মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অফিসে ফিরে কাজ করার জন্য কর্মীদের চাপ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে টেসলার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসে না ফিরলে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেয়। এ অবস্থায় বাড়ি থেকে কাজ করা বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীর আশঙ্কা, অফিসে ফিরে কাজ করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ন্যাশনাল নিউজ।
ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি ওল্যাশের সমীক্ষা অনুসারে, ৭৮ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের বেতন কাটার পদক্ষেপেও সম্মতি দিতে ইচ্ছুক। এ সমীক্ষায় বাড়ি থেকে কাজ করা ৮০০ কর্মী এবং ২০০ জন প্রতিষ্ঠানপ্রধানের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপে অংশ নেয়া দূরবর্তী কর্মীদের প্রায় অর্ধেক প্রণোদনার বিনিময়ে অফিসে ফিরে কাজ করতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন। তারা অফিসে ফেরার জন্য অন্তত ৫০০ ডলার বোনাস চাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে ফিরে কাজ করার জন্য কর্মীদের দাবি করা প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে নমনীয় সময়সূচি, বিনামূল্যের খাবার, অতিরিক্ত ছুটি, চারদিনের কর্মসপ্তাহ, হাইব্রিড কাজের সময়সূচি, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থ প্রদান, পোষা প্রাণী রাখার অনুমতি ও জ্বালানি প্রণোদনা। আবার ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অফিসে ফিরতে সম্মত হওয়া কর্মীদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা নারীদের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মহামারীর দুই বছরেরও বেশি সময় পরে অনেক অফিস এখন আবার খুলছে এবং কর্মীদের অফিসে ফিরে কাজের জন্য বলছে। কিন্তু কর্মীরা এ সিদ্ধান্তে সম্মত নাও হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে বাড়ি থেকে কাজের কারণে নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তারা বাড়ি থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে চান।
বিশ্বজুড়ে গ্রেট রেজিগনেশন (চাকরি ছেড়ে দেয়া) প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞ নতুন কর্মী আকৃষ্ট এবং পুরনো কর্মীদের ধরে রাখা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ করোনা মহামারী কাজের ঐতিহ্যগত ধরনকে পরিবর্তন করে দেয়ার পর কর্মীরা নমনীয় কাজ এবং আরো ভালো সুবিধার দাবি করছেন। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির একজন মনোবিজ্ঞানী ও ব্যবসায় প্রশাসনের অধ্যাপক অ্যান্থনি ক্লটজ প্রথম গ্রেট রেজিগনেশন ফ্রেজটি সামনে এনেছিলেন। তার মতে, গ্রেট রেজিগনেশন মানে সেই লাখ লাখ কর্মীকে বোঝায়, যারা মহামারীতে বাসা থেকে কাজ করার পর আরো নমনীয় কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য খোঁজার জন্য তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
ওল্যাশের সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ নিয়োগকর্তা কর্মস্থলে ফিরে কাজে অস্বীকৃতির পরিবর্তে কর্মীরা পদত্যাগ করলে সন্তুষ্ট হবেন। ১২ শতাংশ নিয়োগকর্তা স্বীকার করেছেন, কর্মীদের অফিসে ফিরতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ নির্দেশ না মানলে তাদের বরখাস্ত করা হবে।ads
৬০ শতাংশ নিয়োগকর্তা জানিয়েছেন, কর্মীরা অফিসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের একটি হাইব্রিড কাজের সময়সূচি অফার করা হবে। পাশাপাশি ২০ শতাংশ দূর থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি এবং ১৯ শতাংশ বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের পক্ষে।
ওল্যাশ জানিয়েছে, বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীদের মনোবল সর্বোচ্চ ছিল। তবে কর্মক্ষেত্র থেকে কাজ করা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেশি থাকে। যদিও এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নিয়োগকর্তা রিমোট কর্মীদের বেশি ব্যয়বহুল মনে করেন।
জরিপে ৫৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রধান আর্থিক প্রণোদনা এবং ৫০ শতাংশ নিয়োগকর্তা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকগুলোয় আরো বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
Collection from bonikbarta