Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে প্রয়োগদক্ষতায় শিখনক্ষতি সর্বাধিক

করোনাকালীন বন্ধের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক শিখনক্ষতির শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে প্রয়োগদক্ষতায় শিখনক্ষতি সর্বাধিক।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং লস’ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় এই গবেষণাকাজ সম্পন্ন করা হয়। গবেষণাকাজে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ওপর অভিক্ষা পরিচালিত হয়।


গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর মতামত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক করারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী।


অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসাডর চার্লিস হোয়াইটলি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল হাসান।


বুদ্ধিবৃত্তিক শিখনক্ষতি
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে প্রয়োগের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে শিখনক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গড় অনুধাবন দক্ষতা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার ক্ষেত্রে অসমতার মাত্রা খুবই বেশি এবং প্রয়োগদক্ষতার ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ। জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রে এই অসমতার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম বিশেষ করে বাংলায়।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে প্রয়োগ দক্ষতায় শিখনক্ষতি সর্বাধিক। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, গণিত ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ইংরেজি ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ অনুধাবনদক্ষতাও কমে গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং ইংরেজি বিষয়ে জ্ঞান এবং অনুধাবনের গড় দক্ষতা বেড়েছে। গবেষণায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার অসমতা দেখা গেছে। বিশেষ করে গণিতের অনুধাবনদক্ষতার ক্ষেত্রে অসমতা বেশি। তবে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের জ্ঞান-সম্পর্কিত প্রশ্নে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে উচ্চতর দক্ষতা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং ইংরেজিতে অনুধাবনের ক্ষমতায় তুলনামূলকভাবে কম শিখনক্ষতি দেখা গেছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতায় উচ্চমাত্রার অসমতা পাওয়া যায়। ইংরেজি বিষয়ে অনুধাবন দক্ষতার ক্ষেত্রে এই অসমতা সর্বোচ্চ, যদিও প্রয়োগদক্ষতার ক্ষেত্রে তা কম।

শিখনঘাটতি বিশ্লেষণ
দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে: দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ সব বিষয়ে (বাংলা, গণিত ও ইংরেজি) বর্তমান ও আগের শ্রেণির শিক্ষাক্রমে যথাক্রমে চরম এবং মধ্যম মাত্রার শিখনঘাটতিতে ভুগছে। প্রথম শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৩৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইংরেজিতে ৩১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং গণিতে ৭৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৪২ দশমিক ৭২ শতাংশ, গণিতে ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ  এবং ইংরেজিতে ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরমমাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে এমন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, গণিতে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৪৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৩৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরমমাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪৫ দশমিক ২০ শতাংশ, গণিতে ৪৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৪১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৪০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ অংশের মধ্যে তাদের বর্তমান ও আগের শ্রেণির শিক্ষাক্রমে মধ্যমমাত্রার শিখনঘাটতি দেখা গেছে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে: তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ, ইংরেজিতে ৩৬ তশমিক ৮১ শতাংশ, গণিতে ৪৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৪৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, গণিতে ৩৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৪৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ অংশ তাদের বর্তমান ও পূর্ববর্তী শ্রেণির শিক্ষাক্রমে মধ্যম মাত্রার শিখনঘাটতিতে ভুগছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে: চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে এমন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৪০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ইংরেজিতে ৩৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, গণিতে ৩৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষাক্রমে চরম মাত্রার শিখনঘাটতি রয়েছে, এমন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলায় ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, গণিতে ৪২ দশমিক ৯২ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৩৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৩৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ অংশের মধ্যে তাদের বর্তমান ও পূর্ববর্তী শ্রেণির শিক্ষাক্রমে মধ্যম মাত্রার শিখনঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

Collected From Banglatribune