Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
স্কলারশিপ ও ভিসা নিয়ে শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু সহস্রাধিক শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন নাসরিন জেবিন। একাডেমিক বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে পেয়েছেন তাজউদ্দীন আহমদ স্বর্ণপদকও। উচ্চতর ডিগ্রির (পিএইচডি) জন্য জেবিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পেয়েছেন। এখন দেশটির ভিসা পেতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান কারফিউয়ের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় মার্কিন দূতাবাস থেকে দুই দফায় তার সাক্ষাৎকারের সূচি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন করে সাক্ষাৎকারের জন্য দূতাবাসের শিডিউল নিতে চাইলেও নিতে পারছেন না। এমনকি তা সহসা পাবেন কিনা সে বিষয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু এ শিক্ষার্থী।
বিষয়টি নিয়ে জেবিনের সঙ্গে কথা হলে বণিক বার্তাকে তিনি জানান, আগামী ১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিতে তার ওরিয়েন্টেশন। ১৫ আগস্ট ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। এজন্য দূতাবাসে ১৯ জুলাই তার সাক্ষাৎকার ছিল। কোটা সংস্কারকে ঘিরে দেশে সংঘর্ষ-সহিংসতা তৈরি হলে ১৮ জুলাই দূতাবাস থেকে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। ২৬ জুলাই নতুন করে সাক্ষাৎকারের তারিখ জানিয়ে দূতাবাস মেইল করলেও পরে সে তারিখও পিছিয়ে দেয়া হয়। নতুন সাক্ষাৎকারের জন্য সূচি নিতে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে আবেদনের চেষ্টা করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিডিউল পাননি জেবিন।
উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। গত বছরও দেশটিতে ১৩ হাজার ৫৬৩ শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছেন। বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১০ জুলাই ‘মিডিয়া নোটে’ মার্কিন দূতাবাস জানায়, ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ার হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে গত বছর যে পরিমাণ শিক্ষার্থী গেছেন, তা এ যাবৎকালের রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী শিক্ষার্থী যাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। 
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গিয়েছিল ৩ হাজার ৩১৪ জন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৬৩-এ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৯৮ শিক্ষার্থী প্রবেশ করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে গেছেন ১০ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থী।
বর্তমানে জেবিনের মতো ভিসা জটিলতায় পড়েছেন ঢাবির আরেক সাবেক শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ (ছদ্মনাম)। স্নাতকোত্তর শেষ করা এ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব লউসিয়ানাতে স্কলারশিপ পেয়েছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করার জন্য এখন ভিসার অপেক্ষায়। এ নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের তারিখ চেয়ে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ইআর (ইমার্জেন্সি রেসপন্স) আবেদন করেছেন। দূতাবাস থেকে ১৮ জুলাই সাক্ষাৎকারের তারিখ দেয়া হলেও দেশে চলমান সৃষ্ট জটিলতার কারণ উল্লেখ করে তা বাতিল করে।
যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পেয়েছি। সেখানে বাসা ভাড়াও নিয়েছি, বিমানের টিকিট করে রেখেছি। এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হলো।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউকে ঘিরে মার্কিন দূতাবাসে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার বন্ধ থাকায় অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এমনকি যাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কথা, ভিসা বিলম্বিত হওয়ায় এখন তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। দূতাবাস থেকে বারবার সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় গমনেচ্ছুদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ভিসাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান কারফিউর মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার নিচ্ছে না মার্কিন দূতাবাস। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের নির্দিষ্ট তারিখ দেয়া হলেও তা বাতিল করে পরবর্তী তারিখ জানিয়ে মেইল করা হচ্ছে। এমনকি নতুন করে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের সময় নেয়ার জন্য দূতাবাসের ওয়েবসাইটে চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রে গমনেচ্ছু অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, যাদের ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের তারিখ ১৭ জুলাই নির্ধারিত ছিল, তাদের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের সাক্ষাৎকারের তারিখ ২০ জুলাই ছিল, তাদের অনেকেই এখনো নতুন করে কোনো তারিখ পাননি। 
স্কলারশিপ পাওয়ার পর নির্ধারিত দিনে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারলে স্কলারশিপ বাতিলের ঝুঁকি থাকে, এমনকি স্কলারশিপ বিদ্যমান থাকলেও ফান্ডের বিষয়টি নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাডওয়ার্ড মুরো কলেজ অব কমিউনিকেশনের ডিন প্রফেসর ড. ব্রুস পিংকলেশন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্কলারশিপের আওতায় উচ্চতর ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসের শুরুর দিনগুলোয় উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তার ফান্ড এমনকি স্কলারশিপ নিয়েও জটিলতা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য ফ্যাকাল্টি ও স্কলারশিপভেদে নিয়মটা ভিন্নতর।’
দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ সহিংসতা এবং পরবর্তী সময়ে কারফিউ জারি হলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কিছু কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরপরই দূতাবাসের বেশ কয়েকজন কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। ২৪ জুলাই এক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ‘জরুরি নন’, এমন কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দিয়েছে।
Collected From dhakapost