নতুন প্রজন্মের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনোটির উপ-উপাচার্য নেই, কোনোটির নেই রেজিস্ট্রার। আবার কোনোটির ট্রেজারার পদে নিয়োগই হয়নি। এছাড়া শিক্ষক সংকট নিয়ে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকট তো রয়েছেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে— অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এখনই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছে, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। ইউজিসি বরাদ্দ দিতে পারছে না, তবে তাদের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষক সংকটের বিষয়ে ইউজিসির সদস্য ড. দিল আফরোজা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে পাঁচ জন করে শিক্ষক দেবো। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আর্থিক অবস্থা ভালো না, সে কারণে বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিনিমাম যেটুকু প্রয়োজন, এছাড়া উদ্বৃত্ত কোনও কিছু দেওয়া যাচ্ছে না।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ৯ জন শিক্ষক ও তিনটি বিভাগে ১০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই উপ-উপাচার্য এবং কোনও অধ্যাপক। নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও ক্যান্টিন। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাজ চলছে চার জায়গায়। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সংগীত— এই পাঁচটি বিষয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০০ জন। এদের বিপরীতে ১০০ জন শিক্ষক প্রয়োজন থাকলেও রয়েছেন মাত্র ২৫ জন। অর্থাৎ, ২৫ শতাংশ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি রানা আহমেদ জানিয়েছেন, স্থানীয় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে— শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন-১, মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন-২।আর বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এছাড়া ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল নেই। ছাত্রীদের ভাড়া করা একটি হল থাকলেও সেখানে ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩৫ জনের। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাঠদান চলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগের। এগুলো হলো— সংগীত, বাংলা, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান। মাওলানা সাইফউদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে চলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ক্লাস।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়টি নানাভাবে অবহেলিত ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটা বিভাগে প্রায় ২০ জন করে শিক্ষক আছেন। কিন্তু আমার এখানে সবকটি বিভাগ মিলে আছেন মাত্র ২৫ জন শিক্ষক। খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৮ থেকে ১০ জন। ইউজিসি থেকে এখানে কোনও শিক্ষক দিচ্ছে না। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য প্রকল্প করা হয়েছে এবং সেটা ডিপিপি হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুতই নিজস্ব ক্যাম্পাস পাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।’
সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের ঘোয়ালগাঁও ও হাজরাই মৌজায় ৮০ দশমিক ৩১ একর জায়গার ওপরে গড়ে ওঠার কথা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির।
সিলেট থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি তুহিনুল হক তুহিন জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হলেও এখনও পর্যন্ত উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার পদটি খালি। প্রায় সাড়ে চার বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়নি। ল্যাব সুবিধা না থাকার পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত অধ্যাপক ও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
জানা যায়, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া না হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ও অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন সেকশনে জনবল নিয়োগ দেওয়ায় বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী বিদায় নিয়েছেন। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় সিভিল সার্জন অফিস লাগোয়া অস্থায়ী কার্যালয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির দাফতরিক চলছে। এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে এমবিবিএস, বিডিএস ও বিএসসি নার্সিং, পোস্ট বেসিক নার্সিংয়ের কার্যক্রম চলছে। সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে সাতটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি ডেন্টাল ও ১০টি নার্সিং কলেজ।
সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ কে এম ফজলুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এখনও শিক্ষক-অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি)। ইতোমধ্যে একজন উপাচার্যের মেয়াদ শেষে আরেকজন উপাচার্য দায়িত্ব নিয়েছেন। তার মেয়াদের প্রায় দুই বছর শেষ। অথচ এখনও শুরু হয়নি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।
রাজশাহী থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি দুলাল আব্দুল্লাহ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তৌসিফ কাইয়ুম জানান, ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু পর ওই বছরের ১ মে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিব। তিনি চার বছর দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল বিদায় নেন। একই বছরের ৩০ মে দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন। উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি এখনও। শুরু হয়নি জমি অধিগ্রহণের কাজও।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। তবে বাজেট পাস হলেও অর্থছাড় হয়নি। আগামী তিন থেকে চার বছরের আগে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শেষ হবে না। ফলে ২০২৫ সালের আগে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ করা সম্ভব হবে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ছয়টি ব্যাচে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৬ জন শিক্ষক থাকলেও ৪ জন রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। ফলে ২ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। অপরদিকে শিক্ষা ছুটিতে থাকার কারণে বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে রসায়ন বিভাগের ক্লাস ও ল্যাবের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই উপ-উপাচার্য। অধ্যাপক পদে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২ জন। এসব ছাড়াও ল্যাব ও ক্লাসরুম সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে চলছে বিশ্বদ্যিালয়টি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০১১ সালে। তখন থেকেই নানা সমস্যা নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ২ জন অধ্যাপক দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। উপ-উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়ায় অনেক কার্যক্রম চালাতে প্রশাসনকে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউনের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পর ট্রেজারার পদে সদ্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক মোবারক হোসেনকে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০:১ অনুপাতে শিক্ষক থাকার কথা বলা হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ১০ হাজার ৪২৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ২৮৮ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র একজন শিক্ষক। এত কমসংখ্যক শিক্ষকের মধ্যে আবার অনেক শিক্ষক পিএচডি ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৫ একরের ছোট ক্যাম্পাসটিতে চলছে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। প্রধান ফটক, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, মুক্ত মঞ্চ, শহীদ মিনার, বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ চলমান থাকলেও আবাসিক হল তৈরিসহ খেলার মাঠ, অ্যাকাডেমিক ভবন, বিভিন্ন কারিগরি বিভাগের জন্য আলাদা ভবন বা গবেষণাগার তৈরির কোনও কাজ চলমান নেই। প্রকল্পগুলো তিন থেকে চার বছর চলমান থাকলেও আশানুরূপ কোনও অগ্রগতি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ইনস্টিটিউটটিতে পিএইচডি করেছে শিক্ষার্থীরা এবং এখনও অধ্যয়নরত আছে। এছাড়া একটা খসড়া নীতিমালা করা হচ্ছে পিএচডি করানোর বিষয়ে।’
এসিসিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ অনেক কম। ফলে মানসম্মত গবেষণা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।’
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব জমি থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২১ বছর ধরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সাত বছর পর ৫টি ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত হচ্ছে ২৭ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক দিয়ে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ট্রেজারারের পদটি শূন্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১’ অনুযায়ী ওই বছরই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্বত্য আঞ্চলিক দলগুলোর নানান বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
রাঙামাটি থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি জিয়াউল হক জানান, পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে স্থাপিত হয় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গা না পাওয়ায় শহরের শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ১০০ শিক্ষার্থী দিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে আটটি ব্যাচে এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক সংকটও রয়েছে শুরু থেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি বিভাগ এবং ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট পাড়ানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন মোট শিক্ষক ২৭ জন। এরমধ্যে ২ জন উচ্চতর ডিগ্রি নিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। খণ্ডকালীন শিক্ষককের সংখ্যা মোট ১৫ জন। ইউজিসি অনুমোদিত পূর্ণকালীন অধ্যাপকের পদ ৬টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য থাকলেও অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য শুরু থেকে ট্রেজারারের পদটি শূন্য রয়েছে।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুই বছর ধরে ১৭টি পদে ৪৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ আটকে আছে।
উপাচার্য ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘ভিসি হিসেবে আমি নতুন যোগদান করেছি। পিডি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি এক মাস আগে। দেড় মাস হলো নতুন রেজিস্ট্রার পেয়েছি। পিইসি’র মিটিং রয়েছে। যদি মন্ত্রণালয় চারটি প্রকল্পের মেয়াদ এক্সটেনশন করে ৩ থেকে চার বছর, তাহলে এই মেয়াদে প্রশাসনিক ভবন, অ্যাকাডিমক ভবন, ছাত্রদের একটি এবং ছাত্রীদের হল করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে, এরপর তিন বার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তখন আমি ছিলাম না। কিন্তু ৬ বছরেও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। আমি এসেছি দেড়মাস হলো। যদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় তাহলে আমি করতে পারবো। টাকা তো বরাদ্দ আছেই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়
কিশোরগঞ্জে যাত্রা শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন একটি ১০ তলা ভবনে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ক্লাস। নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, উপ-উপাচার্য নেই, ল্যাবও নেই। স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র ৮ জন। শিক্ষার্থী রয়েছে ১২০ জন। পড়াশোনার বিষয় মাত্র চারটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা নির্ধারণসহ সব কিছু আটকে আছে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
কিশোরগঞ্জ থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি বিজয় রায় খোকা সরেজমিন করে জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে মাঠ ঠিকঠাক করছেন শ্রমিকরা। ভবনের সামনের পুকুরে মাটি ফেলে সেটি একটু ছোট করা হচ্ছে। নির্মিত হচ্ছে একটি পাকা রাস্তাও। ১০ তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এখনও। বাইরের দিকে রঙের প্রলেপ পড়েনি। চার তলা পর্যন্ত মোটামুটি কাজের উপযোগী করে সেখানে শুরু হয়েছে পাঠদান। মাত্র ৮জন স্থায়ী শিক্ষক এবং বাকি খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘বর্তমানে চারটি বিভাগে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক খণ্ডকালীন কাজ করবেন। আমরা মাত্র যাত্রা শুরু করলাম।’ তিনি বলেন, ‘ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে বেশকিছু অনুষদে ৫০টি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে। থাকবে চারটি ইনস্টিটিউট, তিনটি কেন্দ্র ও সাতটি গবেষণা কেন্দ্র। আর এগুলো চালাতে কী পরিমাণ জনবল লাগবে, সবই প্রস্তাব আকারে ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে গাজীপুরে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নেই, রয়েছে শিক্ষক সংকটও। আর সে কারণে প্রতি প্রোগ্রামের বিপরীতে ৩১ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে মধ্যে দুই বার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য লোক না পাওয়ায় নিয়োগ দেওয়া যায়নি।
গাজীপুর থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি রায়হানুল ইসলাম আকন্দ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৯ জন পূর্ণকালীন এবং ৪০ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে পাঠদান চলছিল।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম যোগদানের পর সম্প্রতি আরও ৮ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যা ১৭ জন। তবে আরও শিক্ষক প্রয়োজন বলে জানান আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আহমেদ।
শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে সামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি প্রোগ্রামের বিপরীতে ইউজিসির নিয়মানুসারে ৩১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইউজিসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এই শিক্ষক স্বল্পতা খুব দ্রুততম সময়েই কাটিয়ে তোলা হবে। যেহেতু এখানে বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত কোর্স রয়েছে’, সেহেতু হাতে-কলমে শিক্ষার গুরুত্ব বেশি। সিংহভাগ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ল্যাবে পঠন-পাঠন কাজে যুক্ত থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নেই। রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য দুই বার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও যোগ্য ব্যক্তি না পাওয়ায়, এ পদে লোক নিয়োগ দেওয়া যায়নি।’
Collected From Banglatribune