রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে টানা ২৬ দিন ছুটি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর যুক্ত হলো ‘গরমের কারণে’ ৫ দিনের ছুটি। এতে শিক্ষার্থীদের ‘শিখন ঘাটতি’ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানী ঢাকার অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। এতে বাধা দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে তারা বলছে, যারা অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারবে না তাদের ‘অনুপস্থিত’ দেখানো যাবে না।
২৬ দিন বন্ধের পর নতুন করে ৫ দিন ছুটি যোগ হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরা। ঘাটতি পোষাতে তাই অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আজ রোববার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও একইরকম ঘোষণা দিয়েছে। আজ থেকেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আহমেদ তাজমীনের সই করা এক বার্তায় শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস অনলাইন পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২১ এপ্রিল (রবিবার) থেকে ২৭ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত সকল ক্লাস অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরিচালিত হবে।
রাজধানীর বেশে কয়েকটি স্কুল-কলেজের প্রধানরা জানান, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
মহাখালী ডিওএইচএস বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার হবে বলে এসএমএস দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী আজ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে।
অনলাইনে ক্লাস করছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও। একইভাবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, আমরা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে, এটা বাধ্যতামূলক নয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত না থাকে, তাকে অনুপস্থিত দেখানো হবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ জাফর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার বিশেষ দুযোর্গকাল হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঁচদিন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এসময় কেউ অনলাইনে ক্লাস নিলে নিষেধ নেই।
তিনি বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় সব শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে পাঠদান চলছে। তাই শিখন ঘাটতি পোষাতে যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের সাধুবাদ জানাই।
গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে দেশের সব অঞ্চলে। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশের দাবির মুখে গতকাল স্কুল-কলেজ ৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর রাতের দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব কলেজের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরও তাদের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।