সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম বন্ধে ইউজিসির নীতিমালা
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক অনিয়ম বন্ধ করতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা’ প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এটি অনুসরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করছে ইউজিসি। তবে এতে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা কমে যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাঁরা এ নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে বাতিল করার আলটিমেটাম দিয়েছেন। এ দাবি না মানলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে আন্দোলে নামবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম বন্ধ করতে নীতিমালা করার জন্য ২০১৯ সালে একটি কমিটি করে ইউজিসি। সম্প্রতি নীতিমালা ইউজিসি অনুমোদন করেছে। অন্যদিকে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এই নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউজিসির নীতিমালায় বিভিন্ন কাজের পারিশ্রমিক ও সম্মানীসহ শিক্ষকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হেয়েছে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘অগ্রহণযোগ্য’ নীতিমালার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষার পরিবেশ সাবলীল রাখতে শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায়, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সর্বসম্মতিক্রমে এই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করেছে। আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল বাতিল করার জন্য ইউজিসির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তা না হলে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে শিক্ষকরা একযোগে ইউজিসির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সই করা বিবৃতিতে এ হুমকি দেওয়া হয়।
অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম সমকালকে জানান, ইউজিসি সব সময়ই আমাদের আস্থার জায়গা। কিন্তু নীতিমালার বিষয়ে শিক্ষক সমাজ খুবই আশাহত। প্রস্তাবিত এই নীতিমালা জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে সরকার ও শিক্ষকদের পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড় করানোর অপতৎপরতা হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের সামঞ্জস্য রাখতে সবাই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছেন। এ মুহূর্তে আর্থিক সুবিধা আরও কর্তনের নীতিমালা করে ইউজিসি শিক্ষক সমাজের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি রাখা হয়নি।
অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে ইউজিসির আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ধারণার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এ ধরনের অনুপযোগী ও অযৌক্তিক নীতিমালা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পৃথক নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র আর্থিক নীতিমালা থাকা সমীচীন।
আপত্তির কারণে রিভিউ কমিটি
অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা নিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আপত্তির কারণে বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের রিভিউ কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ এ কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ এ কমিটির আহ্বায়ক। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এর বাইরে উপাচার্যদের এক, আর্থিক বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও একজন নারী প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিতে কাজ করেছিলেন ইউজিসির দুই সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক মো. আবু তাহের ইউজিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সমকালকে বলেন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা আছে, এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে মতো ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে। এতে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বছর বছর ঘাটতি বাজেট তৈরি করছে। এসব কারণেই আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে এ নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা আছে, যদি কোনো ধারা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে উপাচার্যের মাধ্যমে ইউজিসিতে আপিল করা যাবে। ইউজিসি তা রিভিউ করবে। যেহেতু রিভিউ কমিটি গঠিত হয়েছে, তারা সবকিছু দেখেশুনে বুঝে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।
Collected From samakal