ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতা : বর্তমান যুগটা ইন্টারনেটের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। সকালের ঘুম থেকে উঠেই আমরা ইন্টারনেটে ঝুঁকে পড়ি যে অবধি আবার রাতে না ঘুমিয়ে পড়ি। অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটে ভর করে নিমিষেই সমাধান করছে সকল কাজ। করোনার এই সময়ে যখন অফিসে যাওয়ার কোনো উপায় নেই, যখন রাস্তা-ঘাটে গণপরিবহন নেই, যখন বাহিরে করোনা-আতঙ্ক, তখনো বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ঘরে বসে শুরু হয়ে গেছে অনলাইনে অফিস কার্যক্রম। কেউ ঘরে বসে নিজের ল্যাপটপ ওপেন করে কলিগদের ই-মেইল পাঠাচ্ছে, বিদেশে বায়ারদের কাজের ইনভাইট দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে কনভার্সন করছে, গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষকরা লেকচার সীট, ভিডিও ক্লিপস শিক্ষার্থীদের সাপ্লাই দিচ্ছে, গুগল মিটের মাধ্যমে চলছে ভার্চুয়াল মিটিং, চলছে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা। সত্যি বলতে, অনেকেই করোনার আগে এসব বিষয়ের সাথে মোটেও পরিচিত ছিল না, ব্যবহারে দক্ষ ছিল না একদম। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদেই হোক, আর ব্যবহার করতে করতে হোক ইন্টারনেট ব্যবহারের এইসব বহুমুখি দক্ষতা আপনাকে করোনা-পরবর্তীতে চাকরিতে বিরাট সফলতার মুখ দেখাতে পারে। কেননা, শুধু আপনি আইটি ইঞ্জিনিয়ার না হয়েও দক্ষতার সাথে অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামলিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন, তো আপনার কি কোনোই ভ্যালু নেই? যারা করোনাকালে ইন্টারনেট ব্যবহারে সুদক্ষ হয়েছেন, তাদের জন্য সুদিন সামনে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
ভার্চুয়াল কমিউনিকেশনে দক্ষতা : আমরা প্রতিনিয়ত অফিস-আলাতে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছি, ফিজিক্যালি কমিউনিকেশন করছি। এইসব কমিউনিকেশনে ভার্চুয়াল মিডিয়ার তথা ইন্টারনেট তেমন একটা প্রভাব ফেলছে না। কোনো কিছুর দরকার হলে ডেস্কে ডাকছি, কিংবা পিয়নকে দিয়ে ফাইল পাঠাচ্ছি, কাউকে আসতে বলতে এক মিনিট কল করছি, কিংবা টেক্সট করছি। এতেই আমাদের প্রতিদিনের কাজ অনায়াসে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু করোনা-মহামারীতে আমরা যখন ঘরে বসে ইন্টারনেট ইউজ করে অফিস করছি, আদালত সামলাচ্ছি কিংবা অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি, তখন আমাদের জন্য ভার্চুয়াল কমিউনিকেশন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আমরা এলোমেলোভাবে কথা বলতে পারছি না, ভাষাগত শুদ্ধতা আনতে হচ্ছে, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলতে হচ্ছে এবং মুখের জড়তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সামনে বাস্তব মানুষ নেই, তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেকচার দিয়ে যেতে হচ্ছে। আচ্ছা বলুন তো, এইসব ভার্চুয়াল কমিউনিকেশনের ভ্যালু কি সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে? আপনার বস বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এগুলো নোট করছে কি না? অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এবং প্রমাণিত হচ্ছে ফ্লিডের পাশাপাশি আপনি ভার্চুয়াল কমিউনিকেশনে কত দক্ষ হয়ে উঠেছেন যা করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজারে আপনাকে পদোন্নতি ঘটাতে পারে, বাড়াতে পারে বেতন-স্কেল। অতএব, করোনাকালে ঘরে বসে কাটানো সময়টুকু কোনো মতেই বিফলে যাচ্ছে না। বরং আপনার জন্য সম্ভাবনার দুয়ার হয়ে আসছে। তাই আপনাকে ভার্চুয়াল কমিউনিকেশনে জোরদার হতে হবে, অলসতা ত্যাগ করে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
নেতৃত্বদানের দক্ষতা : একবার ভেবে দেখুন, চলমান জাহাজ সাগরের মাঝখানে থেমে গেলে কী বিপদ হতে পারে? কেউ কি বেঁচে ফিরতে পারবে? ঠিক তখন যদি আপনি নেতৃত্ব দিয়ে একটি বিকল্প পথ বা উপায় খুঁজে বের করে ফেলেন, সেটি কত বড় ইতিবাচক হবে তা হয়তো আপনার জানা নেই। করোনা ভাইরাসের করোলগ্রাসে বন্ধ হতে বসেছে অসংখ্য মিল-কারখানা, গামেন্টস-ফ্যাক্টরি। কেউ ভেবে পাচ্ছে না, বিকল্প কীভাবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সচল রাখা যায়, কীভাবে শ্রমিক ছাঁটাই না করে তাদের সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়া যায়, কীভাবে লকডাউনের মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মক্ষম রাখা যায় প্রতিষ্ঠান, এইসব আইডিয়া শেয়ারের মাধ্যমে আপনি যদি নেতৃত্বদানের দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তা আপনাকে করোনা-পরবর্তীতে তো বটেই করোনাকালেই চ‚ড়ান্ত সফলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন হয়তো, এটাই সত্য হবে যে করোনা কারো জন্য বিপদ আর কারো জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। শুধু করোনার বিপর্যয় নয়, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাশ না হয়ে বুদ্ধি খাঁটিয়ে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারলে, তার মূল্যায়ন হবেই হবে।
পৃথিবীতে যে কোনো দুর্যোগ আসা মানেই মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করে তোলে। মৃত্যুচিন্তা মানুষকে সামনের পথে হাঁটতে বাঁধা দেয়। করোনা ভাইরাসে আপনি বাঁচবেন কিনা মরবেন, সে বিষয়ে মোটেও নিশ্চিত নয়। তবে আগেই কেন মেধাকে অবলুপ্ত করবেন? এজন্য পরিস্থিতি বুঝে মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। আবেগময় বুদ্ধিমত্তা আপনাকে অন্যের আবেগকে আরো ভালোভাবে বুঝতে এবং তার আবেগকে ভালোভাবে প্রকাশ করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। সকল সেরা নেতার এই গুণ রয়েছে। তারা সহানুভ‚তিশীল এবং কোনো কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য সহজেই অনুমান করতে পারে। আমরা আজ যে সময়টিতে আছি, আবেগময় বুদ্ধিসম্পন্ন হতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে চাকরিক্ষেত্রে। তাৎক্ষণিক বৃদ্ধিবিবেচনা সম্পন্ন মানুষের কদর বেশি সবক্ষেত্রে। কেননা, সময় কম সবার হাতে। আপনার একটি সিদ্ধান্ত কর্মের গতিপথ পাল্টাতে পারে। এই দুর্যোগেও বিজ্ঞানীরা বসে নেই। তারা গবেষণা করছে, কীভাবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায়। তারা যদি সফল হতে পারে, তবে তারা কি পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্মাননা বা স্বীকৃতি পাবেন না? ঠিক কর্মক্ষেত্রে আপনার ক্ষেত্রেও একই ফমূর্লা কাজ করবে।
করোনার এই সময়ে আপনার যারা ভাবছেন, উপরের বিষয়গুলো আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে না, তবে আপনারাও বিকল্প হিসেবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকুন। যেমন, অনলাইন কোর্স করতে পারেন। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে বাড়তি সময়টাকে নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়াতে কাজে লাগাতে পারেন। ইংরেজি ভাষার চর্চায় মনোযোগ বাড়াতে পারেন, আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র সিভি তৈরি করতে পারেন, চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিতে পারেন, আপনি যেসব আইডিয়া জানেন, তা দিয়ে চমৎকার প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারেন ইত্যাদি। সব মিলিয়ে সময়টাকে অলসভাবে পাড় না করে নিজের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে, দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি ভালো হলে আপনি পেতে পারেন মানসম্মত চাকরি, পেতে পারেন পদোন্নতি, হারানো চাকরি আবারো ফিরে পেতে পারেন। মনে রাখবেন, একজন দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ কখনোই বেকার থাকে না। হয় সে চাকরি করে, নয় সে উদ্যোক্তা হয়। অতএব, সময় এখন আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণের, নিজেকে তৈরি করার। দেখবেন করোনা-পরবর্তী চাকরিক্ষেত্র আপনাদের অনুকূলে।