করোনা পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে গঠিত ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ জোট নতুন নামে যাত্রা করেছে। ‘এডুকেশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (ইএবি)’ নামের এই ক্যাম্পেইন জোট সবার জন্য একীভূত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ মিলনায়তনে দিনব্যাপী আয়োজিত শিক্ষা সম্মেলন ২০২৩-এ এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সূচনা পর্বে সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন বলেন, এই জোটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একসাথে কাজ করা চালিয়ে যাওয়া যেন একত্রে মিলে আমরা আরো বেশি সংখ্যক শিশুদের কাছে পৌঁছাতে পারি যাদের আমাদের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব সকলের সমন্বিত দায়িত্ব। এই প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে শুধু আমাদেরই নয়, শিশুদের কণ্ঠ তুলে ধরার জায়গায়ও তৈরি করে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি পর্বে গণস্বাক্ষর অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সবাই মিলে আরো শক্তিশালীভাবে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনের শেষে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই জোট মানসম্মত ও একীভূত শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো দূর করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকারকে সহায়তা করবে।
‘সবার জন্য একীভূত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ’ স্লোগান নিয়ে এই জোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা জনপ্রিয় করতেও উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশকে আনন্দদায়ক করতে কাজ করা ব্যক্তি/সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে।
করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা জরুরি হয়ে পড়ে। লকডাউনের কারণে বাধ্যতামূলক এই ছুটি গ্রাম-শহর নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার দিকে ঠেলে দিয়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এই অবস্থায় সমন্বিত কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ মিলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘নিরাপদ স্কুলে ফিরি’ শীর্ষক জোট তৈরি করে।
জাতীয় পর্যায়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল সময়ে পরিচালিত এই জোটের করা একটি গবেষণার ফলাফল এই সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, করোনার বাধ্যতামূলক ছুটি শেষে স্কুল খোলার তিন সপ্তাহ পর উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে কম উপস্থিতি চতুর্থ শ্রেণিতে (৬৫ শতাংশ) আর সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণিতে (৮৬ শতাংশ)। মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে কম উপস্থিতি নবম শ্রেণিতে (৫৭ শতাংশ) ও সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ষষ্ঠ শ্রেণিতে (৬৯ শতাংশ)।
স্কুলে অনুপস্থিতির পেছনে রয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরা, বাল্যবিয়ে, পরিবার অন্য জায়গায় চলে যাওয়া, অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসায় চলে যাওয়া, পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি। গবেষণায় উঠে এসেছে যে লকডাউন চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিরক্তি, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপে ভুগেছে। স্কুল খোলার পর এসব সমস্যা কমে আসে। কিন্তু কিছু নতুন সমস্যা দেখা দেয় যেমন, শেখায় অসুবিধা, পড়া বুঝতে সমস্যা, অন্যদের সাথে মেলামেশায় অসুবিধা ইত্যাদি।
এই গবেষণায় ভবিষ্যতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশভিত্তিক শিক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি ‘ইমার্জেন্সি রিসার্চ ফ্রেমওয়ার্ক’ গড়ে তুলতে সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া, শেখার ফাঁক-ফোকর মূল্যায়ন এবং উত্তরণের পরিকল্পনাও জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণ করতে বলা হয়।
এই জোটের সচেতনতামূলক প্রচারণা ও গবেষণার অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা ও অংশীদারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল শিশুর জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়।
জোটে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ, গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এডুকো বাংলাদেশ, এফআইভিডিবি, ফ্রেন্ডশিপ, হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ, হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, এলসি ইউকে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, রুম টু রিড, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, সাইট সেভার্স বাংলাদেশ, স্ট্রমি ফাউন্ডেশন, টিচ ফর বাংলাদেশ, ভিএসও, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও ইপসা।