Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
শূন্য পাস মাদ্রাসাগুলোর এমপিও বন্ধের চিন্তা

টাঙ্গাইলের সখীপুরের ইছাদীঘি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এ বছরের দাখিল পরীক্ষায় ২১ জন অংশ নিলেও কেউ পাস করতে পারেনি। অথচ এমপিওভুক্ত এই মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে সরকার থেকে বেতনের শতভাগ মূল অংশ ও কিছু ভাতা পান।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এবার মোট ৪১টি মাদ্রাসা থেকে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর মধ্যে নয়টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত, এর মানে হলো এগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মূল বেতনসহ কিছু ভাতা পান।
এখন এই নয়টি মাদ্রাসার এমপিওভুক্তি বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। তারই আলোকে ওই মাদ্রাসাগুলোর এমপিওভুক্তি কেন বন্ধ করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ২৮ জুলাই এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার সারা দেশের ২৯ হাজার ৭১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন।
এবার মোট ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। এর মধ্যে ৪১টিই মাদ্রাসা। গত বছরও ৪১টি মাদ্রাসা থেকে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি।
বেতন পাওয়া ৯ মাদ্রাসা থেকেও সবাই ফেল
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শূন্য পাস করা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নওগাঁর পত্নীতলার চক ফরিদ মেহেরুল্লা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৬ জন পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করেনি। একই উপজেলার বড় বিদিরপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ জন ও হলাকান্দর সাবেদ আলী দাখিল মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১৯ জন। কিন্তু কেউ পাস করেনি।
এর মধ্যে হলাকান্দর সাবেদ আলী দাখিল মাদ্রাসাটি ২০০০ সালে এমপিওভুক্ত হয়। অর্থাৎ তখন থেকেই মাদ্রাসাটির শিক্ষকেরা সরকার থেকে বেতনের একটি অংশ পান।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হলাকান্দর সাবেদ আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমান দাবি করেন, করোনার পরও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আনা যায়নি। তাঁর মতে, এটিই মূল কারণ।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাতোর আর এফ এস দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৫ জন পরীক্ষা দিলেও সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। তবে মাদ্রাসার সুপার বেলায়েত হোসেন দাবি করেন, পরীক্ষার কেন্দ্রে একটি সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি জানিয়ে তাঁরা বোর্ডে আবেদন করেছেন। মাদ্রাসাটি ২০০১ সালে এমপিওভুক্ত।
এ ছাড়া যশোরের মনিরামপুরের হায়াতপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৫ জন এবং একই উপজেলার শমসেরবাগ দাখিল মাদ্রাসা থেকে সাতজন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল‍্যাপুর দারুছ্ছালাম মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৫ জন এবং রাজশাহীর তানোরের ময়েনপুর আলীতলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১২ জন পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করতে পারেনি।
এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুটি বিদ্যালয় থেকে এবার কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে একটি হলো গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের পূর্ব লখন্ডা জিরাতলী উচ্চবিদ্যালয়। আরেকটি টাঙ্গাইলের সখীপুরের কালিয়া আড়াইপাড়া গার্লস হাইস্কুল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বোর্ডের অধীন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডেকে কারণ ও তথ্য জানা হবে। হয়তো এমনও হতে পারে, এক বছর সময় দিয়ে শর্ত দেওয়া হবে। যদি তারা এই এক বছরের মধ্যে শর্ত পূরণ করতে না পারে, তাহলে হয়তো এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
শূন্য পাস করা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন রাজশাহীর পুঠিয়ার তারাপুর হাইস্কুল, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন কুড়িগ্রাম সদরের পূর্ব কুমারপুর আদর্শ হাইস্কুল, যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নড়াইলের মুলদাইড় তালতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও যশোরের শার্শা উপজেলার সাড়াতলা জুনিয়র হাইস্কুল। এগুলো থেকে হাতে গোনা শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করেনি।
৪৬ মাদ্রাসায় পাসের হার করুণ
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের দাখিল পরীক্ষায় ১০ শতাংশ বা তার কম পাস করেছে, এমন মাদ্রাসা ৪৬টি। যেমন ফরিদপুরের বোয়ালমারীর হরিহর নগর ফাজিল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থী ছিল ২২ জন। এই মাদ্রাসা থেকে পাসের হার ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ধরনের মাদ্রাসাকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
Collected from prothomalo