Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
আবারও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো

১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ ডিসেম্বর মাসে দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। বিজয়ের এই মাসে আমরা হাজির করছি তারিখ ধরে ধরে সেই দিনগুলোর ঘটনাধারা। ঈষৎ সংক্ষেপ করে লেখাটি নেওয়া হয়েছে প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশিতব্য বই একাত্তরের দিনপঞ্জি: মুক্তিযুদ্ধের দৈনিক ঘটনালিপি থেকে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে এক জরুরি আলোচনা শুরু হয়। আর্জেন্টিনা প্রস্তাব উত্থাপন করে দুই দেশকে অস্ত্র সংবরণ করে সীমান্তের দুইদিকে তাদের সেনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলে।

নিরাপত্তা পরিষদেও অনুরূপ প্রস্তাব তোলা হয়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রয়োগ করে সে প্রস্তাব বাতিল করে দিলে প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে পাঠানো হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন-সমর্থিত ভারতের প্রস্তাবে বলা হয়, বিষয়টি সাধারণ পরিষদের বিচার্য হতে পারে কি না, সেটা পরিষদের কার্য পরিচালনা কমিটিতে বিচার করে দেখতে বলা হোক।

পরিষদের সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার আদম মালিক বলেন, শান্তির জন্য একতাবদ্ধ হওয়ার নীতির ভিত্তিতেই এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে। তদনুসারে প্রস্তাবটি অবিলম্বে বিচার করে দেখতে হবে। ভারতের প্রস্তাবটি তিনি ভোটে দিতে চাইলে ভারত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জর্জ বুশ যুদ্ধের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। এরপর বাংলাদেশ সময় রাত ১টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকে। আবার অধিবেশন শুরু হলে বর্তমান বিরোধের মানবিক দিক সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট একটি বিবৃতি পেশ করেন।

এরপর ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেনা অপসারণের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটি মানার বাধ্যবাধকতা ছিল না।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১০৪ টি, বিপক্ষে ১১টি। ১০টি রাষ্ট্র ভোট দেয়নি। কয়েকটি দেশ অনুপস্থিত থাকে। সাধারণ পরিষদের সদস্যসংখ্যা ১৩১।


ভারতের আক্রমণের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে চীন আরেকটি প্রস্তাব আনে। সোভিয়েত ইউনিয়নও একটি প্রস্তাব আনে। কোনোটিই ভোটে দেওয়া হয়নি।

এর আগে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে এই মর্মে দাবি জানায়, বাংলাদেশকে অবশ্যই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেনা অপসারণ নিয়ে আনা প্রস্তাব সম্পর্কে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হলে তা বলবৎ করা যাবে না।

ভুটানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি


৬ ডিসেম্বর ভুটানও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দিল্লিতে ভারত সরকারের এক মুখপাত্র এদিন সংবাদটি প্রকাশ করেন। ভারতের পর ভুটানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুরক্ষিত যশোরের এদিন পতন হয়। ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরাও মুক্ত হয়। পতন হয় সিলেটেরও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাকিস্তানি সেনারা পালাতে শুরু করে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে রাজধানী ঢাকার দিকে।

যৌথ বাহিনী প্রথমে দখল করে যশোর বিমানবন্দর। তারপর সেনানিবাস। বয়রা ও বেনাপোল থেকেও যৌথ বাহিনী যশোরের দিকে এগোয়। ততক্ষণে অধিকাংশ পাকিস্তানি সেনা যশোর থেকে পালিয়েছে। শ দুয়েক সেনা ও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ভারত, ৮–৯ ডিসেম্বর ১৯৭১; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর: আট, পৃ.৪৪৬

Collected From prothomalo