দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের (উপাচার্য) বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলছে। সেসব ব্যক্তিদের জন্য অন্য উপাচার্যদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সে কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতারা।
এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সব বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের এসব অনিয়ম থেকে বিরত থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাউন্সিল ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভায় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অংশ নেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তৈরি নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করতে আহ্বান জানান। এটি অনুসরণ করলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করার প্রস্তাব করেন উপাচার্যরা।
সভায় উপাচার্যরা বলে, ঢাকা-চট্টগ্রামে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বাসাভাড়া কিছুটা বেশি হলেও তার বাইরের শিক্ষকরা কিছুটা কম পান। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকে থাকলেও ঢাকার বাইরের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকতে চান না। বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের নির্ধারিত ভাড়ার অর্থের অনেক কম টাকায় বাইরে বাসা ভাড়া থাকায় তারা অর্থ বাঁচাতে বাইরে থাকেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাড়ি খালি থাকছে। সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। বাড়ি ভাড়া না বাড়ালে শিক্ষকরা সেখানে থাকতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
উপাচার্যরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, অন্য চাকরি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা এক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষকরা না থাকলে উপাচার্যের একার পক্ষে সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জরুরি অবস্থায় হল বন্ধ করা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে তা নিয়ন্ত্রণে কষ্টকর হয়ে যায়। উপাচার্যরা যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকদের সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাদের নিয়ে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে না থাকলে সে সহযোগীতা পাওয়া সম্ভব হয় না। এ যৌক্তিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীকে আহ্বান জানান। সরকারি কলেজেও একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।
সভায় ডাইসে বসা একজন উপাচার্য প্রস্তাব করেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম-অপরাধ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্যরা সর্তক হবেন। কারণ একজন উপাচার্য অনিয়মে জড়িয়ে গেছে অন্যদের জন্য সেটি সম্মানজনক থাকে না। সে কারণে কেউ অপরাধ করলে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দু-এক জনের জন্য অন্যদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তারা।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে কয়েকজন উপাচার্য বলেন, স্থানীয় চাপ ও তদবিরে মানসম্মত নিয়োগ নিয়োগ দিতে পারেন না। এসময় নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রেও চাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মাণকাজ পরিচালনা করা প্রয়োজন।
উপাচার্যরা জানান, বই কেনা, টেলিফোন, দায়িত্বভাতা ইত্যাদির ব্যাপারে বিভিন্ন অডিট আপত্তি উঠছে। তারা দায়িত্বভাতা পান মাত্র দেড় হাজার টাকা। এটা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া তারা ২০১৫ সালে থেকে পিএইচডির ওপর ইনক্রিমেন্ট দাবি করেন। এছাড়া অধ্যাপকদের একটি অংশকে সিনিয়র সচিবের সমান মর্যাদায় ‘সুপার গ্রেড’ দেওয়ার দাবিও করেন তারা।
বৈঠকে উপাচার্যরা বলেন, বিভিন্ন খাত মিলিয়ে গতবছরের তুলনায় এবারে ২৫ শতাংশ বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আছে। জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমূল্য। কিন্তু এ খাতে ২৫ শতাংশ ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। তারা বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টির আবেদন করে ইউজিসি থেকে পাওয়া যায় না। এভাবে উপাচার্যরা দাযিত্বপালনে যেসব সমাস্যার সম্মুখীন হন এবং বিশ্ববিদালয়ের বিভিন্ন অসংগতি ও বৈষম্যসমূহ তুলে ধরেন।
এসময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, উপাচার্যদের কাছ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে সেসব সমাধানে প্রয়োজনে আবারও বসা হবে। যেগুলো আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে।
শনিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সভায় উপাচার্যরা যেসব সমস্যা এবং পাবলিক বিশ্ববিদালয়ের বিভিন্ন অসংগতি ও বৈষম্যসমূহ তুলে ধরেন, শিক্ষামন্ত্রী সেসব সমাস্যাগুলো শুনেন এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।