ফেনীতে ঝরে পড়েছে ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী
কর্মক্ষেত্র, জীবন বা অর্থনীতির পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে ঝরে পড়েছে অসংখ্য মেধাবী মুখ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র দেখা গেছে ফেনীতেও। সেখানে দুই বছরের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই এইচএসসি পরীক্ষার আগে শিক্ষা জীবনের ইতি টেনেছে। ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীর কেউ পরিবারকে সহযোগিতা করতে কাজে জড়িয়েছে, কেউবা পাড়া-মহল্লার বড় ভাইদের হাতিয়ার হিসেবে কিশোর গ্যাংয়ে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে, ছাত্রীদের অনেকেই হয়েছে কিশোরী বিয়ের শিকার।
ফেনী জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ফেনীতে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৮ হাজার ৯৪৫ জন। দুই বছরের মাথায় ওই ব্যাচ থেকে এইচএসসি ও আলিমে অংশ নেয় মাত্র ১১ হাজার ২৭৬ জন। অর্থাৎ মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে আসতেই ঝরে পড়েছে ৭ হাজার ৬৬৯ জন শিক্ষার্থী। ফেনীর মতো অগ্রসর এ জেলায় অন্তত ৪০ দশমিক ৪৮ ভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবনের ইতি টেনেছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে জেলার সোনাগাজী উপজেলায় এসএসসি ও দাখিলে অংশ নেয় ২৩৫২ জন। উচ্চ মাধ্যমিকে এসে ওই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৯৬৬ জনে। অর্থাৎ ১৩৮৬ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকের আগেই ছিটকে পড়েছে। শতকরা হারে যা ৫৮ দশমিক ৯৩ ভাগ। একইভাবে ফুলগাজীতে মাধ্যমিকে ১৯৯০ জন থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯০২ জন। দাগনভূঞায় ৩৪৫২ জনের মাঝে ১৭৮৯ জন, পরশুরামে ১২৬০ জনের মধ্যে ৭৩৯, ছাগলনাইয়ায় ২৪৩৮ জনের মধ্যে ১৫৮৩ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে ফেনী সদর উপজেলায় ২০২০ সালে মাধ্যমিকে অংশ নেয়া ৭৪৫৩ জনের ৫২৯৭ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়।
মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার বিশ্লেষণে দেয়া যায়, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার সব থেকে বেশি সোনাগাজী উপজেলায়, ৫৮ ভাগ। ফেনী সদর উপজেলায় তুলনামূলক কম, ২৯ ভাগ। ফুলগাজীতে ৫৪ ভাগ, দাগনভূঞায় ৪৮ ভাগ, পরশুরামে ৪১ ভাগ, ছাগলনাইয়ায় ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই শিক্ষা জীবনের ইতি টেনেছে।
তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার সঠিক হলেও উপজেলা পর্যায়ে উত্থাপিত হার সঠিক নয়। কারণ জেলা শহরেই অন্তত ডজনখানেক কলেজ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা উপজেলা পর্যায়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বেশির ভাগই জেলা শহরে এসে ভর্তি হয়েছে। যার কারণে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার হার বেশি মনে হচ্ছে।
ফেনী ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম জানান, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে এসএসসি ২০২০ ব্যাচ। এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্তত ৪০ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই ঝরে পড়েছে। বর্তমানে এসব শিক্ষার্থী কোথায় আছে, কী করছে—সেসব তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করেনি।
ফেনী জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক নসির উদ্দিন আশরাফী জানান, এ পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবে ১০-১২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার রেকর্ড আছে। কিন্তু এই ব্যাচের ৪০ ভাগ ঝরে পড়ার ঘটনা শিক্ষা বিভাগকে ভাবিয়ে তুলছে। যদিও ঝরে পড়াদের অন্তত ২ ভাগ অন্য জেলা অথবা দেশের বাইরে পড়াশোনায় রয়েছে।
সদ্যই ফেনী জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন শফী উল্লাহ। এরই মধ্যে ফেনীর শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা জানার সুযোগ হয়নি তার। তবে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
Collected from observerbd