৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারের পদসমূহ বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারী পদ বিভাজনের মাধ্যমে ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসকে প্রদান করার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে অবিলম্বে এটি বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার তালিকায় অপেক্ষমাণ প্রার্থীবৃন্দ।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চার শতাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় তাদের হাতে পিএসসির আঙিনায়, দুর্নীতির ঠাঁই নাই, নন ক্যাডারদের বাঁচাও, পরিশ্রমী মেধাবীদের মূল্য দাও, মেধাবীরা রাজপথে এদেশের লজ্জা, দেখে হাসে দুর্নীতি খুলবে তার দরজা, পিএসসির নিশানা, বেকার গড়ার কারখানা সংবলিত প্লেকাড দেখা যায়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পিএসসি বর্তমানে ৪০তম বিসিএসের নন ক্যাডারদের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা একেবারেই অযৌক্তিক। একটা বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল হয়ে গেলে ওই বিসিএসের জন্য নতুন কোনো বিধিমালা কার্যকর হওয়ার কথা না। কিন্তু পিএসসি ২০১০ সংশোধিত ২০১৪ সালের বিধান কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে করে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। আবার নতুন নিয়মে কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই এত করে দুর্নীতি করার সুযোগ তৈরি হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে নন ক্যাডারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া পূর্ববর্তী নিয়মে করার দাবি জানিয়ে বর্তমান এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য পিএসসিকে পাঁচদিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ার দেন বক্তারা।
এসময় ৪০তম বিসিএসে নন ক্যাডারে মনোনিত মোহাম্মদ মুসা বলেন, ৪০তম বিসিএস নন ক্যাডারের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ফলাফল দেয়া হয়েছে। যখন একটা বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল হয়ে যায়, তখন ওই বিসিএসের জন্য নতুন কোনো বিধিমালা কার্যকর হওয়ার কথা না। পূর্ববর্তী বিসিএসে নিযোগ প্রক্রিয়ায় যে ধারাবাহিকতা ছিল সে অনুযায়ী ৩৮তম বিসিএস নন ক্যাডার নিয়োগ পেয়েছে। একই নিয়মে ৪০ থেকে ৪৪ পর্যন্ত আগের নিয়মে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু, পিএসসি চলাকালীন বিসিএসের শেষ প্রান্তে এসে ৪০তম বিসিএসের জন্য নুতন একটি নিয়ম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে যে প্রজ্ঞাপনের সময়কার খালি পদ অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হবে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
সমাবেশে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক অনিক রহমান বলেন, নন ক্যাডার বিধিমালা ২০১০ ও সংশোধিত বিধিমালা ২০১৪ এর ধারা ৫ এর ৩ উপধারায় পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পূর্ববর্তী বিসিএসের নন ক্যাডারদের একাধিক তালিকা দিতে পারে। আমাদেরকে ছয় মাস অপেক্ষায় রাখছে। পিএসসি কোনো দপ্তর বা অধিদপ্তরে সুযোগ দেয়ার জন্য আমাদেরকে বঞ্চিত করছে। ঠিক কী কারণে এই পদগুলোকে বিভাজিত করতে চাচ্ছে বা যেই বিসিএসের প্রজ্ঞাপন এখনো দেয়নি সেটার জন্য পদ সংরক্ষণ করছে সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। পিএসসির এই বিধিমালা নতুন কোনো বিসিএসের জন্য কার্যকর হোক। কিন্তু আমাদের জন্য না।
৪০ বিসিএসের নন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত আরেক প্রার্থী মো. সুলতান মিয়া বলেন, চলবি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত আমরা দেখবো। নাহলে পিএসসি ঘেরাও কর্মসূচি ও আমরণ অনশন শুরু করব। পিএসসি বলছে তারা ২০১০ ও সংশোধিত ২০১৪ সালের বিধি কার্যকর করবে। কার্যকর করতে হলে নতুন কোনো বিসিএসের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে হবে।
সমাবেশে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো
১) যেহেতু বিজ্ঞপ্তিতে ৪০-৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় নাই সেহেতু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক বিজ্ঞপ্তির পরে ৪০-৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারী নন-ক্যাডার পদ বিভাজনের মাধ্যমে পদসংখ্যা নির্ধারণের এই বেকার বিরুদ্ধ ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
২) বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারী পদ বিভাজনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার এর পদ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসকে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং তারিখওয়ারী পদ বিভাজনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৩) করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ইতিহাসের দীর্ঘকালীন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে সুপারিশ করতে হবে।
৪) যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ২৯ মার্চ, ২০২২ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত ৩৪-৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বর্তমান উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৫) বাংলাদেশের শিক্ষিত ও মেধাবী ছাত্রসমাজকে পিএসসি মূল বক্তব্য আড়াল করে অর্থাৎ যার যা প্রাপ্য তাকে তাই দেয়া হবে এই ভিত্তিহীন কথা বলে যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং বেকার সৃষ্টির এই অপপ্রয়াস অনতিবিলম্বে বন্ধ করে বেকারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬) বিগত এক যুগে পিএসসি যে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
Collected From bhorerkagoj