চাকরির পেছনে না ছুটে তরুণদের ফ্রিল্যান্সার হওয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। তারা সহজেই এসব কাজ করতে পারবে।
সরকারের দায়িত্ব তরুণদের কাজের সুযোগ করে দেয়া উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আলাদা ওয়েসবাইট তৈরি করে তাদেরকে আইডি দেয়া হবে। বুধবার এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি হয় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্র্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হন গণভবন থেকে।
ফ্রিল্যান্সারদের বিড়ম্বনার কথা বিবেচনা করেই তাদের পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণে অনেকেই এখন সন্দিহান। ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে টাকা পেল তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। এটা যেন না হয় এ জন্যই এ প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি।’
এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক ঋণও নিতে পারবে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে বসে গিন্নিরাও কিছু কাজ করতে পারবে। এতে ছেলে-মেয়েরা তাদের মাকে কাছে পাবে। অন্যদিকে নারীকে কারো মুখাপেক্ষীও হতে হবে না। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও এটি বিরাট অবদান রাখবে। যারা দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠবে তারা বিদেশে গিয়ে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবসমাজ যেন শুধু ডিগ্রি নিয়ে চাকরি পেছনে না ঘুরে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই করতে পারে এবং অন্যকেও কাজ দিতে পারে এ জন্যই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় সব নাগরিক সুবিধা এখন গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এখন গ্রামেই তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ ছিল। আমরা এ কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, দেশের ৩৯ হাইটেক ও সফরওয়্যার পার্ক তৈরি হয়ে গেলে প্রায় তিন লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে।
ফ্রিল্যান্সিং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিরাট সুযোগ বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এতে করে তারা সমাজে অবহেলিত থাকবে না।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে বিড়ম্বনায় পড়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০০৯ এ যখন ক্ষমতায় আসি তার আগে বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। তখন অনেকেই উপহাস করেছে। আমাদের চিন্তা ছিল কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারলে তরুণরাই লাভবান হবে।’
বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআই বন্ধ করে দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে এটা আবার খুলি। একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে ভিন্নভাবে এটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়। তরুণদের কীভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে কাজ করা হয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই কর্মসংস্থান তৈরি।’
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, দেশ ডিজিটাল হওয়ায় দারিদ্র্য ও দুর্নীতি কমেছে, বেড়েছে কর্মসংস্থান। যে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে, তারা দেশের পাশাপাশি কাজ করবে বিদেশেও।
ডিজিটাল দেশের সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোথাও গেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকলের কারণে অন্তত এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে যেতে হয়। এতে যে কেউই করোনা আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য আমাকেও ঘরে বসেই সব কাজ করতে হচ্ছে। দেশ ডিজিটাল দেখেই এখন আপনাদের সাথে কথা বলতে পারছি, দেখতে পারছি।’
সরকারি হিসেবে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ছয় লাখ তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত। তারা বছরে আয় করেন প্রায় ৩৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
২০২৫ সালের মধ্যে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ১০ লাখ এবং এ খাত থেকে আয় এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
Collection From bonikbarta