প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা ও কর্মসংস্থানের লক্ষে রাজধানীতে আয়োজন করা হয়েছে চাকরি মেলার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের উদ্যোগে এবং সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির সহযোগিতায় দিনব্যাপী আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা-২০২৩ উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত এই মেলায় সকাল থেকেই অংশ নেয় ৫৪টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা ও কর্মসংস্থানের লক্ষে বিগত ৮ বছর থেকে এ চাকরি মেলর আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
প্রধান অতিথি বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, সক্ষম, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে শিক্ষিত প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের চাকরির সুব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলা’ চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে; সেই লক্ষে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পে একজন উদ্ভাবক টকিং হোয়াইট স্টিক আবিষ্কার করেছেন উল্লেখ করে বলেন, এই সাদা ছড়ি দিয়ে এক জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ বা ধাক্কা খাওয়ার আগেই টকিং হোয়াইট স্টিক কথা বলে সতর্ক করে দেয়। তিনি এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসেসটিব টেকনোলজি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি বিভাগ থেকে হুইল চেয়ার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে দেশে স্বল্পখরচে উচ্চ প্রযুক্তি সম্বলিত হুইলচেয়ার তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রকে বৈষম্যমুক্ত ও মানবিক করতে হলে সকল সুযোগ-সুবিধা সকলের জন্য সমন্বিতভাবে ভাবে কাজে লাগাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোনও প্রতিবন্ধী ভাই-বোন যেন কোনও নাগরিক সুবিধা হতে বিন্দুমাত্র বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষে আমরা কাজ করব।
পলক বলেন, আইসিটি বিভাগের স্টাটআপ প্রকল্প, স্টাটআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের পুঁজি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আগামী বছর থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলার পাশাপাশি উদ্যোক্তা সম্মেলন করার ঘোষণা দেন।
প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম ভাই-বোনদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা সীডমানি হিসেবে পুঁজি প্রদানের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাই-বোনেরা জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন। পরে তিনি মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মেলায় সারাদেশ থেকে প্রায় ৪৫০ জন চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক সচিব শেখ মো. মনিরুজ্জামান এবং সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, প্রতিবন্ধীদের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, মাই আউটসোর্সিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিবুল বাশার।
উল্লেখ্য, এর আগে সারাদেশ থেকে প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সিভি জমা দেন অনলাইনে। এ ছাড়া, মেলায় সরাসরি উপস্থিত হয়েও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীরা সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান। যাদের তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতা রয়েছে তাদের নিয়োগের লক্ষে ইন্টারভিউ গ্রহণ করে মেলায় অংশগ্রহণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।
ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, কল সেন্টার এজেন্ট, প্রোগ্রামিংসহ নানা পদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিভিন্ন ট্রেডবডি বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। মেলায় অংশগ্রহণকারী চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), সাইবার ক্যাফে ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ আইসিটি শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধিতা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিষ্ঠান।
আশা করা হচ্ছে, এ মেলা থেকে ৪০-৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এ মেলা থেকে ১৫০-২০০ জন চাকরিপ্রার্থীকে পরবর্তীতে নিয়োগের লক্ষে সাক্ষাতকারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
Collected From Rising.bd