Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
এত উদ্যোগেও বাড়ল না প্রবাসী আয়

দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা, বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিদায়ী ২০২৩ সালে তেমন সুখবর আসেনি। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, প্রবাসী আয় ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। বছরের বাকি চার দিনে প্রবাসী আয় আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১০৫ কোটি ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। অথচ বিদায়ী বছরে ১২ লাখের বেশি জনশক্তি রপ্তানির রেকর্ড হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসীরা ঠিকই আয় পাঠাচ্ছেন। কিন্তু অর্থ পাচার অব্যাহত থাকায় তা বৈধ পথে আসছে না। অর্থ পাচারকারীরা সেই ডলার কিনে ফেলছেন। সেই সুবাদে পাচারকারীরা দেশে প্রবাসীর পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। নতুন অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ ও রেমিট্যান্স কোম্পানিগুলো অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আয় আসছে না। 
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বছরভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে ২০২১ সালে। ওই বছরে প্রবাসীরা দেশে মোট ২ হাজার ২২১ কোটি ডলার পাঠান। কারণ, করোনাভাইরাসের কারণে তখন বৈশ্বিক যাতায়াত বন্ধ ছিল। পাশাপাশি অর্থ পাচারকারীরাও কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে পরের বছরেই, অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রবাসী আয় কমে হয় ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। আর চলতি মাসে গত বুধবার পর্যন্ত আয় এসেছে ১৮৫ কোটি ডলার। ফলে ওই দিন পর্যন্ত ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১০৫ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৭ কোটি, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৬ কোটি ও ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৫ কোটি ডলার আসে।
প্রবাসীরা এখন বৈধ পথে আয় পাঠালে প্রতি ডলারের বিপরীতে পাচ্ছেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। দেড় মাস আগে প্রবাসীদের ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। তবে এমনও শোনা যায়, কিছু ব্যাংক ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কিনছে। এতে পুরো প্রবাসী আয়ের বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রিজার্ভও বাড়াচ্ছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৮২ কোটি ডলার, যা গত বৃহস্পতিবার বেড়ে হয় ২ হাজার ৭১০ কোটি ডলার। ডলার–সংকটের মধ্যে সেদিন বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২২ কোটি ডলার কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সামনে নির্বাচনের কারণে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা না করে কৃত্রিমভাবে ডলার-সংকট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দেড় মাসে তিন দফায় ডলারের দাম ১ টাকা কমানো হয়েছে। রিজার্ভ বাড়াতে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো আমদানি দায় শোধ করতে পারছে না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ পাচার অব্যাহত থাকায় প্রবাসী আয় বাড়ছে না। প্রবাসীরা ঠিকই আয় পাঠাচ্ছেন, তা পাচারকারীরা কিনে ফেলছে। অর্থ পাচার রোধে সরকার কিছুই করছে না। এমনকি ডলার–সংকটের মধ্যেও চুপ রয়েছে। নির্বাচনের পর দেখা যাক, এ নিয়ে সরকার কঠিন কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না।’
বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯-এ বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হবে।
সংস্থাটির মতে, দেশের প্রবাসী আয়ে এখন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বছরের শেষে আনুষ্ঠানিক তথা বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে। তবে বাস্তবে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের পার্থক্য থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Collected From prothomalo