ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের ই–কমার্স খাতে গত ১৩ দিনে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ই–ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এবং ধীর গতির কারণে প্রথম ১০ দিনেই ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
ই–ক্যাব ডিজিটাল মার্কেটার, কনটেন্ট ডেভেলপার, স্টার্টআপ এবং ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে সদস্যদের কাছে সার্ভে ফরম থেকে তাঁরা এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান।
লিখিত বক্তব্যে শমী কায়সার জানান, ইন্টারনেট শাটডাউন, ধীর গতি এবং ফেসবুক–হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় ব্যবসা–বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ই–কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী, যা সরকারও অবগত। উচ্চপর্যায়ের অনেককে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। দেশের ২০ লাখ উদ্যোক্তা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। শুধু ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা রয়েছেন ৫ লাখেরও বেশি। পণ্য সরবরাহে রয়েছেন আরও ৮ লাখ মানুষ। প্রতিবছরই এ সংখ্যা ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ই–কমার্স লেনদেন হয়, যা গত ১২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পচনশীল দ্রব্যের অর্ডারও বন্ধ হয়ে গেছে।
ফেসবুক চালু করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ই–ক্যাব সভাপতি বলেন, ইন্টারনেট চালুর পর ৫ শতাংশের মতো ব্যবসা চালু হয়েছে। এটা কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা আমরা জানি না। আমাদের দাবি, দ্রুত ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন করে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এভাবে ইন্টারনেট ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে না দেওয়া হয়, সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ই-ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ–সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা, অর্থ সম্পাদক আসিফ আহনাফসহ পরিচালকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ দিনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ই–কমার্স খাতে ৬০০ কোটি টাকা, ই–ট্যুরিজম খাতে ৩০০ কোটি টাকা এবং ই–লজিস্টিক খাতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শমী কায়সার বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফেসবুক কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তাঁদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া, কর্মীদের বেতন দিতে না পারার মতো সংকটে পড়েছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আমরা স্বল্প সুদে ও বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার অনুরোধ করছি।
কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে ই-ক্যাব সভাপতি বলেন, আর কখনো ফেসবুক ও ইন্টারনেট যেন এভাবে বন্ধ না হয়। ঋণ পরিশোধে যেন ৬ মাস সময় দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিকভাবে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং করতে হবে। ন্যূনতম পরিমাণ বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক মাসের জন্য বিজ্ঞাপনের টাকা মেটাকে (ফেসবুক) যারা পরিশোধ করেছেন, সেই টাকা যেন পুরোপুরি কেটে না নেওয়া হয় মেটার সঙ্গে সে বিষয়ে যোগাযোগ করতে হবে। বিজ্ঞাপনে ১৫ শতাংশ যে ভ্যাট সেটি প্রত্যাহার করতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন ফি মওকুফ করতে হবে।