪১তম বিসিএস’র চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে ২৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এবারের বিসিএস-এ কৃষি ক্যাডারে (কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা) সুপারিশকৃত ১৮৩ জনের মেধাক্রমে প্রথম হয়েছেন মো. জাহিদুর রহমান। এটিই তার প্রথম বিসিএস। বর্তমানে তিনি ঢাকার শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। সম্প্রতি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসাবে যশোর অফিসে যোগদান করেছেন। স্নাতক পাসের পর মেধার স্বাক্ষর রেখে তিনি আরও তিনটি চাকরি (অডিটর, সিএজি-১১ গ্রেড; সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের লেকচারার, কৃষি, ৯ম গ্রেড এবং বিএআরআই’র সাইন্টিফিক অফিসার, ৯ম গ্রেড) পেয়েছিলেন।


জাহিদুরের শৈশব ও বেড়ে উঠা সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে। প্রাথমিকে পড়েছেন ৪৯ নং শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর মাধ্যমিক গ্রামের এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন শিল্প-রসায়ন ও ভারতীয় রসায়নের জনক বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি সি রায়) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আর.কে.বি.কে হরিশ্চন্দ্র কলেজিয়েট ইন্সটিটিউটে। পুরাদস্তুর গ্রামের ছেলে জাহিদুর ঢাকায় আসেন ২০১৩ সালে। শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০১৪-১৫ সেশনে। বিজ্ঞানের প্রতি অনুরক্ত জাহিদুর কৃষিবিজ্ঞানকে ভালোবেসে ফেলেন খুব সহজেই। বাবা মুজিবুর রহমান খান এক সময় প্রবাসী ছিলেন। বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে কৃষি জমি দেখাশুনা করেন। আর মা জায়েদা খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। 

জাহিদুর রহমান তার প্রথম বিসিএস’র সফলতা ও স্বপ্ন নিয়ে মনের আগল খুলেছেন দেশের পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এর কাছে। সঙ্গে ছিলেন মনজুরুল আলম মুকুল।


শৈশব 


শৈশব ও বেড়ে উঠা গ্রামের কাঁদা মাটির সাথে। বেশিরভাগ সময় কেটেছে খেলাধুলার মধ্যে। তবে পড়াশোনা ঠিকমত করতাম।শিক্ষকরা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। পড়াশোনার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা পরিবার থেকে পেয়েছি। তবে অজপাড়া গাঁ-এ বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। রাস্তাঘাট ভাল না। কাঁদা-পানি ঠেলে স্কুল-কলেজে যেতে হত। প্রাইভেট পড়তে যেতে হতো দূরের গ্রামে। বেশ কষ্টকর ছিল।
 
অনুপ্রেরণা 

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নে পিতা-মাতার মলিন মুখই মূল অনুপ্রেরণা। আমার ক্ষেত্রেও পরিবারের আকাঙ্ক্ষা আমাকে সামনে এগিয়ে দিয়েছে। শিক্ষক মায়ের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা আমি সবসময়ই একজন একাডেমিশিয়ান হতে চেয়েছি। ছোট বেলায় কেউ যদি প্রশ্ন করতো ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ আমার উত্তর হতো ‘বিজ্ঞানী হতে চাই’। 

বাস্তবে যখন চাকরির বাজারে প্রবেশ করলাম তখন হুট করেই অচেনা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলাম। প্রস্তুতিকালের শুরুতেই কোভিড মহামারির ধাক্কায় ঝিমিয়ে পড়েছিলাম। তবে যখন আবার পরিবেশ ফিরল তখন আর পেছনে তাকায়নি। কষ্ট করেছি, ফলও পেয়েছি। সত্যি বলতে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকায় শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডারে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গ্রামের ছেলে হওয়ায় ফসল উৎপাদনের জন্যে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, উৎপাদনে ঘাটতি হলে তাদের হাহাকার সবই দেখেছি খুব কাছ থেকে। সেখান থেকে কৃষকের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা জন্মে প্রবলভাবে।

বিসিএস’র পড়াশুনা 

বিসিএস প্রস্তুতির মূল ভিত্তিই হলো ধৈর্য। তিন ধাপের পরীক্ষাটির প্রতি ধাপে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি আর প্রতিবারের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা- সব মিলিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ চাপের। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) প্রণীত নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা হয়। তবে শুধু সিলেবাসের মধ্যে থেকে পড়াশোনা করে বিসিএস-এ বিশেষ ভালো করা সম্ভব নয়। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে নানাভাবে, সাজাতে হবে আধুনিক সব উপায়ে। যাতে কোনও পরিস্থিতিতে দিশেহারা হতে না হয়। বিসিএস’র বই পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে শাণিত করতে হয়। প্রস্তুতির শুরুর দিকে নিজেকে সব বিষয়ের বিস্তারিত জানার প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির এখন হাজারও গাইডলাইন আছে। সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। তবে অনুকরণ না করে নিজের জন্যে সুবিধাজনক পদ্ধতি তৈরি করে নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, বিসিএস দৌড়ে যোগ দেওয়ার মানে হলো নিজেকে হাজারও অনিশ্চয়তায় যুক্ত করা। এখানে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুই-ই আছে। হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সফলতার দেখা কম পেলেও, নিজের চেষ্টা ঠিক পথে আছে কিনা সে বিষয়ে অন্য কারও পরামর্শ নেওয়া ভাল।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের যথার্থ ব্যবহার


বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাল করতে হলে অবশ্যই ডিজিটাল প্লাটফর্মের যথার্থ ব্যবহার জানতে হবে। দেখা যায়, প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এত বেশি সম্পর্কিত যে, কিছুক্ষণ এটা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে চিন্তায় পড়ে যাই; এই বুঝি কত কিছু মিস করে গেলাম। স্মার্ট ফোনে অধিক সময় ব্যয় করা শুধু কেবল সময়ের অপচয়ই নয়, মানসিকভাবে ক্লান্তিকরও বটে। দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী বই থেকে ফোনে বেশি সময় দিয়ে নিজের ক্ষতি নিজেই করেন। স্মার্ট ফোনের লজিক্যাল ব্যবহার জানতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য বা নতুন কোনও বিষয়ে ধারণা নেওয়া বা যোগাযোগের জন্য স্মার্ট ফোনের ব্যবহার অপরিহার্য। যদি কেউ এটাকে ভালভাবে ব্যবহার করে তবে সেটা তার জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। তা না হলে ধ্বংসেরও পথ আছে। আমি অনলাইন পত্রিকা, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট- এই ধরনের বিষয়গুলো পছন্দ করতাম। প্রয়োজনের বাইরে এক মিনিট সময়ও ফেসবুকে দেয়নি। এমনও দিন গেছে ফেসবুকে ফিরে তাকাইনি। কিন্তু দেখা যায়, অনেকে ফেসবুকে দিনে ৩/৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ব্যয় করেন। সেটা প্রয়োজনীয় কিনা দেখতে হবে। কোনওমতেই আসক্ত হয়ে পড়লে চলবে না। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে জনগণের সেবার যে মহান ব্রত রয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পালনের আকাঙ্ক্ষা রাখি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কৃষির ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমার জায়গা থেকে বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে চাই। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপরিধির বাইরেও গবেষণার আকাঙ্ক্ষা আছে এবং নতুন কোনও কিছু উদ্ভাবনে অবদান রাখতে চাই।
Collected From Risingbd



Related Posts

image

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৪ উপায়

24/09/2024

Inspiration

আপনি কি ইদানীং কাজ করতে গিয়ে হাঁপিযে ওঠেন? সব সময় ক্লান্ত লাগে আর অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন? এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়তে শুরু করেছে আপনার কাজের ফলাফলেও? বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে চাপ কোথায় নেই? তাই কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভ

image

What to Consider When Setting Career Goals

24/08/2024

Inspiration

While the everyday tasks at your job obviously need to get done, it’s also just as important to have long-term career goals—whether it’s because you are looking to eventually move up the corporate la

image

3 keys to unlock the power of employees

24/08/2024

Inspiration

In your workplace, employee culture is your only sustainable competitive advantage. To win today, you need people who can react quickly and make decisions autonomously. Your culture — the shared values and shared pr