Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
জব মার্কেট : ভালো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অবকাঠামো বেশি জরুরি

জব মার্কেট অনেকটা বেসামাল হয়ে আছে। দিনদিন শিক্ষিত বেকার বেড়েই যাচ্ছে। তার ওপর বর্তমান করোনা তাণ্ডব। তবে এর মাঝেই সবাই এগিয়ে যাবে, খুঁজে নিবে নিজের গতিপথ। প্রতিযোগিতা করেই জব মার্কেটে নিজের অবস্থান তুলে ধরবে।

একটি প্রতিষ্ঠানে নানা রকম দায়িত্বের বিভাগ থাকে। আবার সব বিভাগের দায়িত্বেই থাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। থাকে বিভাগীয় প্রধান। জব মার্কেটে বিশেষ করে প্রাইভেট জবে প্রায়শই এমপ্লয়িদের দেখা যায় জব পরিবর্তন করতে। প্রতিটি জব পরিবর্তনে থাকে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ। সেই কারণগুলো ব্যক্তি বিশেষের জন্য মনে হতে পারে অনেক বেশি দুর্বল, আবার অনেকের জন্য যৌক্তিক।
কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড পরিচিতি আছে, তারপরও এমপ্লয়িরা জব পরিবর্তন করে থাকে। এর পেছনে কারণ হিসেবে আর্থিক কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার চেয়ে মানসিক শান্তি বড় হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র রিপোর্টিং বসের অযৌক্তিক নির্দেশনার কারণেই অনেকে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকেও জব পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জব পরিবর্তনে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি অনেক বেশি অগ্রগণ্য। নির্দিষ্ট সময় অন্তর যদি এমপ্লয়িদের বেতনাদিসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা পরিবর্তন করা না হয়, তখন এমপ্লয়িরা সামাজিক-পারিবারিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব কিছুর যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন জব পরিবর্তনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটাকে পজিটিভলি দেখা যেতে পারে। নীতি নৈতিকতার মধ্য থেকে প্রতিটি এমপ্লয়ি চায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধার পরিবর্তন।

পুরাতন এমপ্লয়িদের থেকে যদি একই কাজের বা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন এমপ্লয়িরা বেশি বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি বেশি পেয়ে থাকে তখন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এমপ্লয়িরা জব ছেড়ে দেয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বার্ষিক নিরূপণের মাধ্যমে এমপ্লয়িদের সঠিক যাচাই বাছাই করলে তখন কোনও লেবেল থেকেই প্রশ্নের উদ্রেক হয় না। ব্যক্তি সম্পর্কের জন্যও অনেক এমপ্লয়ি বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা একসময় জব পরিবর্তন করার মতো সিদ্ধান্তের কারণ হয়ে ওঠে।

একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো একটি প্রতিষ্ঠানকে সুশৃঙ্খল রাখতেও সহায়তা করে। ব্যক্তি পছন্দের কারণেও সেই শৃঙ্খলাকেও ভেঙ্গে দিতে পারে যার কারণে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শৃঙ্খলিত পরিকল্পনা প্রণয়নে মানব সম্পদ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি সুন্দর অবকাঠামো সম্পন্ন মানব সম্পদ বিভাগ  একটি প্রতিষ্ঠানকে  সুশৃঙ্খল করে তুলতে পারে। এমপ্লয়ি কেন্দ্রিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকতে পারে, যাতে এমপ্লয়িরা উৎসাহিত হতে পারে।

একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কর্ম পদ্ধতিই প্রত্যেকটি বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে এবং সকল বিভাগের সম্মিলিত কর্মযজ্ঞই প্রতিষ্ঠানকে সফল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শিখরে পৌঁছাতে সহায়তা করে। কোনও বিভাগ ছাড়া সামগ্রিক ভালো ফল প্রতিষ্ঠান আশা করতে পারে না। একটি বিভাগের কোনও নেগেটিভ কর্মকাণ্ডের ফলে যেমন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্র্যান্ড ইমেজ নষ্ট হয় তেমনি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি করতে হলে সব বিভাগকেই সমান গুরুত্ব প্রদান করা উচিত।

যখন কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে বর্তমান এমপ্লয়ি থেকে ছেড়ে যাওয়া এমপ্লয়ির সংখ্যা বেশি থাকে তখন অবশ্যই জাস্টিফাই করা খুবই জরুরি। কেনো এমপ্লয়িরা জব ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে? কোনও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান কখনো ট্রেনিং সেন্টারে রূপ নিবে তা কখনো প্রত্যাশা করে না। জব ছেড়ে দেওয়ার পিছনের কারণগুলো নির্ণয় করলেই এর সঠিক কারণ বের হয়ে আসবে। কারণগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলেই এর থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ আছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে একজন দক্ষ এমপ্লয়িকে তার প্রাপ্য সুবিধা দিয়ে তাকে রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আভিধানিক শিক্ষা প্রাপ্ত নয়। সময় শ্রম দিয়ে বিভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়, দক্ষ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। একজন দক্ষ কিংবা অভিজ্ঞ ব্যক্তি জব ছেড়ে দিলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে তার ব্যবহৃত চেয়ারটি হয়তো শূন্য হয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবে তার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার শূন্যতায় ভুগতে থাকবে প্রতিষ্ঠানকে।

ইমেডিয়েট সিনিয়ররা তার অধস্তন এমপ্লয়িদের আর্থিক সুবিধা দিতে পারে না কিন্তু তারা তাদের এমপ্লয়িদের মানসিক শান্তি দিতে পারে। এই মানসিক শান্তি অনেক সময় অনেক এমপ্লয়ি প্রতিষ্ঠানের প্রতিও আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি একটি পরিবার এই ভাবনা তৈরি করার দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা পরিষদের। বাৎসরিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে এমপ্লয়িদের একত্রিত করা, ভালো কাজের জন্য উপহার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া খুব জটিল কিছু নয় কিংবা খরচ সাধ্যও নয়, এটা শুধু একটা ভালো পরিকল্পনার অংশ মাত্র। কাজের স্বীকৃতি আরও ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

প্রতিটি এমপ্লয়িকে একেকজন ব্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুশৃঙ্খলটা বজায় রাখতে হবে। যদি কোনও প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড কোনও প্রতিষ্ঠান হয়, তবে প্রত্যেক এমপ্লয়ির মাধ্যমেই ব্যবসা আসার সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক এমপ্লয়িকে বেসিক ট্রেনিং দিয়ে একেকজনকে মার্কেটিং কিংবা সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে তৈরি করা যায়, যাতে সার্বিক রেভিনিউ এর উপর পজিটিভ প্রভাব পড়তে পারে। যাতে প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে।

প্রতিষ্ঠান বড় কিংবা ছোট ধারনার চেয়ে “প্রতিষ্ঠানটি আপনার” ধারণা তৈরি করতে পারলে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অনেকেই জব শুরু করার পর ছয় মাস কিংবা এক বছর বা দু’বছর অভিজ্ঞ হয়ে গেলেই জব ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। বেশি সুবিধা প্রাপ্তির সন্ধান করতে থাকে। নিজেকে এক্সপেরিয়েন্সড হিসেবে গড়ে না তুলে এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।

বাস্তবিক ভাবেই যেকোনো ব্যবসায় প্রতিটি বিভাগের ভূমিকাই রয়েছে অপরিসীম। বিভাগীয় প্রতিযোগিতা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে করে তুলে আরও বেশি গতিশীল। সবার উপলব্ধিই তৈরি হয় আমিই শ্রেষ্ঠ। একটি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সবার সেরা অনুভূতি অনেকাংশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি সকল বিভাগকে সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় তবেই বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের মধ্যে কোনও ধরনের অসন্তোষ কাজ করবে না বরং কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ। সবাই একটি টিম হিসেবে কাজ করবে, যার সফল পরিণতি ভোগ করবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ভালো প্রতিষ্ঠানের দিকে দৃষ্টিপাত না করে কাজের প্রতি মনোযোগী হয়ে নিজেকে চাহিদা সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলেন। জবের পেছনে আপনি ঘুরবেন না, জব আপনার পিছনে ঘুরবে, সেভাবে নিজেকে তৈরি করুন।

ভালো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যে কোনও প্রতিষ্ঠানের ভালো অবকাঠামো খুবই জরুরি। ভালো অবকাঠামো থাকলে একটি প্রতিষ্ঠান ভালো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে উঠবে সহজেই।

লেখক
মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
Collected from
dhakapost