এআই তরুণ চাকরিজীবীদের জন্য আশীর্বাদ না হুমকি
নতুন প্রজন্মের জেন জি (বর্তমান তরুণ প্রজন্ম) সারা বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে ঢুকেছেন বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়। একটা কঠিন সময়ে কর্মক্ষেত্রে ঢোকার কারণে জ্যেষ্ঠ কর্মীদের চেয়ে তাঁদের অনেকেই নানা দক্ষতা অর্জন করা থেকে বাদ পড়েছেন। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে এআই অসংখ্য মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। তাহলে নতুন কর্মজীবন শুরু করা জেন জির কী হবে?
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ক্রেনফিল্ড স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ও চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক গ্রুপের প্রধান এমা পারি বলেছেন, এআই জেন জি কর্মীদের খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, জেন জি কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা আছে। তিনি বলেন, ‘এখনো এ বিষয়ে এআই নিয়ে খুব বেশি পরিমাণে মানসম্পন্ন গবেষণা নেই। আর ঘটনাচক্রে তরুণেরা দৈনন্দিন জীবন ও কর্মক্ষেত্রে এআইকে আরও বেশি গ্রহণ করে এবং মানিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
লন্ডনভিত্তিক প্রযুক্তিবিষয়ক স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস কনসালট্যান্সি ফার্ম টিএফডির প্রতিষ্ঠাতা স্টেফানি ফরেস্ট বলেছেন, জেন জি কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজনীয় করে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা এ প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করেন না। তাঁরা এটিকে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তা অপটিমাইজ করার উপায় হিসেবে দেখছেন।’
স্টেফানি ফরেস্ট বলেন, টিএফডিতে জেন জিই প্রথম কর্মী যাঁরা প্রশাসন, গবেষণা ও ই–মেইলসংক্রান্ত কাজের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই দিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। যেহেতু এআই প্রত্যেকের জন্য নতুন বিষয়, তাই এটি জেন জি কর্মীদের অন্য কর্মীদের চেয়ে ভিন্ন স্তরে রাখে। এতে তাঁরা অর্থপূর্ণভাবে অবদান রাখার সুযোগ পান। এআই অগ্রগামী প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণ কর্মীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে আরও দক্ষ হতে পারে, সেই সুযোগ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া’স টিপ্পি কলেজ অব বিজনেসের অধ্যাপক উইগুও (প্যাট্রিক) ফান বলেছেন, অনেক তরুণ এই দক্ষতাগুলোকে ‘কৌশলগত কর্মজীবনের পদক্ষেপ’ হিসেবে শেখার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অনলাইন কোর্স বা ঐতিহ্যগত শিক্ষার মাধ্যম—যেভাবেই হোক না কেন, তরুণ প্রজন্ম তা শেখার চেষ্টা করছে।
ফান বলেছেন, প্রযুক্তির এই দক্ষতা ও জ্ঞান জেন জিকে ব্যবসায় অবদান রাখতে সাহায্য করতে পারে; যা এআই প্রযুক্তি কম জানা কর্মীদের ক্ষেত্রে অতটা সহজ হবে না। এ কারণে তরুণ কর্মীরাই নিয়োগকর্তাদের কাছে বিশেষ মূল্যবান হয়ে উঠতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রতিষ্ঠান ভিইএম মেডিকেলের সেলস ডিরেক্টর ডেরিক হ্যাথওয়ে বলেছেন, এই জ্ঞান ও দক্ষতাই কর্মক্ষেত্রে তরুণ কর্মীদের শক্তভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘তরুণদের এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করার দক্ষতা ও অস্বস্তিকর কাজকে স্বয়ংক্রিয় করার ক্ষমতা আমাদের উত্পাদনশীলতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে।’
ফান বলেছেন, এআইয়ের কাজ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম বা জেন জি পরিচিত। এ কারণে তরুণ কর্মীরা নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া তাঁদের ভূমিকার ওপর এআইয়ের প্রভাব বুঝতে পারেন। এতে তাঁরা নমনীয় ও গতিশীল কর্মী হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত এআই ও মেশিন লার্নিংকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে একীভূত করছে। এ কারণে এসব দক্ষতা প্রযুক্তি, অর্থ, স্বাস্থ্যসেবা, বিপণন ও উত্পাদন খাতে বিশেষভাবে মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
নৈতিক এআই নিয়ে অনুশীলনের ক্ষেত্রে তরুণেরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন—এটা প্রযুক্তির গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সব শিল্পেই একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। ‘জেন জি কাজের ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবোধের জন্য পরিচিত। তারা ব্যবহারকারীদের আরও ভালো অভিজ্ঞতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রযুক্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে।’—বলেছেন ফান।
তবে রিমোট (হোম অফিস) কর্মী হিসেবে জেন জির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। কিন্তু স্টেফানি ফরেস্ট বলেছেন, এআই সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান তাদের মধ্যে সেতু তৈরিতে সাহায্য করতে পারে, এমনকি বিপরীত পরামর্শদাতাও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টিএফডিতে বহু প্রজন্মের কর্মী নিয়ে কাজ করছি। অল্প ও অনেক অভিজ্ঞতার কর্মীদের একসঙ্গে নিয়ে আসছি এবং একে–অপরের কাছ থেকে শিখছি।’
তবে এমা পারি যুক্তি দিয়েছেন, ‘এআইয়ের পাশাপাশি এখনো কর্মীদের প্রয়োজন আছে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেরই এখন এআইয়ের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু এখনো এটা বাস্তব পর্যায়ে আসেনি। প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এটা যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করছি, আসলে ততটা নয়।’
ফান বলেছেন, নিয়োগকর্তারা সব দিক থেকে ভালো কর্মী খুঁজছেন। প্রযুক্তিগত দক্ষতা এর একটি অংশমাত্র। অন্যান্য দক্ষতা যেমন যোগাযোগ, টিমওয়ার্ক, সমস্যা সমাধান এবং অভিযোজনক্ষমতা অত্যন্ত মূল্যবান।
মহামারি চলাকালীন নিয়োগ পেয়ে জেন জি যেসব দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি বা বাধার সম্মুখীন হয়েছিল, এআই দক্ষতা তা পুরোপুরি মোকাবিলা করতে পারবে না। তবু এআই তাদের সাহায্য করছে বলে মনে হচ্ছে।
Collected from prothomalo