মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি
11/08/2024
255 Views
ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা একজন চাকরিপ্রার্থীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর মধ্যে একটি। সরকারি বা বেসরকারি, ছোট-বড় যেকোনো জবের জন্য ভাইভার কয়েক মিনিটের সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী তার পছন্দের চাকরি আদৌ পাবে কিনা এটা নির্ভর করে ভাইভার এই সময়টাতেই। কিন্তু ছোট ছোট কিছু ভুল বা কিছু বিষয়ের সচেতনতার অভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে আপনার স্বপ্নের চাকরিটি। কি কি বিষয় মাথায় রেখে নিয়ে নিতে পারেন ভাইভা প্রস্তুতি, সে সম্পর্কে জানাচ্ছেন পূবালী ব্যাংকের ডেপুটি জুনিয়র অফিসার- জান্নাতুল ফেরদৌস নাসরিন
১. সময়ের প্রতি সচেতনতা: ভাইভার প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলোÑ সময়ের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব। আপনি কর্মজীবনে কতটা সময়ানুবর্তী হতে পারেন, তা পরীক্ষককে বুঝিয়ে দিতে পারেন আপনার সঙ্গে তাদের প্রথম সাক্ষাৎকারের সময়েই। কিন্তু আপনি যদি ভাইভার সময় দেরি করে পৌঁছান, শুরুতেই আপনার প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, যা একজন প্রার্থীর জন্য মোটেও সুখকর অনুভূতি নয়। তাই অবশ্যই আপনার ভাইভার কেন্দ্রস্থল দেখে, আপনার ঠিকানা অনুযায়ী কোন রুটে ও কিভাবে সেখানে যেতে হবে, তা আগে থেকেই জেনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ভাইভা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন- এই বিষয়টা মাথায় রেখে বাসা থেকে রওনা দেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
২. নিজেকে উপস্থাপন: কথায় বলে ‘First impression is the best impression’ মৌখিক পরীক্ষায় অবশ্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটা জরুরি। স্মার্টনেস এবং রুচিশীলতা বজায় রেখে ভাইভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে বাকি প্রতিযোগীদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে নিতে পারবেন। যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন এবং মৌখিক পরীক্ষার কল পেয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই ড্রেস যাচাই করে ধারণ করা উচিত। মাল্টিন্যাশনাল/করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মফস্বল কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের পোশাক নির্বাচন ভিন্ন হতে পারে।
তবে পোশাকের ধরন যেমনই হোক, খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ বা রংচটা না হওয়াই শ্রেয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করাটা নিজের আত্মবিশ্বাসকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. নিজের সম্পর্কে জানা: ‘আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন’- ভাইভা বোর্ডের অন্যতম কমন একটি প্রশ্ন। এই একটি প্রশ্নের মাধ্যমে বোর্ডে উপস্থিত থাকা সকলে একসঙ্গে আপনার সম্পর্কে অনেকটা ধারণা নিতে পারেন। আর একজন পরীক্ষার্থী হিসেবে আপনার সম্পর্কে বোর্ড কর্মকর্তাদের ধারণা দেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এটি। তবে এই প্রশ্নটির উত্তর অনেকে গুছিয়ে দিতে পারেন না বিধায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিজের সম্পর্কে বলা মানেই আপনার পারিবারিক ইতিহাস বা ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠা নয়, বা এই প্রশ্নটির উত্তর অনেক বেশি লম্বাও হওয়া উচিত নয়।
২/৩ মিনিটের মধ্যে নিজের বিগত কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা একদমই নতুন চাকরি প্রার্থী হলে ¯œাতকোত্তর বিষয় এবং নিজের দুই বা তিনটা ব্যক্তিগত দক্ষতা সম্পর্কে বলে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডায়েরিতে নিজের বিষয়ে একটু গুছিয়ে একটা ছোট প্যারাগ্রাফ লিখে দেখতে পারেন বাংলায় এবং ইংলিশ দুইভাবেই। যাদের কথা বলায় জড়তা আছে, তারা বাসায় একা প্র্যাক্টিস করতে পারেন ভাইভা দিতে যাওয়ার আগেই।
৪. প্রতিষ্ঠান এবং কাজ সম্পর্কে ধারণা: ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার আগে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে, কোন পদের জন্য আবেদন করেছেন, সেই পদের মূল কাজ কি কি- এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই ভালোভাবে ধারণা নিয়ে যেতে হবে। এই জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই ইন্টার্ভিউয়ার বুঝতে পারবেন আপনি এই কাজটির জন্য কতটা আগ্রহী এবং মনোযোগী। এছাড়াও এই গবেষণামূলক মনোভাব আপনাকে অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। যেমন- আপনি যদি সেলস বা মার্কেটিং সংক্রান্ত কোনো পদে আবেদন করেন, তাহলে সেই পদের কাজের সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে বোর্ড কর্মকর্তাদের মনোভাব পড়ে নিতে পারবেন এবং তাদের চাহিদা সম্পর্কেও বুঝে সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন।
৫. আত্মবিশ্বাসী এবং ইতিবাচক মনোভাব: ভাইভা বোর্ডে অবশ্যই নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। একজন আত্মবিশ্বাসী প্রার্থী ইন্টার্ভিউয়ারদের পছন্দের তালিকায় থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। ভাইভাতে কি জিজ্ঞেস করা হবে, চাকরি হবে কি হবে না, বেতন কেমন হবে, নিজের দুর্বলতা ইত্যাদি ভেবে বিষণœ মুখে ভাইভাতে অংশগ্রহণ করা আপনাকে বাকিদের চেয়ে পিছিয়ে রাখবে অনেকটাই।
ভাইভাতে অবশ্যই প্রত্যেকটা মুহূর্ত হাসিমুখে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকতে হবে। বেতন-ভাতাদি, কাজের লোকেশন, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বাকবিত-ায় জড়ানো যাবে না একদমই। অপরপক্ষ থেকে আপনাকে যেমন প্রশ্নই করা হোক না কেন, ঠান্ডা মাথায় বিচক্ষণতার সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
Collected From Daily Janakantha