বিনিয়োগ মন্দায় বাড়বে বেকারত্ব, শ্রমের মূল্য কমে যাবে। একই সঙ্গে উৎপাদনশীলতাও কমে যাবে। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ খাতেও উৎপাদন কমবে। এতে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশ এখন চড়া মূল্যস্ফীতির কবলে আক্রান্ত। আগামী বছরে এ হার আরও বাড়বে। মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা আরও বেড়ে যাবে। সুদের হার বেড়ে গিয়ে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশের মুদ্রার মান আরও কমে যাবে। রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আইএমএফ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক অক্টোবর’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এছাড়া আইএমএফ এ দিনে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আরও কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় যে বিঘ্ন করোনার সময় থেকে ঘটছে, তা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আরও বেশি প্রকট হয়েছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় একদিকে দাম বেড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদনও কম হয়েছে।
পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন। থাইল্যান্ডে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেড়ে গেছে। এ হার আরও বাড়বে। সুদের হার বাড়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে।
এতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে।
এতে অর্থের প্রবাহ কমে যাবে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতির হার কতটুকু কমবে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা বিশ্ববাজারে পণ্য বাড়ছে এবং মুদ্রার মান কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে সুখবর দিয়ে বলা হয়, আগামী বছরে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমবে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমতে পারে। তবে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কর্মসংস্থানের গতি বাড়বে না। ফলে বেকারত্ব আরও বেড়ে যাবে।
প্রতিবেদনে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের অর্থনীতি পর্যালোচনা করে বলা হয়, এদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমার কারণে ভোগের মাত্রা কমে যাবে। এর প্রভাবে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করবে।
যা ওইসব দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে আঘাত করবে। বেসরকারি খাতের প্রবাহ কম হওয়ার কারণে শ্রমিকদের ভাতা কমে যাবে। এতেও ভোগের মাত্রা কমে যাবে।
এতে বলা হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে একটি অস্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। এরপর থেকে অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় এগোবে।
আইএমএফ’র অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। তবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়তে পারে। ইউরোপ-আমেরিকার মন্দার কারণে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
করোনার প্রভাবে গত বছর মজুরির হার বৃদ্ধি পায়নি। এ বছরও এ খাতে সুখবর নেই। কারণ মুদ্রা সরবরাহ কমানোর কারণে বেসরকারি খাতের তৎপরতা কমে যাবে। ইতোমধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ফলে মজুরিতে নেতিবাচক প্রভাব চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে। সূত্র জানায়, ইউরোপ-আমেরিকার মন্দার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় সেপ্টেম্বরে কমে গেছে।
আগামীতে এ হার আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্সও কমেছে। তবে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
Collected From jugantor