বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অভিবাসী কর্মী পাঠানো বাড়লেও সেভাবে রেমিট্যান্স বাড়েনি। এ জন্য হুন্ডিকেই মোটাদাগে দায়ী করা হয়; কিন্তু হুন্ডি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পাশাপাশি সহজে ও ন্যায্য মুদ্রা বিনিময় মূল্যে শ্রমিকেরা যাতে দেশে অর্থ পাঠাতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। অর্থ পাচার, বিমানবন্দরে হয়রানিসহ নানা বিষয় শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছেন। তবে দেশের সিংহভাগ রেমিট্যান্স (প্রবাসী) আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মহামারির মতো সংকটকালে দেশে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪ সালের সুনামির পর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেশি ছিল। এ ছাড়া কোভিড ও কোভিড–পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছিল। কোভিড–পরবর্তী পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় প্রবাসী আয় এই অঞ্চলের দেশগুলোকে বেশ সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
বেশি কর্মী মানে বেশি রেমিট্যান্স নয়
প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমালেও সেই তুলনায় রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার নতুন অভিবাসী বিদেশে যান। আর ২০২১ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন গুণ। অথচ ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০২২ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখের বেশি। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বছর শেষে সব মিলিয়ে ২১ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ অভিবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব। ২০২০ সালে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার অভিবাসী সৌদি আরব গেছেন। ২০২১ সালে তাঁরা প্রায় ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। ধারণা করা হয়, কোভিডের কারণে অভিবাসীরা তাঁদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের কাছে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। আবার ২০২১ সালে প্রায় ৪ লাখ ৫৭ হাজার নতুন অভিবাসী সৌদি আরব যান। তাঁরা ২০২২ সালে প্রায় ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন (সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএমইটি)।
Collected From prothomalo