Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
শ্রীমঙ্গলে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চলমান ধর্মঘটের ১২তম দিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চা-শ্রমিকেরা। আজ বুধবার বেলা তিনটা থেকে উপজেলার সাতগাঁও চা–বাগানের চা কারখানার সামনের মহাসড়কে তাঁরা অবস্থান নেন।

কর্মসূচিতে সাতগাঁও, দিনারপুর, মির্জাপুর, বৈলাছড়া, বৌলাশী, ক্লোনেল, সাইফ, ইছামতি, মাকড়িছড়াসহ বিভিন্ন চা–বাগানের হাজারের বেশি শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে। আজ শ্রীমঙ্গলের ৩৯টি চা–বাগানে কাজ বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকেরা। সকালে জেরিন চা–বাগানে কাজ শুরু হলেও পরে তাঁরা কাজ বন্ধ করে ফিরে যান।

বেলা একটার দিকে সাতগাঁও চা–বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, চা-শ্রমিকেরা বাগানের নাটমন্দিরে বসে বিক্ষোভ করছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।

সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চা-শ্রমিক শাত্ননা বাড়াইক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে ১৬ দিন ধরে আন্দোলন করছি। ১২০ টাকায় খাওয়াদাওয়া, লেখাপড়া কিছুই হয় না। বিভিন্নজন এসে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি আমাদের কাজ করতে বলেছেন। তিনি নাকি বিদেশ থেকে ফিরে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। ডিজিটাল দেশে সরকারের প্রতিনিধির কাছ থেকে মিথ্যা কথা শুনতে হচ্ছে। আমরা টেলিভিশনে দেখছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে। তাহলে কেন আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলা হচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনে কাজে ফিরব। তিনি একটা ঘোষণা দিলেই শ্রমিকেরা কাজে ফিরবেন।’

সাতগাঁও চা–বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি কাজল কালিন্দী বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছেন। বাগানমালিকেরা দাবি মেনে নিলে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে যাবেন। ১৬ দিন ধরে চা-শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১২০ টাকা মজুরিতে কিছুই হয় না। এর বাইরে রেশন, চিকিৎসা, বাসস্থানের নামে কর্তৃপক্ষ যা দেয়, তা পর্যাপ্ত নয়। সেখানে অনেক ফাঁকি আছে। শ্রমিকেরা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আছেন। তিনিই এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ধর্মঘটের ১১তম দিনে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বিভিন্ন চা–বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধে গতকাল ভাড়াউড়া ও জেরিন চা–বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গতকাল ডিসি অফিসে বলেছিলাম, আমাদের এক দিন সময় দিতে, যাতে আমরা শ্রমিকদের বোঝাতে পারি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সময় দেননি। সাধারণ শ্রমিকেরা এটা মেনে নিতে পারছেন না। সবার সঙ্গে কথা বলে আজ একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন চা-শ্রমিকেরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকেরা। এখন বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

Collected from Prothom alo