কয়েক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা অনেকখানি বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরির বাজারে নিজেকে উপযোগী করে তুলতে বেশ কিছু টিপস অবলম্বন করা অবশ্যই প্রয়োজন। আজকে আমরা এই পোস্টে নিজেকে কিভাবে চাকরির উপযোগী করে তোলা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব। শেষ পর্যন্ত পড়লে বিস্তারিত সহজেই বুঝতে পারবেন।
চাকরির পড়াশোনা কিভাবে করতে হয় বা দিনে কয় ঘন্টা পড়লে চাকরি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করছি না। চাকরির জন্য নিজের মানসিকতা কেমন থাকা দরকার, ইন্টারভিউয়ের সময় আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন কি রকম হওয়া দরকার সেই বিষয়ে আজকে আমরা জানবো।
বিষয় সূচীঃ-
নিজেকে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে কিভাবে গড়ে তোলা উচিত?
১. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
২. বায়োডাটা/সিভি/রিজিউমে নিজের বিশেষত্ব তুলে ধরুন
৩. আকর্ষণীয় কভার লেটার
৪. ভদ্রতা, নম্রতা বজায় রাখুন
৫. প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করুন
৬. অনলাইনে ইন্টারভিউ হলে যা করবেন
৭. ইন্টারভিউ দেওয়া অনুশীলন (প্র্যাকটিস) করুন
চাকরির ইন্টারভিউতে করা কিছু কমন প্রশ্ন
নিজেকে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে কিভাবে গড়ে তোলা উচিত?
How to Prepare For Job Interview Tips in Bengali
চাকরি পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল চাকরির পড়াশোনা করা। সব ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই চাকরি নিশ্চিত এমনটা বলা ভুল। কেননা বেশিরভাগ চাকরিতেই পরীক্ষার সাথে সাথে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমেও নিয়োগ করা হয়। ইন্টারভিউ সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো পালন করলে নিজেকে সহজেই যে কোনো চাকরির জন্য উপযোগী করে তুলতে পারবেন।
ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে নিজেকে চাকরির জন্য যোগ্য করে তোলার জন্য নিচের দেওয়া বিষয় গুলি অবশ্যই পালন করতে হবে, এগুলি হল-
১. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
যে কোনো চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় চাকরিপ্রার্থীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়। তাই ইন্টারভিউয়ের সময় এমন কোনো অঙ্গভঙ্গি করা যাবে না যাতে প্রশ্নকর্তার মনে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। প্রশ্নকর্তার চোখে চোখ রেখে সোজা ভাবে বসে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে। যাতে প্রশ্নকর্তারা সহজেই বুঝতে পারে যে আপনি তাদের ওই কাজের জন্য একদম উপযোগী এবং সুযোগ পেলে ওই কাজটি আপনি দায়িত্ব সহকারে করতে পারবেন।
২. বায়োডাটা/সিভি/রিজিউমে নিজের বিশেষত্ব তুলে ধরুন
কোন চাকরির জন্য আবেদন করতে চাইছেন সেই নিরিখে নিজের বায়োডাটা বা সিভি তৈরি করুন। যদি কোন কাজের অভিজ্ঞতা বিশেষ করে ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত কাজের যদি অভিজ্ঞতা থাকে সেটি সিভিতে যুক্ত করতে ভুলবেন না। তাই সবথেকে ভালো হবে যদি আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করছেন সেই কাজটি সম্পর্কে আগে থেকে একটু জেনে নিয়ে তার ভিত্তিতে আপনার বায়োডাটা বা সিভিকে সাজাবেন।
৩. আকর্ষণীয় কভার লেটার
বায়োডাটার মতো কভার লেটারও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বায়োডাটা এবং কভার লেটার এর মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এই দুটোকে এক রকম করা যাবে না। কভার লেটারে নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকবে। সেইসাথে ওই সংস্থার কার্য পদ্ধতি আপনার কেন পছন্দ এবং কেন আপনি ওই সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে চান সেটি ও উল্লেখ করবেন। এতে নিয়োগকর্তারা আপনি প্রতি আকৃষ্ট হবে। কভার লেটার লেখার নিয়ম জানতে ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন।
৪. ভদ্রতা, নম্রতা বজায় রাখুন
ভদ্রতা এবং নম্রতা আপনি জোর করে দেখাতে পারেন না। এটা সহজাত হতে পারে আবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। তাই ইন্টারভিউয়ের সময় সর্বদা মুখে হালকা হাসি রেখে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যদি আপনি প্রশ্নকর্তাদের কোনো প্রশ্ন করেন এবং তার উত্তর পেয়ে যান তাহলে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাবেন। সেই সাথে যে পদের জন্য আপনি আবেদন করেছেন সেই কাজটি করার জন্য আপনি কতটা উৎসাহিত সেটা তাদেরকে বোঝাতে পারলে আপনি অন্যদের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।
৫. প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করুন
ইন্টারভিউয়ের সময় প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করার বিষয়টা একটু অদ্ভুত মনে হচ্ছে তাই না। কিন্তু নিজের কৌতুহল বশত কোন সংস্থা সম্পর্কে আপনার বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতেই পারে। এটা অবাক করার মত কিছু না। তাই আগে থেকেই ওই নির্দিষ্ট সংস্থা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিশেষ করে তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্ন আপনি ঠিক করে রাখবেন। আর এই প্রশ্নের মাধ্যমেই প্রশ্নকর্তারা আপনার কাজের আগ্রহ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। যে কারণে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে দেবেন।
৬. অনলাইনে ইন্টারভিউ হলে যা করবেন
বর্তমান সময়ে অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়ার বিষয়টা স্বাভাবিক। যেকোনো নিয়োগ সংস্থা অনলাইনের মাধ্যমে ইন্টারভিউ এর আয়োজন করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি আগে থেকে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন চেক করে নেবেন। মোবাইল বা কম্পিউটার এর ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা দেখবেন। আপনি যে ঘরে ইন্টারভিউ দেবেন সেখানে পর্যাপ্ত আলো থাকা দরকার। যাতে নিয়োগকর্তারা আপনার মুখ ভালো করে দেখতে পারে। সেই সাথে আপনার আশেপাশে যেন কোলাহলমুক্ত অর্থাৎ চিৎকার চেচামেচি না হয় সেটার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
৭. ইন্টারভিউ দেওয়া অনুশীলন (প্র্যাকটিস) করুন
‘Practice Makes Perfect’ বলে একটি কথা আছে। যার মানে আমরা বলতে পারি অনুশীলন আমাদের নির্ভুল করে তোলে। তাই যদি আমরা যে কোনো চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিই তাহলে সেই প্রস্তুতিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার আগাম প্রস্তুতিও থাকা আবশ্যক। এজন্য আমরা মক ইন্টারভিউ তে অংশগ্রহণ করতে পারি। তাছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অথবা পরিবারের লোকজনর সাথে ইন্টারভিউয়ের অনুশীলন করতে পারি।
চাকরির ইন্টারভিউতে করা কিছু কমন প্রশ্ন
প্রশ্ন ১. আপনার পরিচয় দিন।
প্রশ্ন ২. আপনি কেন কাজটির সঙ্গে যুক্ত হতে চান?
প্রশ্ন ৩. আপনার দুর্বলতা কি?
প্রশ্ন ৪. কাজটি সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
প্রশ্ন ৫. আপনাকে আমরা কাজটি কেন দেবো?
প্রশ্ন ৬. এই কাজ সম্পর্কে আপনার কী আগের কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
এই প্রশ্নগুলি ছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন ইন্টারভিউয়ের টেবিলে করা হয়ে থাকে। এমন অনেক প্রশ্ন থাকে যেগুলো আপনার উপস্থিত বুদ্ধি বিচার করার জন্য করা হয়। আর এই সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য আপনার ইন্টারভিউ এর অনুশীলন করা অবশ্যই প্রয়োজন।
আজকে আমরা জানলাম চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে কিভাবে গড়ে তোলা উচিত। আশা করি আজকের এই বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। উপরের আলোচিত বিষয় গুলি যদি আপনি নিজের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করতে পারেন তাহলে যেকোনো চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আপনার মনোবল অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।
Collected From Kajkarmo