Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
সমাজের কল্যাণে কাজ করছে ‘নির্ভয় ফাউন্ডেশন’

প্রায় পাঁচ বছর আগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নির্ভয় ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক চায়ের আড্ডা থেকে ২০১৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবসে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় নির্ভয়ের। এরপর থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে এই সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবকগণ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ আরিফুল ইসলামের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় নির্ভয়। আরিফ ও তার বন্ধুদের এক আলোচনায় দেশের জন্য সমষ্টিগতভাবে কাজ করার উদ্যোগ হিসেবেই যাত্রা শুরু হয় নির্ভয় নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নজরুল মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০-৪৫জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠদানের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে নির্ভয়। এসময় সপ্তাহে ৬দিন বিনামূল্যে টিউশন প্রদান ছাড়াও ঝরেপড়া রোধে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজন করতো নির্ভয়ের স্বেচ্ছাসেবকগণ।
প্রথমে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাজ করলেও বর্তমানে নির্ভয় ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে চারটি শাখা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ময়মনসিংহ জেলা শাখা, নেত্রকোনা জেলা শাখার পর সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশতাধিক ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রয়েছে নির্ভয়ের।
নির্ভয়ের পাঠদান কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ঝরেপড়া রোধে কাজ করেছে সংগঠনটি। এছাড়া উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে যাচ্ছে তারা। শিক্ষার আলোকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নির্ভয়ের অন্যতম একটি উদ্যোগ নির্ভয় পাঠাগার কার্যক্রম। পাঠ্য বইয়ের বাইরের জগতের সাথে শিক্ষার্থীদের যোগসূত্র স্থাপন করতে এই প্রকল্পটি অনেক ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন প্রকল্পের সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকগণ।
ইতোমধ্যে বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায় এবং নেত্রকোনার বিরিশিরিতে গারো সম্প্রদায়ের জন্য দুইটি আলাদা পাঠাগার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। বই পড়ার আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে নিয়মিত কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্ভয়ের। বিদ্যালয় ভিত্তিক পাঠাগার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে পাঠাগার স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।
শিশু-কিশোরদের ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানকে বিকশিত করার জন্য সংগঠনটি হাতে নিয়েছে সাইবার এডুকেশন ফর টিনস নামের নতুন একটি প্রকল্প। করোনাকালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সহ সর্বক্ষেত্রে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে সেইসাথে শিশু-কিশোররা অনলাইন গেম সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।
তারই সমাধান হিসেবে এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে সাইবার এডুকেশন প্রদান করতে কাজ করছে নির্ভয়। এই কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্তকরণ ও মতবিনিময় ইত্যাদি। পর্যায়ক্রমে এই কার্যক্রম দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে নির্ভয়ের।
সরাসরি রক্তদাতা সংগঠন হিসেবে কাজ না করলেও নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্তের প্রয়োজনে কাজ করছে নির্ভয় ব্লাড ব্যাংক। নির্ভয়ের মাধ্যমে প্রায় অর্ধসহস্রাধিক মানুষ জরুরী অবস্থায় প্রয়োজনীয় রক্ত খুঁজে পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত রক্তদাতা খুঁজে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীগণ। কোন রোগী যেন রক্তের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়ে এটাই তাদের লক্ষ্য।
নির্ভয়ের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হলো পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা। প্রতিবছর নির্ভয় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপন, বৃক্ষের চারা বিতরণ ও বিভিন্ন ফল-সবজির বীজ বিতরণ করে থাকে। বিগত বছরগুলোতে নির্ভয় প্রায় ১২ হাজার গাছের চারা রোপন ও বিতরণ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নিয়মিত ক্যাম্পেইন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন করে যাচ্ছে তারা। দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও পরিবেশ বিষয়ে সচেতন মানুষ এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে এবং তাদের মতামত তুলে ধরছে।
নির্ভয়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন জরুরী দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে প্রতিবছর শীতে অসহায় শীতার্তদের জন্য গরম কাপড়, কম্বল, লেপ ইত্যাদি প্রদান করছে নির্ভয়। ‘মানবতায় নির্ভয়’ নামের এই প্রকল্পের ফলে প্রতিবছর ৪৫০-৫০০জন এই সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া রমজান মাসে ‘ইফতার সামগ্রী বিতরণ’ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিবছর ২০০-২৫০টি পরিবার পাচ্ছেন নির্ভয়ের ইফতার সহায়তা।
মহামারি করোনা চলাকালীন সময়ে নির্ভয় ২০হাজার সচেতনতামূলক লিফলেট, ৫০০ এর অধিক মাস্ক, ৭৫০পিস সাবান বিতরণ করেছে। পাশাপাশি তারা সহস্রাধিক অসহায় পরিবারকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা ও পুনর্বাসন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহ যেকোন জরুরী ইস্যুতে সহায়তা প্রদান করছে নির্ভয়।
নির্ভয় ইয়্যুথ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এনওয়াইডিপি) প্রকল্পের ফলে নির্ভয়ের স্বেচ্ছাসেবীগণ লিডারশীপ, ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক স্পিকিং, কমিউকেশন এন্ড নেটওয়ার্কিং সহ বিভিন্ন কর্ম ও জীবনমুখী দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। নির্ভয়ের নির্ধারিত মেন্টর ও প্রশিক্ষকগণ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। নির্ভয়ের এই সুদক্ষ মেন্টর প্যানেলে রয়েছেন দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিভিন্ন সংগঠনের প্রধান সহ বিষয়ভিত্তিক দক্ষ জনবল। নির্ভয়ের স্বেচ্ছাসেবীগণ শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তাদেরকে কর্মক্ষেত্রের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে চায় নির্ভয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অন্তত ২০ হাজার তরুণকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করতে চায় নির্ভয় ফাউন্ডেশন।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ কে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্র করে শিশুদের নিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা, কুইজ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীতা আয়োজন করা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতার জন্য ‘খাদ্য ও পুষ্টি’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছে সংগঠনটি।
নির্ভয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করলেও মানুষের জন্য কাজ করতেই বেশি পছন্দ করেন।
সমাজের অবহেলিত মানু্যষের পাশে দাঁড়ানোর স্বীকৃতি হিসেবে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার এওয়ার্ড-২০২০’ এর কমিউনিটি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে ৯ম হয়েছেন তিনি। আর্থিক সংকটে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাঁধার সম্মুখীন হওয়া এই তরুণ উদ্যোক্তা সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।

Collected from

Khola Kagoj BD