Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
কম খরচে বিদেশে উচ্চশিক্ষা

ক্যারিয়ার বিকশিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে সবারই। এক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম নয়; বরং দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খরচের বিষয় তো মাথায় রাখতেই হয়! একইসঙ্গে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং টিউশন ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ নাগালের মধ্যে রাখা একটু হিসেবেরই বিষয়। আর হিসাব মিলে গেলেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে পাড়ি জমানো যায় কাক্সিক্ষত পীঠস্থানে।


কম খরচে অধ্যয়নের সুযোগ আছে ইউরোপ, মধ্য-এশিয়া ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বড় অংশ ছাড়ের পরও আর্থিক সংকুলান না হলে আছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। এতে টিউশন ফিসহ থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া যায়। স্বল্প খরচে বিদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজখবর জানাচ্ছেন- নাফিস রাইয়ান

তুরস্ক : এশিয়া এবং ইউরোপ, দুই মহাদেশকে স্পর্শ করেই গড়ে ওঠা তুরস্ক স্থাপত্য বিস্ময় এবং হট-এয়ার বেলুন ট্রিপের জন্য বিখ্যাত। তবে এখানকার যে বিষয়টি বিশ্বে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে, তা হলো দেশটির মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের অংশ, যা বোলোগনা প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এতে করে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি সব ইউরোপে স্বীকৃতি পায়। তুরস্কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব সাশ্রয়ী মূল্যের।


সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ থেকে ৪ হাজার ইউরোর মতো খরচ করতে হয় শিক্ষার্থীকে। বিশ্বের অন্যান্য অধ্যয়নের গন্তব্যের তুলনায় এটি অনেক বেশি সাশ্রয়ী। একজন বিদেশী শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো বাজেটের মধ্যে তুরস্কে থাকতে পারেন।
ফ্রান্স : বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্গ বলা যেতে পারে ফ্রান্সকে। শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং সমগ্র ইউরোপীয় বাজারে তাদের রয়েছে অভিজাত পদচারণ। স্নাতক করার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার আশা করতে পারেন। সুস্বাদু খাবার থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক, ফ্যাশন, শিল্প-সাহিত্য এবং জীবনধারা-জীবনের প্রায় সবকিছুর একটি আনন্দদায়ক মিশ্রণের নাম ফ্রান্স।


এখানে লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে প্রতিবছর খরচ হতে পারে ২ হাজার ৭৭০ ইউরো। মাস্টার্স লেভেলে খরচ আছে বছরপ্রতি ৩ হাজার ৭৭০ ইউরো। জীবনযাত্রার জন্য প্যারিস, নিস, লিয়ন, ন্যান্টেস, বোর্দো বা টুলুজের মতো অভিজাত শহরগুলো বাদ দিয়ে বাকি অন্যান্য শহরগুলোকে বাছাই করলে ৬৫০ ইউরোর নিচেই দিন যাপন করা যাবে।
জার্মানি : বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এখন শিক্ষার্থীদের শীর্ষ পছন্দের দেশ জার্মানি।

এখানকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত। এগুলোর ব্যাচেলর কোর্স এবং বেশিরভাগ মাস্টার্স কোর্সের জন্য সাধারণত কোনো ফি নেই। কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রামে টিউশন ফি থাকলেও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন বেশি নয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খরচ বলতে আছে সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশন ফি, যার সঙ্গে টিউশন ফির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই পাবলিক পরিবহন, ক্রীড়া, অনুষদ/বিভাগীয় ছাত্রসংগঠন এবং প্রশাসনিক ফি’র ব্যয়ভার বহন করে।

এই ফি প্রতিষ্ঠানভেদে পরিবর্তিত হয় এবং সাধারণত ১০০ থেকে ৩৫০ ইউরোর (১ ইউরো সমান বাংলাদেশী টাকা ১১৮ টাকা ৯১ পয়সা) মধ্যে থাকে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত প্রতি মাসে ৭২৫ ইউরোর মতো হয়ে থাকে, যেখানে বাসস্থান, খাবার, পোশাক এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রম সবই অন্তর্ভুক্ত।

অস্ট্রিয়া : ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র অস্ট্রিয়া। ইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) বা ইইএ (ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়া) দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি একদম ফ্রি। কিন্তু নন-ইউ/ইইএ দেশগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে ২০ ইউরো ছাড়াও টিউশন ফি বাবদ গড়ে ৭২৬ দশমিক ৭২ ইউরোর মতো খরচ হয়। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অস্ট্রিয়ার অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি মুক্ত শিক্ষা প্রদান করছে। এগুলোর মধ্যে ভিয়েনা

বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং লিওবেন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। জীবনযাত্রার খরচ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ কম। প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরোর বাজেট ভিয়েনা এবং সালজবার্গে আবাসন, খাবার, সামাজিক কার্যকলাপ এবং পাবলিক পরিবহনসহ সব খরচ মেটাতে পারে। অন্যান্য জনপ্রিয় স্টুডেন্ট লোকেশনের মধ্যে লিনজ বা গ্রাজ ৯০০ থেকে ১ হাজার ইউরোর মধ্যে মাসিক জীবনযাত্রার খরচ হয়ে যায়।
পোল্যান্ড : ৪৫০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেশ পোল্যান্ড ইউরোপের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়কে বক্ষে ধারণ করে আছে। পোলিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অ্যাডমিশন পরীক্ষা না থাকার কারণে এই অধ্যয়নের গন্তব্য দেশের বাইরের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য সর্বসাকুল্যে প্রয়োজন হবে শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার একটি প্রশংসাপত্র, একটি আর্থিক কার্যকারিতা প্রশংসাপত্র এবং ইংরেজি বা পোলিশ ভাষার দক্ষতা।

প্রথম, দ্বিতীয় এবং দীর্ঘ-চক্র অধ্যয়নের জন্য টিউশন ফি ২ হাজার ৩৬৮ ইউরো। পোল্যান্ড বেশ স্থিতিশীল অর্থনীতির ইউরোপীয় দেশ। তাই বাইরের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ এখানে প্রতি মাসে ৩৫০ থেকে ৫৫০ ইউরোর মধ্যে পরিবর্তিত হয়। শহরের সীমারেখা ও নগরায়ণের অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে থাকে।
মালয়েশিয়া : মালয়েশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পাবলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত ইউনিভার্সিটি মালয়া। এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিতে খরচ পড়ে গড়ে প্রতিবছর ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ ইউরো। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো খরচ যায়। জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহন করার জন্য প্রতি মাসে ৪৫০ থেকে ৮০০ ইউরোর মতো বাজেটের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত থাকা উচিত।
হাঙ্গেরি : বৈচিত্র্য ও বহুসংস্কৃতির এক চমৎকার মেলবন্ধন চোখের পড়বে হাঙ্গেরিতে ঘুরতে গেলে। পাশাপাশি এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। পাবলিক হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফির দিক থেকে তাদের পশ্চিমা সমকক্ষদের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। একজন বিদেশী শিক্ষার্থীকে অধিকাংশ ডিগ্রির জন্য প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ইউরোর মতো খরচের প্রস্তুতি নিতে হয়। আর বসবাসের জন্য ব্যয় হয় ৩৭৫ থেকে ৭০০ ইউরোর মধ্যে। তবে তা অবশ্যই শহরের ধরনের ওপর নির্ভর করে।

আবাসন, খাবার, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে রাজধানী বুদাপেস্টে প্রতি মাসে ৬০০ ইউরো যথেষ্ট। আর ছোট শহরগুলোয় প্রতি মাসে ৬০০ ইউরোর নিচে জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদেশে স্নাতক অধ্যয়নের জন্য আর্থিক সহায়তার মধ্যে আছে ফেডারেল অনুদান, ফেডারেল এবং ব্যক্তিগত ঋণ। এর বাইরে আছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি, যেগুলো এই দেশগুলোয় জীবনযাত্রার খরচের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করতে পারে।
গ্রিস : ঈশ্বরের দেশ নামে খ্যাত অধ্যয়নের এই গন্তব্য শুধু তাদের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার নিয়েই গর্ব করে না, তারা তাদের শিক্ষার মাধ্যমে সে ঐতিহ্যকে উন্নতও করে। দেশজুড়ে প্রচুর গ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষায় অধ্যয়ন করে ডিগ্রি লাভের সুবিধা রেখেছে। ইইউ-দেশ হিসেবে গ্রিস বোলোগনা প্রক্রিয়ার সদস্য, তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা ইউরোপের যেকোনো বোলোগনা সদস্য, দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট স্থানান্তর করতে পারেন।

নন-ইউ/ইইএ শিক্ষার্থীদের জন্য বেশিরভাগ ব্যাচেলর এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ইউরোর মতো অর্থ খরচ করতে হয়। গ্রিসের সাশ্রয়ী পরিবেশে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বাজেট  প্রতি মাসে ৪৫০ থেকে ৭৫০ ইউরো হয়ে থাকে।

Collected From Daily Janakantha