বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (বর্তমানে গ্রেড হিসেবে পরিচিত) নিয়োগ হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অধীনে। এখন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগও পিএসসির অধীনে করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি কমিটি।
সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোটার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির বলা হয়। ১০ থেকে ১২তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বলা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির। আর ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীদের বলা হয় তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বলা হয় চতুর্থ শ্রেণির। যদিও ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আর এই শ্রেণিভিত্তিক পরিচয় নেই। সবাইকে গ্রেড হিসেবে বলা হয়। যদিও বাস্তবে এখনো শ্রেণিভিত্তিক হিসেবেই বলা হয়ে থাকে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে আলাদা কর্তৃপক্ষ হবে নাকি পিএসসির অধীনে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে এই কমিটি ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য পিএসসিকে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে। পিএসসি বলছে, তারা এটি করতে সক্ষম হবে। তবে ওই কমিটির সুপারিশই চূড়ান্ত নয় বলেও উল্লেখ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এটি পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থাৎ কী করা হবে সেটি এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে।
মন্ত্রী আরও জানান, বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগে গত ৫ বছরে (২০১৯ থেকে ২০২৪) তদন্তের মুখে পড়েছেন প্রশাসনের ১৭৮ জন কর্মকর্তা (গ্রেড ১ থেকে ৯ম)। তাদের মধ্যে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ২২ জনের গুরুদণ্ড ও ৬৯ জনের লঘুদণ্ড হয়েছে। অর্থাৎ ৯১ জনের শাস্তি হয়েছে। বাকি ৮৭ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিজীবীদের বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মূলত ওই দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারী আইন অনুযায়ী, লঘুদণ্ডগুলো হলো তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিত করা এবং সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা। আর গুরু দণ্ডগুলো হলো নিম্নপদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।
৫ বছরের পাশাপাশি বিগত ১০ বছরে (২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত) কতজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারও তথ্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ১০ বছরে ৩৫১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তাদের মধ্যে গুরুদণ্ড পেয়েছেন ৪১ জন এবং লঘুদণ্ড পেয়েছেন ১৪০ জন। বাকি ১৭০ জন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত বিভাগীয় মামলা চলে। যদি কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়, তাহলে সেটি আমলে নিয়ে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ বিষয়ে প্রথমে প্রাথমিক তদন্ত করে সত্যতা বোঝার চেষ্টা করা হয়। কারণ, বিভাগীয় মামলা করতে গেলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হয়। এতে শুনানি হয়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। তিনি বলেন, পুরস্কারের পাশাপাশি শাস্তির ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসীহ উদ্দিন মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
Collected From DainikBangla