নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হলেও এখনও চাকরি করছেন তিনি। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
তবে আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী চলে যাওয়ার আগে তার চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে গেছেন।
অথচ গত বছরের ১৯ নভেম্বর সরকারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বদলি হন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমেদ। আর আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি। তাহলে কীভাবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সাবেক উপাচার্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের মেয়াদ বাড়িয়ে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন কর্মকর্তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও ধরেননি। এমনকি এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও কোনও উত্তর দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদে ২০২২ সালের ১ জুন উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান। এই পদের জন্য কম হলেও ২২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অথচ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল না আবুল কালামের। অভিজ্ঞতায় অন্তত ১০ বছরের ঘাটতি থাকলেও ২০২২ সালের ১২ জুন আবুল কালামকে অ্যাডহকে নিয়োগ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ। (সিমেবি/২০২২/৪৫০) স্মারকে ছয় মাসের জন্য জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ মোতাবেক আবুল কালামকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক সূত্র জানায়, (সিমেবি/২০২২/৪৫০) স্মারকে আবুল কালামকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য পদে যারা চাকরি করছেন, তাদের কোনও স্মারক নেই। এমনকি ৪৫০-এর আগেরও কোনও স্মারক নেই। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর ২০২২ সালের ৪ জুলাই যোগদানপত্র দাখিল করেন আবুল কালাম। একই তারিখে সিমেবি/রেজি./নিয়োগ/২০২২/৩৪/৬২০ পদে দাখিলকৃত যোগদানপত্রটি গৃহীত হয়। ছয় মাসের জন্য তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন আবুল কালাম। এরপর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পরিষদ শাখায় অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত ছিলেন।
গত ১৯ মার্চ চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কীভাবে চাকরি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন গত ১৮ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। দাফতরিক নথিপত্র দেখে বলতে হবে।’
এরপর গত রবিবার (২৬ মার্চ) দাফতরিক নথিপত্র দেখেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নথি দেখার এখনও সুযোগ হয়নি। এটা তো অফিসিয়াল ব্যাপার। যখন প্রয়োজন হবে আমি দেখবো। আর চাকরির মেয়াদ বাড়লে আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাবো।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘যদি আমি দেখি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের চাকরির মেয়াদ বেড়েছে, তাহলে তা আপনাকে জানাবো।’
মেয়াদ শেষ হলেও কীভাবে চাকরি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘চাকরির মেয়াদ অবশ্যই বেড়েছে। সাবেক উপাচার্য মেয়াদ বাড়িয়েছেন। মেয়াদ না বাড়লে কীভাবে চাকরি করছি।’ কবে চাকরির মেয়াদ বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা কাগজপত্র দেখে জানাবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক সূত্র জানায়, সরকারি কোনও কর্মকর্তার চাকরির পাশাপাশি অন্য কিছু করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বাধ্যবাধকতা না মেনেই সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিলকৃত জীবন-বৃত্তান্তে আবুল কালাম উল্লেখ করেছেন, তিনি কানাইঘাটের নাহার মেমোরিয়াল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। এ ছাড়া সিলেটের সোনারপাড়া শিবগঞ্জ এলাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক সূত্র আরও জানায়, ১৯৮৯ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এসএসসি, ১৯৯২ সালে একই বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯৫ সালে অর্থনীতিতে অনার্স ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯৬ সালে অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
Collected from banglatribune