দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) একটি প্রকল্পে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এড়িয়ে নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিয়ে টেন্ডার দেয়া হয়েছে।
২৩ বছরের পুরনো ডস বেইস সফটওয়্যার দিয়ে চলছে দেশের শিক্ষাবোর্ডের সামগ্রিক কার্যক্রম। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) শীর্ষক যুগোপযোগী এক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার ফলাফলসহ সকল তথ্য সরকারের নিরাপদ তথ্য ভান্ডারে সুরক্ষিত থাকবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত। এখন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) দেশের ১১ টি শিক্ষাবোর্ডের জন্য ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সার্ভার, রাউটার, ফায়ারওয়াল, কানেক্টিভিটি সুইচ, র্যাক, ইউপিএস, এভিআর, ডিজেল জেনারেটর, ইলেক্ট্রিক ও সিভিল ওয়ার্ক প্রভৃতি ক্রয়ের জন্য গত ০৬ এবং ০৭ এপ্রিল দু’টি পৃথক দরপত্র প্রকাশ করে।
তবে, অভিযোগ উঠেছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে টেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে তা কোনভাবেই সার্বজনীন নয়। বিশেষ করে, নেটওয়ার্কিং পণ্য যেমন: রাউটার, সুইচ ফায়ারওয়াল ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়া হয়েছে কেবল একটি মাত্র নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ও তাদের নির্দিষ্ট মডেলের পণ্যকে। একপেশে এই টেন্ডারের নথিতে সেই কোম্পানি বাদে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে না। অন্যদিকে, সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট-২০০৬ ধারা ১৫(১) এবং পিপিআর ২০০৮ নিয়ম ২৯, অনুযায়ী সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) দ্বারা অনুমোদিত যে, কোন ক্রেতা এমন কোন স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত করতে পারবে না যেখানে কোন নির্দিষ্ট ওইএম (OEM) এর ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট বা নকশা থাকে বা উৎপত্তির দেশ বা উৎপাদনের ধারায় দেশের নাম উল্লেখ করতে পারবে না। কিন্তু, এই ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্পের স্পেসিফিকেশনে প্রতিটি পণ্যের ব্র্যান্ডের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে শুধুমাত্র একটি ওইএম (OEM) অংশ নিতে পারে।
এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে বলে সরকার এ ধরনের অসম প্রতিযোগিতা ও নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একপেশে টেন্ডার প্রকাশের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। সরকারের সর্বশেষ বিবৃতি অনুযায়ী, অর্ডার মেমো নং: ২১, ০০, ০০০০, ৩৬৪, ২২, ০২০, ২১-৮৭ তারিখ ১৩ জুন ২০২১ (সংযুক্ত), যেখানে বলা হয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সম্পৃক্ত কতিপয় অংশীজনের নিকট হতে এরূপ পাওয়া গেছে যে, দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্রয়কারী আবশ্যকীয় পণ্যের ব্র্যান্ড নাম বা মডেল এবং নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের নাম উল্লেখ করছে। অধিকন্তু, কোন কোন ক্রয়কারী সংস্থার বিভাগীয় দর – তফসিলে আবশ্যকীয় পণ্যের ব্র্যান্ড নাম বা সুনির্দিষ্ট দেশ/ অঞ্চলের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যা পিপিএ/পিপিআর এর উপযুক্ত বিধানের পরিপন্থী। দরপত্র দলিল বা রেট সিডিউলে পণ্যের ব্র্যান্ড/ দেশের নাম নির্দিষ্ট করে দেয়ার ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে না, অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ হ্রাস পায়, সকল দরদাতার প্রতি সমআচরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পক্ষপাতমূলক টেন্ডার এ খাতে অসম প্রতিযোগিতার তৈরি করবে; যার ফলে কেবল জনগণের অর্থ অপচয় হবে। তারা আরো মনে করেন, ইন্টারফেস প্রয়োজনীয়তাগুলো টপোলজির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যা কর্মক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতেও অক্ষম হবে।
টেন্ডার অনুযায়ী, এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের একজন বিশেষজ্ঞ এর মতে, “নেটওয়ার্কিং, কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ ডিজাইনের সর্বোচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ জনগণের অর্থ সাশ্রয় হবে।”
প্রকল্প বাস্তবায়নে টেন্ডারে উল্লিখিত যে সব নিরাপত্তা সামগ্রীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তা দিয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না মেনে এ ধরনের পক্ষপাত ও অসম প্রতিযোগিতা বিরাজমান থাকলে আমাদের দেশের শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে আইসিটি অবকাঠামো সরবরাহকারী দক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে যাবে বলে মনে করেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
Collected from barta24