Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
টাকা পাচ্ছেন না ই-কমার্স ক্ষতিগ্রস্তরা

ই-কমার্স বাণিজ্যের নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা লুটে নিলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সেই অর্থ ফেরত দিচ্ছে না অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। বরং অভিযুক্ত কর্মকর্তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে খোদ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভ্যালির চেয়ারম্যান জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে বাণিজ্য শুরু করলেও এখনো আগের সার্ভার চালু করেনি। ফলে লাখ লাখ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা ফেরতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। আবার যারা টাকা দেওয়া শুরু করেছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও জামিনে এসে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে গড়িমসি করছে। এ ধরনের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের সিইও-কে তলব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শুনানি হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিউকমের গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি অর্থ ফেরত পেয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জামিনে বেরিয়ে আসার পর টাকা ফেরতের কার্যক্রম থেমে গেছে। একাধিকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের তালিকা দেয়নি তারা। তালিকা না পাওয়ায় এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা টাকাও গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, কিউকম, আলিশা মার্টসহ ই-কমার্সের ১৩ কোম্পানির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কার্যক্রম গ্রহণ করলেও জায়ান্ট কোম্পানি ইভ্যালি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা এক টাকাও ফেরত পাননি।  এমন কি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করলেও পুরনো গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যাপারে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শামীমা বলেন, অবশ্যই আমাদের টাকা রিফান্ডের পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য আমাদের সার্ভার ওপেন করে দিতে হবে। সার্ভার ওপেন না করলে এটা সম্ভব হবে না। এ জন্য অ্যামাজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ রাসেল কারাগারে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
কত টাকা ফেরত পেল গ্রাহকেরা : কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের ২৮ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ৩৪ হাজার ৬৩৭ জন গ্রাহক ৩০২ কোটি ২১ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। কিউকম, আলিশা মার্ট, দালালপ্লাস, বুমবুম, আনন্দবাজার, থলেডটকম. ধামাকাসহ মোট ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক এই অর্থ ফেরত পেয়েছেন। তবে ফেরত পাওয়া অর্থের এক কানাকড়িও আসেনি ১৩ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে। তৃতীয় পক্ষের পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানে যেসব টাকা আটকে ছিল কেবল সেই টাকাগুলো ফেরত পাচ্ছে গ্রাহকেরা। সূত্র জানায়, ই-কমার্স নীতিমালা জারির পর ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর থেকে ই-কমার্সে পণ্য কেনার জন্য যেসব গ্রাহক টাকা পরিশোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য না দেওয়ায় ওই টাকা সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে না ঢুকে তৃতীয়পক্ষ পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান বা এসক্রো সার্ভিসে আটকে আছে, কেবলমাত্র সেই টাকাগুলো ফেরত পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা। গ্রাহকের যে টাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গেছে, তার কানাকড়িও ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। উদাহারণ দিয়ে সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের জুনের পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টে অর্ডার করে পণ্য বুঝে পাননি এমন গ্রাহকদের ৪২ কোটি টাকা এসক্রো সার্ভিসে আটকে ছিল। ওই টাকা থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা। তবে এর এক টাকাও আলেশা মার্ট পরিশোধ করেনি। তারা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকা দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টে গত অক্টোবর পর্যন্ত গ্রাহকেরা প্রায় ২ হাজার ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা করেছেন। এর মধ্যে আলেশা মার্ট ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে আলেশা মার্টের ৫৬টি হিসাবে এই অর্থ তুলে নেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত যে অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে সেগুলো আলেশা মার্টের অ্যাকাউন্টে ঢুকেনি। পণ্য না দেওয়ার কারণে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান এসএসএল কমার্সের হিসাবে আটকা ছিল। এখন এসএসএল কমার্স সেই টাকাই ফেরত দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, এর আগে আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা ২৩৯ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছেন। তবে এর এক টাকাও পরিশোধ করেনি কিউকম। পুরো টাকা ফেরত গেছে এসক্রো সার্ভিস ফস্টারের অ্যাকাউন্ট থেকে। বরং প্রতিষ্ঠানটির সিইও রিপন মিয়া জামিনে বেরিয়ে এসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকা দিতে গড়িমসি করছেন। এর ফলে ফস্টার থেকেও টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। উপরন্তু কিউকমের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জামিনে এসে গোডাউনে রাখা গ্রাহকের পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রতিষ্ঠানটির গোডাউন সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গোডাউন থেকে গ্রাহকের পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান জানান, প্রতারণার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের আটক করার পর কিউকমের গোডাউনটি পুলিশের হেফাজতে ছিল। পরে কর্মকর্তারা জামিনে বেরিয়ে এসে গোডাউনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় গোডাউনটি পরিদর্শন করেছিল ই-কমার্স সেলের কর্মকর্তারা। সে সময় সেখানে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার পণ্য ছিল। এখন পুনরায় গোডাউনটি পরিদর্শন করা হবে। পণ্যের হেরফের দেখা গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অবশ্য গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে গড়িমসি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কিউকমের সিইও রিপন মিয়া। গত রবিবার দুপুরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও জানান, তারা প্রতি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে গ্রাহকদের তালিকা দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৪৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকা দিয়েছেন। এ ছাড়া গোডাউনে রাখা গ্রাহকদের সব মালামাল বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Collected from bd-pratidin