নিউইয়র্কে সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে
নিউইয়র্ক সিটি জবে (চাকরি) বাংলাদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে। পেনশন, ওভারটাইম ও স্বাস্থ্যবিমা সুবিধার কারণে এবং নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় বাংলাদেশিরা সিটি জবকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। চলতি বছর নিয়োগের ঘোষণার পর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি সিটির ১৩টি পদে আবেদন করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব সিটিওয়াইড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেস (ডিকাস) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পুলিশ অফিসার, স্যানিটেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট এবং মটর ভেহিকেল সুপারভাইজারসহ ১২টি পদের আবেদন গ্রহণ ২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগের আবেদন শেষ হবে আগামী ১২ মার্চ মঙ্গলবার। পুলিশ অফিসার পদে পরীক্ষা হবে ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার। স্যানিটেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট পদে পরীক্ষা হবে ২৮ মে মঙ্গলবার। ব্রিকলেয়ার পদে পরীক্ষা হবে ৬ জুন বৃহস্পতিবার। সুয়েজ ট্রিটমেন্ট ওয়ার্কার পদে পরীক্ষা হবে ৩ জুন সোমবার। সুপারভাইজিং হাউজিং গ্রাউন্ডসকিপার পদে পরীক্ষা হবে ২৪ মে শুক্রবার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক ১৩টি পদে মোট ৫ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি কতজন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রটি বলছে, এই সংখ্যা ৫ হাজারের কমবেশী হতে পারে।
সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক সিটির ৭টি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এজেন্সিতে এখন কর্মখালির সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ। বিল্ডিং ইন্সপেক্টর থেকে টেক ওয়ার্কার, সোস্যাল ওয়ার্কার পদে বিপুলসংখ্যক জনবল প্রয়োজন। কিন্তু বাজেট ঘাটতির কারণ সব এজেন্সিকে খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র অ্যাডামস। নিউইয়র্ক সিটি এজেন্সিগুলোসহ সিটি কাউন্সিল ও মেয়র এবং কম্পট্রলারের অফিসে প্রায় ৩ লাখ মানুষ কাজ করেন। এজেন্সি হিসাবে ভাগ করলে ডিপার্টমেন্ট অব বিল্ডিংএ ৪৩৭টি পদ খালি, ডিপার্টমেন্ট অব সোস্যাল সার্ভিসে ২০ শতাংশ, ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং প্রিভেনশন এন্ড ডেভেলপমেন্টে ১৮ শতাংশ পদ খালি হওয়ার কারণ হিসাবে জানা গেছে, প্যান্ডেমিকের পরে এখন অনেকেই অফিসে গিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয়। কিন্তু সিটির নিয়ম অনুসারে অফিসে গিয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কাজ করতে হবে।
এস্টোরিয়ায় বাসিন্দা তরুণ যুবক জুয়েল আহমেদ লেখাপড়ার পাশাপাশি উবার চালাতেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেছেন। কিন্তু সাড়া পাচ্ছিলেন না তেমন। অবশেষে পত্রিকায় নিউজ দেখে এবং একজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি পুলিশ অফিসার পদে আবেদন করেছেন। আগামী ১৪ মার্চ এই পদে পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের চাকরিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সম্মানও আছে। পাশাপাশি বিপুল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। এজন্য পুলিশের চাকরিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট জাকির হোসেন জানান, গত আড়াই বছর ধরে তিনি এই পদে চাকরি করছেন। ভালো কিছুর আশায় তিনি পুলিশ অফিসার পদে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরতদের অনেকেই ট্রাফিক এজেন্ট ছিলেন। সুবিধা মতো সময়ে পরীক্ষা দিয়ে অফিসার টপদে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা সবাই এখন ভালো করছে।
বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) একজন কর্মকর্তা জানান, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশির আগ্রহ বাড়ছে। পুলিশের শীর্ষস্থানীয় ডেপুটি ইন্সপেক্টর, ক্যাপ্টেন, লেফটেন্যান্ট, সার্জেন্ট ও ডিটেকটিভ পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মিত পুলিশ বিভাগে অফিসারের সংখ্যা চারশ’ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে ট্রাফিক ও কারেকশন বিভাগে রয়েছে প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কমকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশি মীর বাশার। সিটি কাউন্সিলে রয়েছেন কাউন্সিল মেম্বার বাংলাদেশি শাহানা হানিফ। এ ছাড়াও সিটি প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহু বাংলাদেশি দায়িত্ব পালন করছেন।
Collected From Daily ittefaq