Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
সংকটে বস্ত্র খাত

বিগত সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরূপ প্রভাব অন্যান্য সেক্টরের মতো বস্ত্র খাতেও পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হওয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে বর্তমানে এ খাতটি মহাসংকটে পড়েছে। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আন্তর্জাতিক চালে আটকে গত কয়েক বছরে অসংখ্য টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সুতা কলগুলোও। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোতে উৎপাদিত সুতা বিক্রি হচ্ছে না। ফলে গোডাউনে সুতার পাহাড় জমছে।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, মিল মালিকরা এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত। অধিকাংশ দেশীয় সুতা ও বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পেও পড়তে শুরু করেছে এর নেতিবাচক প্রভাব। শিল্প মালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে বাংলাদেশের পুরো বস্ত্র খাতকে করায়ত্তে নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আগামীতে ভিনদেশিদের একচেটিয়া ব্যবসার জেরে বাংলাদেশকে পুতুল হয়ে থাকতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুতা ও বস্ত্র খাতের বাজার পুরোপুরি দখল করতে সুকৌশলে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একদিকে তাদের দেশে তারা এ খাতকে দিচ্ছে আকর্ষণীয় প্রণোদনা (ইনসেনটিভ) সুবিধা, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও রেখেছে সর্বনিম্ন। ফলে বাংলাদেশের তুলনায় তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দুষ্টচক্রের কারসাজি তো রয়েছেই। এছাড়া পণ্য উৎপাদন করতে গেলে শিল্প মালিকদের দেশেও গ্যাস-বিদ্যুতের চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।
আমরা মনে করি, বস্ত্র খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দেশীয় সুতা কারখানাগুলো যাতে কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে পারে, সেজন্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ আসা উচিত। দেশের সুতা কারখানাগুলোর ওপর উচ্চ সার্ভিস চার্জ এবং চক্রবৃদ্ধি হারে ব্যাংক ঋণের সুদও এ খাতকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে সুতা ও বস্ত্র শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের এগিয়ে আসা জরুরি। সেক্ষেত্রে গোটা বস্ত্র খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা, দেশীয় সুতা ও কাপড় প্রস্তুতকারকদের ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের সমাধান, শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ, পাশাপাশি শিল্প-আগ্রাসন প্রতিরোধে কর্মকৌশল বের করতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব না দিলে দেশীয় বস্ত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, বিদেশি ষড়যন্ত্র সফল হলে বাংলাদেশের স্পিনিং, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাত পর্যায়ক্রমে পরনির্ভর হয়ে পড়বে। এতে এ খাত যেমন ধ্বংস হয়ে যাবে, তেমনি সরকারও হারাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এ শিল্প টিকে না থাকলে শুধু দেশের অর্থনীতিতেই যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা নয়; সেই সঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে। এটা বিবেচনা করে সরকার এ শিল্পকে বাঁচাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
Collected From jugantor